শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

বেনাপোল-মোংলা রেলপথ নতুন দিগন্তের শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর ও বেনাপোল প্রতিনিধি
  ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০
বেনাপোল-মোংলা রেলপথ নতুন দিগন্তের শুরু

স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে সমুদ্রবন্দর মোংলা রুটে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো ট্রেন চলাচল। উদ্বোধনের প্রায় সাত মাস পর মোংলা কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় দেশের দুটি বৃহত্তর বন্দরের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপিত হলো। এর মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক উন্মোচিত হলো।

শনিবার সকাল ১০টার দিকে বেনাপোল স্টেশন থেকে প্রায় ৬শ' যাত্রী নিয়ে মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। বেলা ১১টায় যশোর জংশনে এসে পৌঁছায় ট্রেনটি। যাত্রাবিরতি শেষে ফের রওনা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, সপ্তাহের প্রতিদিন একটি ট্রেন চলবে এই রুটে। ভাড়া সর্বনিম্ন্ন ২০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে আরও ট্রেন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বেনাপোল থেকে মোংলা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় খুশি এই অঞ্চলের মানুষ।

জানা যায়, যশোরের স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে বাগেরহাটের সমুদ্রবন্দর মোংলা পর্যন্ত ১৩৮ কিলোমিটার রুটে মোট ৮টি স্টেশনে দাঁড়াবে মোংলা কমিউটার ট্রেনটি। খুলনার ফুলতলা পর্যন্ত এর সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, এরপর ফুলতলা থেকে মোংলা নতুন রেলপথে এ ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার।

বেনাপোল থেকে ট্রেন ছাড়ার পর নাভারণ, ঝিকরগাছা, যশোর জংশন, রূপদিয়া, সিঙ্গিয়া, চেঙ্গুটিয়া, নওয়াপাড়া, বেজেরডাঙ্গা, ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালি, চুলকাটি বাজার, ভাগা ও দিগরাজ স্টেশনে যাত্রাবিরতির

পর মোংলায় পৌঁছাবে। ট্রেনটি মোংলায় পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। এরপর মোংলা থেকে ট্রেনটি ছাড়বে দুপুর ১টায় এবং বেনাপোলে পৌঁছাবে বিকাল সাড়ে ৪টায়। সপ্তাহের প্রতিদিন রুটে একই সময়ে ট্রেন চলাচল করবে। তবে প্রথম দিনেই ৪৫ মিনিট দেরিতে বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ছেড়েছে।

নতুন রুটে ট্রেন চালানোর অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে কমিউটার ট্রেনের লোকোমাস্টার (চালক) আজগর আলী জানান, চাকরি জীবনে এই প্রথম কোনো নতুন রুটে ট্রেন পরিচালনা করছি, এ এক অন্যরকম অনুভূতি। খুবই আনন্দ হচ্ছে আর উৎফুলস্ন লাগছে। নতুন রুটে প্রথম দিন যাত্রী নিয়ে যাচ্ছি। আমার চাকরি জীবনে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকলাম। সকালে ট্রেনটি খুলনা থেকে পরিচালনা করে বেনাপোলে এসেছি। বেনাপোল থেকে মোংলা পর্যন্ত যাব, সেখান থেকে আবার বেনাপোলে ফিরব।

ট্রেনযাত্রী উজ্জ্বল পাল বলেন, বেনাপোল ও মোংলা সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষ অনেক সুফল ভোগ করবে। দুই বন্দরকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। স্বল্প খরচে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। আপাতত একটি ট্রেন চালু হয়েছে। আমাদের দাবি থাকবে এই রুটে আরও ট্রেন বাড়ানো হোক।

ট্রেনযাত্রী মোবারক হোসেন বলেন, 'আমরা ৫ বন্ধু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এই রুটে যেদিন ট্রেন চলবে, আমরা মোংলায় ঘুরতে যাব। আজ ট্রেন চলাচল শুরু হলো। আমরা ঘুরতে যাচ্ছি। গণপরিবহণ হিসেবে সাশ্রয়ী ভাড়ায় এই অঞ্চলের মানুষ মোংলা-বেনাপোল রুটে চলাচল করতে পারবে। এতে আমরা সবাই খুশি।'

ট্রেনের যাত্রী আলতাফ হোসেন বলেন, 'আমি সকালে ভারত থেকে এসেছি। এখন মোংলার ট্রেনে উঠে কাটাখালী স্টেশনে নামব। এর আগে বাসে যাতায়াত করতাম। এতে খুলনা থেকে বাস পরিবর্তন করতে হতো। কিন্তু ট্রেন চালু হওয়াতে সময় কম লাগবে আর ভাড়াও কম।'

মোংলা বন্দর এলাকার ব্যবসায়ী মিনহাজ শেখ বলেন, 'আমি আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করি। ট্রেনে করে মোংলা থেকে বেনাপোলে যাতায়াত করতে পারব। তবে যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি যদি মালবাহী ট্রেনও চালু করা হয় তাহলে মালামাল বহনের জন্যও অনেক সুবিধা হবে। আমরা দ্রম্নত মালবাহী ট্রেন চালুর দাবি জানাচ্ছি।'

বেনাপোল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান জানান, প্রথম দিন বেনাপোল থেকে বিভিন্ন স্টেশনের ৫৪৯ জন যাত্রী নিয়ে মোংলা কমিউটার ট্রেন যাত্রা শুরু করে। এই ট্রেনে বেনাপোল থেকে মাত্র ৮৫ টাকা ভাড়া দিয়ে মোংলায় যাওয়া যাবে। যশোর স্টেশন থেকে এই ভাড়া ৬৫ টাকা। এই ট্রেনটি দু'টি বাণিজ্যিক বন্দরের যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

যশোর স্টেশনের মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, 'মোংলা কমিউটার ট্রেন চালু হয়েছে। এই যাত্রার মধ্যদিয়ে বেনাপোলের সঙ্গে মোংলার সরকারি সংযোগ স্থাপিত হলো। যাত্রী, মালামাল সবকিছুই এই ট্রেনে বহন করা যাবে। এখন একটি ট্রেন চালু হলো। তবে ভবিষ্যতে এই রুটে ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়বে। যখন একটি লাইন চালু হয়, দুই-একটি ট্রেন দিয়েই চালু হয়। তারপর দিন দিন ট্রেন বাড়বে। মানুষের সুযোগ সুবিধাও বাড়বে। এই রুটে চলাচলকারী প্রত্যেকেই উপকৃত হবেন।'

নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, 'বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার সঙ্গে দেশের রেলওয়ের বর্তমান নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপন এবং মোংলা বন্দরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশের রেলযোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করা, মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথে আরামদায়ক ভ্রমণের সুব্যবস্থা করা, রেলের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে খুলনা-মোংলা পোর্ট রেলপথ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে