মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত

ঈদের ছুটির পর ৯-৫টায় ফিরছে সরকারি অফিস

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সরকারি, আধাসরকারি স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মঘণ্টা আগের নিয়মে ফিরিয়ে আনছে সরকার। কোরবানির ঈদের ছুটির পর থেকে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সরকারি অফিস চলবে। বর্তমানে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অফিস কার্যক্রম চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য অফিসসূচি নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন আইনের খসড়া, জাতীয় জীবনিরাপত্তা নীতি-২০২৪-এর খসড়াসহ আরও কয়েকটি বিষয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভা শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, 'এতদিন ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অফিস ছিল। কোরবানির ঈদের ছুটির পর থেকে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অফিস চলবে। দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত নামাজ ও মধ্যাহ্নভোজের বিরতি থাকবে। শুক্র-শনিবার থাকবে সাপ্তাহিক ছুটি।' আগে সরকারি কর্মীরা সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস করতেন। জ্বালানি সংকটের মধ্যে বিদু্যৎ সাশ্রয় করতে ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট থেকে কর্মঘণ্টা কমিয়ে অফিস ও ব্যাংকের সময়সূচি বদলে দেয় সরকার। সে অনুযায়ী দুই মাসের বেশি সময় সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলে। ওই বছরের ২২ অগাস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- অফিসের সূচি বদলের পাশাপাশি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সপ্তাহে দুদিন বন্ধ রাখবে সরকার। তখন থেকেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকসহ সব শিক্ষালয়ে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার বহাল রয়েছে। তখন যেসব স্কুলে বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস ক্লাস হতো, তার বদলে নতুন সূচিতে পূর্ণদিবস ক্লাস করে দেওয়া হয়। ব্যাংকের ক্ষেত্রেও তখন নতুন সূচিতে লেনদেন হয়। ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, নতুন সূচিতে ব্যাংকের লেনদেন করা যাবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। তখনকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সেই সময়সূচির দুটি সুবিধার কথা তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, 'একটা হল বিদু্যতের সাশ্রয় হবে, আর ট্রাফিক জ্যামটাও একটু ডিস্ট্রিবিউটেড হয়ে যাবে। সরকারি অফিসগুলোতে বিদু্যৎ সাশ্রয়ে কোথাও কোনো পর্দা টাঙানো থাকবে না। লাইট যথাসম্ভব কম লাগিয়ে কাজ করতে হবে। এয়ার কুলারও যথাসম্ভব কম ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।' ওই সময় রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। তার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের বিদু্যৎ উৎপাদনেও। ফলে দেশজুড়ে দেখা দেয় তীব্র লোডশেডিং। জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে বেড়ে গিয়েছিল ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এজন্য অফিসের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, এসি ব্যবহারে সংযমী হওয়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে সুপারিশ করেছিল বিদু্যৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সব বিদু্যৎ বিতরণ সংস্থার প্রধান এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছিলেন, জ্বালানির দাম বাড়ায় ভর্তুকির যে চাপ তৈরি হয়েছে, তাতে 'একমাত্র বিদু্যৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার মাধ্যমেই' পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করা সম্ভব বলে তারা মনে করছেন। ওই বৈঠক থেকেই সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস-আদালতে কিংবা বাসায় এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রাখা, আলোকসজ্জা না করা, বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করা, বাজার, মসজিদ, শপিংমলে বিদু্যতের ব্যবহার কমিয়ে আনা, যে কোনো রাতের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করার সুপারিশ করা হয়। বিদু্যৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ওই সুপারিশ করার দেড় মাস পর অফিস ও ব্যাংকের কাজের সূচি বদলের সরকারি ঘোষণা এসেছিল। এরপর ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলছিল। সোমবার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে সরকারি অফিসের নতুন সময়সূচি নিয়ে কথা বলেন। তখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন- অফিসের সময়সূচিতে কেন পরিবর্তন আনা হয়েছে? মাহবুব হোসেন বলেন, 'এটাই তো স্বাভাবিক। ৯টা থেকে ৫টা আট ঘণ্টা কাজ করব আমরা। সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করব আমরা, আগে আমরা ৩৫ ঘণ্টা কাজ করতাম। সেটা একটা বিশেষ ব্যবস্থা ছিল, আমরা আবার মূল অবস্থানে চলে এলাম। এটি ঈদুল আজহার ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবস থেকে কার্যকর হবে।' বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন: এদিকে 'বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন আইন, ২০১৪'-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, 'আইনের খসড়াটি ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই মেয়াদে সংসদের শেষ অধিবেশনে তারা সেটি উপস্থাপন করতে পারেননি। সে কারণে মন্ত্রণালয় থেকে আজকে (সোমবার) আবার উপস্থাপন করা হয়েছিল। আগে যা ছিল সেটিই উপস্থাপন করা হয়েছিল। মন্ত্রিসভা সেটি আবার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।' জাতীয় জীবনিরাপত্তা নীতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন: অন্যদিকে জাতীয় জীবনিরাপত্তা নীতির খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, 'জাতীয় জীবনিরাপত্তা নীতি ২০২৪'-এর খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। এটির উদ্যোক্তা মন্ত্রণালয় ছিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। আমাদের একটি আইন আছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এবং এর আওতায় বাংলাদেশ জীবনিরাপত্তা বিধিমালা রয়েছে। কিন্তু একটি নীতিমালা না থাকায় বিভিন্ন ফোরামে আমাদের বলা হচ্ছিল নীতিমালার করার জন্য। এখন সেই নীতিমালা করা হয়েছে।' জাতীয় জীবনিরাপত্তা নীতির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'এখন অনেক রিসার্চ হচ্ছে। রিসার্চ যেন নিরাপদ হয়, যাতে রেগুলেট করতে পারি সেজন্য এটি করা হয়েছে। কোনো একটি ভ্যারাইটি সরাসরি বাজারে আসতে পারবে না। সরকারের অনুমোদন লাগবে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক কিনা সেটি আগে ভ্যারিফাইড হবে, পরিবেশ মন্ত্রণালয় এটি করবে।' নেদারল্যান্ডস ও মরিশাসের সঙ্গে দ্বৈত কর পরিহারে চুক্তি অনুসমর্থন: এ ছাড়া নেদারল্যান্ডস ও মরিশাসের সঙ্গে দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে হওয়া চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যাতে দ্বৈত কর পরিহার করা হয়, সেজন্য আমাদের চুক্তি স্বাক্ষর করতে হয়। এটি স্বাক্ষরের পর সেটি অনুসমর্থন করতে হয়। এটি গত ২৮ ফেব্রম্নয়ারি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। গত ১২ মার্চ স্বাক্ষর করা হয়েছিল, আজকে (সোমবার) অনুসমর্থন করা হলো। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোজ সংক্রান্ত সংশোধিত প্রোটকল অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'এটিও একই রকম'।