শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

ভারী বৃষ্টিতে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা

যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০
পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো তলিয়ে গেছে। ছবিটি সোমবার সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকা থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা

কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে ফের জলমগ্ন হয়ে পড়েছে সিলেট নগরীর বেশ কিছু এলাকা। সড়ক উপচে পানি ঢুকে পড়েছে মানুষের বাসাবাড়ি-দোকানপাটে; এমনকি হাসপাতালেও। ফলে বন্যা পরিস্থতি অবনতির শঙ্কা রয়েছে।

রোববার রাত ১টার দিকে ভারী বৃষ্টি শুরু হলে নগরীর বাসিন্দাদের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করে। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হয়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা কমে আসে।

সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন জানান, ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২২৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৮ মিলিমিটার।

গত দুদিন

\হধরে সিলেটে ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পরিমাণ কম হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির খবর আসে। তবে এর মধ্যে আবার ভারী বৃষ্টি হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সোমবার সকালে নগরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, নগরীর তালতলা, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দাঁড়িয়াপাড়া, বেতেরবাজার, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, পাটানটুলা, ছালিবন্দর, বাগবাড়ি, যতরপুর, কাজিরবাজার, শেখঘাট, কলাপাড়া, পীরমহলস্না, মাছিমপুর, ছড়ারপার, ইলাশকান্দি, উপশহর ও বাদামবাগিচাসহ নগরীর অন্তত একশ এলাকার বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে।

সকাল থেকে সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উপশহরের কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে।

নগরীর যতরপুর এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'গত কয়েকদিন ধরেই রাস্তাঘাটে পানি ছিল; কিন্তু রোববার রাতের বৃষ্টির পর এখন বাসার ভেতরেও পানি ঢুকে পড়েছে। রাত থেকেই বাচ্চাদের নিয়ে কষ্ট করছি। পানি কমার লক্ষণ নেই; কেবল বেড়েই চলছে। তার ওপর বৃষ্টিপাত তো আছেই।'

কলাপাড়ার এক বাসিন্দা জানান, তাদের বাসার উঠানে পানি চলে এসেছে; বাসার ভেতরেও প্রবেশ করবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

এছাড়াও তালতলা পয়েন্ট, ছাড়ারপার এলাকার বাসাবাড়িতে হাঁটু পানি রয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা তাকে জানিয়েছেন, রাত থেকেই বাসাবাড়িতে পানি ঢুকছে।

বাসদ সিলেট জেলার সদস্য সচিব ও নগরীর বাসিন্দা প্রণব জ্যোতি পাল বলছেন, 'বৃষ্টি হলেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েন। বারবার দাবি তোলার পরও সুরমা নদীর খনন কাজ হয়নি। সংস্কার হয়নি অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাও।'

নগরীর বিভিন্ন বাসাবাড়ির পাশাপাশি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও পানি ঢুকেছে। এতে রোগীদের নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে সব জায়গায় পানি ঢুকেছে। এজন্য চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে পানি প্রবেশ করায় মেঝেতে থাকা রোগীদের নিয়ে সমস্যা পড়েছি; এখন এক বেডে দুইজন করে রোগী রাখতে হচ্ছে।'

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর সাংবাদিকদের বলেন, মধ্যরাত থেকে ভারী বৃষ্টি হয়। এর মধ্যে বন্যার কারণে সুরমা নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নগরের পানি ছড়া-খাল দিয়ে নদীতে গিয়ে মিশতে পারছে না। কোথাও কোথাও বরং নদীর পানি ছড়া দিয়ে নগরে ঢুকেছে।'

তিনি বলেন, 'বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে গেছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী আশ্রয়কেন্দ্র চালু, শুকনো খাবার বিতরণসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে