এমপি আনার হত্যাকান্ড

লাশগুমে জড়িত সিয়াম নেপালে আটক, তদন্তে ডিবির প্রতিনিধি দল

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের সহকারী ও লাশ গুমে জড়িত সিয়াম নেপালে আটক হয়েছেন- এমন তথ্য পেয়ে এবং চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনা তদন্তে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল শনিবার সকালে নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে। ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ডিবির তিনজন ও এনসিবির একজনসহ মোট চারজন রয়েছে দলটিতে। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডিবিপ্রধান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, 'ডিবির হাতে গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য ক্রসচেক করা হবে। বাংলাদেশের অনেক সন্ত্রাসী কাঠমান্ডুকে ব্যবহার করছে। এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনও কাঠমান্ডুর মাটি ব্যবহার করে অন্য দেশে চলে গেছে। এমন আরও অন্য আসামিদের বিষয়েও তথ্য পাচ্ছি।' তিনি বলেন, 'আগেও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা নেপালে পালিয়ে থেকেছে। তদন্তের কাজেই আমরা নেপালের কাঠমান্ডু যাচ্ছি। নেপালের পুলিশের কাছে তদন্তে সহযোগিতা চাইব। ভবিষ্যতে কোনো আসামি বাংলাদেশে অপরাধ করে নেপালে যেন ঠাঁই না পায়, সে ব্যাপারেও দেশটির পুলিশের সঙ্গে কথা বলা হবে।' এর আগে গত ২৬ মে খুনের ঘটনা তদন্তে ঢাকা থেকে কলকাতায় যায় ডিবির তদন্ত দল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ৯ দাবি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকান্ড নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। শনিবার বেলা ১১টার দিকে কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ স্কুল মাঠে আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তারা ৯ দাবি তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়নে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। এ সময় জনপ্রতিনিধিদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাসেল ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহনাজ পারভীনসহ ১৫ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি মেম্বার এবং পৌর কাউন্সিলররা। লিখিত বক্তব্যে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এসএম জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু বলেন, 'ঝিনাইদহ-৪ নির্বাচনী এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এখানে একত্রিত হয়েছি, যখন সমগ্র কালীগঞ্জবাসী শোকে মুহ্যমান। কালীগঞ্জবাসীর নেতা সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত। এ রকম একটি সময় কথা বলার মতো ভাষা আমাদের নেই। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রশাসনের সব পর্যায়ে এমপি আনারের নিখোঁজ বা হত্যার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। প্রশাসন দ্রম্নতই পরিপূর্ণ তদন্তের মধ্য দিয়ে বিষয়টি উদ্ঘাটন করবেন। এরপরও আমরা প্রতিনিয়ত জনগণের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি, কিন্তু এর কোনো সদউত্তর আমাদের কাছে নেই। এমন পরিস্থিতিতে তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক বিচারের প্রত্যাশায় কিছু দাবি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।' 'এমপি আনার টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এর আগে পৌর কমিশনার ও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। এমন একজন জননেতার নিখোঁজ বা হত্যার শিকার হতে পারে, তা আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা এই সংবাদ সম্মেলন থেকে তার ব্যবহৃত পাসপোর্ট, ঘড়ি, আংটি, চশমাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র এবং কথিত রক্তমাখা পোশাক উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।' 'এমপির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলোর সর্বশেষ অবস্থান দফাওয়ারি তথ্য প্রকাশ করতে হবে। আনার এমপির হত্যাকান্ড নিয়ে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক মৃতু্যর তথ্য প্রচার করা হয়েছে, যা জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় হত্যাকান্ডের তদন্তপূর্বক সঠিক তথ্য প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। খুনি জিহাদ মুম্বাইতে কখন থেকে কার অধীনে কসাইগিরি করত, এর বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের দাবি করছি। খুনিরা হত্যাকান্ডে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, এর তথ্য এবং সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।' '২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মিথ্যা মামলা ছাড়া আনার এমপির বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা ছিল না, অথচ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। যা আমাদের জন্য অত্যান্ত দুঃখজনক ও বেদনার। জনপ্রিয় একজন এমপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার না করে সঠিক ও সত্য তথ্য প্রচারের দাবি জানাচ্ছি।' বিগত ১৭ বছরে আনার এমপির বিরুদ্ধে কথিত মাদক, হুন্ডি, সোনা চোরাচালানের কোনো মামলার প্রমাণ থেকে থাকলে এর তথ্য প্রকাশ করার দাবি করছি। এই হত্যাকান্ডকে সমর্থন জানিয়ে এবং সংসদ সদস্যের চরিত্র হননের উদ্দেশে সামাজিক প্রচার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অসংখ্য অ্যাকাউন্ট/আইডি থেকে প্রতিনিয়ত যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি। আনার এমপির ব্যবহৃত মোবাইল থেকে যারা বিভিন্ন জনের কাছে এসএমএস এবং কল দিয়েছে, তাদের পরিচয় উদ্ঘাটন করে প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।' এ সময় উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা জাতীয় সংসদ সদস্য মো. আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজ হয়ে থাকলে সন্ধান এবং হত্যা হয়ে থাকলে পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। খুনের ২০ দিন পর এখনো উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আনারের পরিহিত পোশাক বা শরীরের কোনো অংশ উদ্ধার না হওয়ায় আনুষ্ঠানিক দাফন-কাফন বা জানাজার দোয়া অনুষ্ঠান করতে পারেনি পরিবার ও তার কর্মী-সমর্থকরা।