শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

সিলেটে বন্যা :পানি কমছে উজানে, ডুবছে ভাটি

সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ওপরে বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা
সিলেট অফিস
  ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০
সুরমা নদীর পানি বেড়ে পস্নাবিত হয়েছে সিলেট শহরের নতুন নতুন এলাকা। নগরীর উপশহর, সুবহানিঘাট, যতরপুর, মেন্দিভাগ, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঢুকেছে পস্নাবনের পানি। তাতে বাসাবাড়ি-দোকানপাট ও রাস্তাঘাট ডুবছে। ফলে ভোগান্তি বেড়েছে নগরবাসীর। ছবিটি শনিবার তোলা -স্টার মেইল

ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এবং সিলেটে নতুন করে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কমেছে নদ-নদীর পানি। তবে জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে শুরু করায় সিলেট সিটি করপোরেশনসহ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল নতুন করে পস্নাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা আরও বেড়েছে। ভাটি অঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারার অন্তত ১৫টি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। ফলে নদী তীরবর্তী পরিবারগুলো এখনো আশ্রয়কেন্দ্র অবস্থান করছেন। এদিকে আবহাওয়া অফিস দেশের আট বিভাগেই বৃষ্টির আভাস দেওয়ায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার সকালে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমেছে। শুক্রবার জেলায় বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭০ আর শনিবার সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯ হাজার ৩৩ জনে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, 'ভারি বৃষ্টিপাত না হওয়াতে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জেলার সার্বিক পরিস্থিতির দিকে সর্তক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে শুকনো, রান্নাকরা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।'

গত কয়েক দিনের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হওয়াতে বন্যা পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাচ্ছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, 'সুরমা-কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্ট ছাড়া

জেলার অন্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদী সিলেট শহর পয়েন্টে বিদৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার এবং কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।'

শুক্রবার এই নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ও ছাতক পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯৪ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার এই নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০৭ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কুশিয়ারার পানি গতকালের তুলনায় শনিবার অনেকটা কমেছে।

সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন বলেন, '২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।'

জকিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসলিম বলেন, 'উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, আগের মতোই আছে। ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৩০ থেকে ১৫০ পরিবার রয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষজনকে রান্নাকরা খাবার দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যার্তদের প্রশাসনের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।'

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড, সিলেট সদর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন, জৈন্তাপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন, গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন, কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন, জকিগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন, বিয়ানীবাজার উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার দু'টি ইউনিয়ন বন্যায় পস্নাবিত হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ডসহ জেলার বন্যাকবলিত আটটি উপজেলার মোট ৬৮টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের ৭৮১টি গ্রাম বন্যায় পস্নাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় বন্যা আক্রান্ত জনসংখ্যা ৬ লাখ ৯ হাজার ৩৩ জন।

বন্যা দুর্গতদের জন্য পুরো জেলায় ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ৩৪২ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের কার্যক্রম এখনো অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়ন ভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

এদিকে উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে শুরু করায় সিলেট মহানগর, সদর, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল নতুন করে পস্নাবিত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের বার্তায় বলা হয়েছে।

এদিকে শনিবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে দেশের আট বিভাগেই বৃষ্টির আভাস দিয়ে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারা দেশে বিস্তার লাভ করছে মৌসুমি বায়ু। এটি দেশের সাত বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ু এখন কিছুটা দুর্বল, তাই সারা দেশে হালকা বৃষ্টির ধারণা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি গরমও কিন্তু থাকবে। তবে এক সপ্তাহ বা তারও কিছু সময় পর মৌসুমি বায়ু আরও সক্রিয় হলে বৃষ্টি বাড়বে। তখন গরম কিছুটা কমবে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আরও অগ্রসর হওয়ার জন্য পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে, সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে