শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

ঈদুল আজহা ঢাকায় গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ১২শ' টাকা

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০
ঈদুল আজহা ঢাকায় গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ১২শ' টাকা

প্রথমবারের মতো দেশে প্রতি পিস কোরবানির গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যে গরুর দাম ১ লাখ টাকার মধ্যে বা যে চামড়ার সাইজ ২০ ফুটের মধ্যে, ঢাকায় তার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার টাকা।

প্রতি পিস চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণের পাশাপাশি বর্গফুট হিসাবেও দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার ঢাকার মধ্যে কোরবানির গরুর চামড়ার মূল্য ধরা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এতে গতবারের চেয়ে এবার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম বাড়ল ৫ টাকা।

সোমবার সচিবালয়ে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠক শেষে চামড়ার নতুন মূল্য ঘোষণা করা হয়।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর উপস্থিতিতে নতুন মূল্য ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন।

প্রতি পিস চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করার বিষয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রান্তিক, বিশেষ করে মফস্বল গ্রামে যারা কোরবানি দেন তারা চামড়ার দাম সম্পর্কে তেমন ভালো জানেন না। যারা ঢাকা, ঢাকার আশপাশে তাদের নলেজটা অনেক বেশি থাকে।

তিনি বলেন, অনেকে স্কয়ার ফুট বোঝে না। ছোট যে গরু কোরবানি হয়, আমি উনাদের জিজ্ঞাসা করেছি ওনারা বলেছেন অনুমানিক ১৮ থেকে ২০ স্কয়ার ফুট চামড়া হয়। এবার আমরা প্রতি বর্গফুটের পাশাপাশি লবণযুক্ত ছোট প্রতি পিস চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করতে বলেছি।

এরপর বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন জানান,

এবারের ঈদে দাম ১ লাখ টাকার মধ্যে থাকা ছোট গরুর চামড়া ঢাকায় ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে ঢাকার মধ্যে কোরবানি গরুর চামড়ার মূল্য ধরা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

অন্যদিকে খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত বছর ঢাকার মধ্যে কোরবানির গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।

আর খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা।

চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হলেও সিন্ডিকেটের জন্য সে দামে চামড়া কেনাবেচা হয় না। সে বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেবেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিষয়টি সব সময় মনিটরিংয়ে রাখবে। এছাড়া বিভিন্ন এজেন্সির লোক এখানে কাজ করে। এটার ওপর সরকারের ভাবমূর্তি নির্ভর করে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আজ যে মূল্য বা দাম নির্ধারণ করা হলো সেটার নিচে যেন বাংলাদেশের কোথাও চামড়া বিক্রি না হয়। সে বিষয়টি আমরা নজরে রাখব।

তিনি বলেন, কোরবানি হলো একটি ত্যাগ। এটা কোনো ব্যবসা না। আমি মনে করি যে দামটা নির্ধারণ করা হলো, ঢাকায় সর্বনিম্ন একটি গরুর চামড়া ১২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার টাকা, সেটি সাহসী পদক্ষেপ। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাম দেখেছি। এবার আর বর্গফুট মাপার কোনো ঝামেলা থাকছে না। এবার একটি ফ্রেশ গরুর চামড়া নূ্যনতম ১২০০ টাকা।

এ বছর লবণের উৎপাদন ভালো হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এ বছর লবণের উৎপাদন খুব বা অত্যন্ত ভালো হয়েছে। এছাড়া ট্যানারি ও চামড়া ব্যবসায়ীসহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যেয়ে ক্ষুৎবা দেওয়ার ব্যবস্থা করব। আমাদের বিপিসি আছে, তাদের মাধ্যমে মাদরাসার যে ছাত্ররা কোরবানি দেয়, তাদের পশু কোরবানি থেকে চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণ পর্যন্ত আমাদের একটি প্রশিক্ষণ চলছে এবং চলতে থাকবে।

এ বছর চামড়া কেনাবেচা মসজিদ-মাদরাসাভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়ে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, যাতে লবণ দিয়ে সহজে চামড়াটা সংরক্ষণ করতে পারি, যেহেতু এটি একটি ত্যাগের জিনিস, সবার মন-মানসিকতা যদি একই রকম থাকে তাহলে আমার মনে হয়, চামড়া নিয়ে এ বছর কোনো বিতর্ক হবে না। সবাই ধর্মীয় চিন্তাভাবনা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ব্যবসায়িক দিক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমরা মনে করেছি চামড়া সরকারের সম্পদ, সেটা সংরক্ষণ করা দরকার।

ব্যাংক লোন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেন, ব্যাংক ঋণের বিষয় মূলত ব্যাংক এবং গ্রাহকের সমোঝতার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। ব্যাংক যাকে যোগ্য মনে করবে সে গ্রাহক ঋণ পাবে। তবে আমরা গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে একটি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে থাকি যে, কোরবানি ঈদে তারা কত টাকা ঋণ বিতরণ করতে পারবে, প্রস্তুতি কতটা আছে। কয়েকটি ব্যাংক বলেছে তারা প্রস্তুতি নিয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক বলেছে যদি ভালো গ্রাহক পায় তাহলে তারা ঋণ দেবে। মোটামুটি ২০২৪ সালে ২৭৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে