শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

ভারতে কেন্দ্রফেরত জরিপে জয়ের পথে মোদির বিজেপি

যাযাদি ডেস্ক
  ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০
নরেন্দ্র মোদি

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের কেন্দ্রফেরত জরিপের ফলাফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ের পথে নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ; যারা ৩৫০টি আসন পেতে যাচ্ছে বলে আভাস মিলেছে।

৫৪৩ আসনের লোকসভা নির্বাচনের পর জরিপে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসসহ বিজেপিবিরোধী দলগুলোর জোট 'ইন্ডিয়া'। জোটটি ১৪২টি আসন পেতে পারে।

শনিবার ভোট শেষে চারটি সংস্থার কেন্দ্রফেরত জরিপ সমন্বয় করে ভোটের ফলাফলের এমন আভাস দিয়েছে এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।

নির্বাচনে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পেতে প্রয়োজন ২৭২ আসন; যেখানে ভোট দিয়ে আসা ভোটারদের জরিপভিত্তিক তথ্যে বিজেপির টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় থাকার ইঙ্গিত মিলছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি জোট পেয়েছিল ৩৫২ আসন।

প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে সাত ধাপে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোটগ্রহণ হয় শনিবার, যার শুরু হয়েছিল ১৯ এপ্রিল।

ভোটগ্রহণ শেষে বুথফেরত জরিপের দিকে নজর রেখেছে ১৪০ কোটি মানুষের দেশ ভারত।

আগামী মঙ্গলবার ভোট গণনা শেষে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করবে দেশটির নির্বাচন কমিশন।

জরিপের আভাস ঠিক থাকলে তৃতীয়বারের মতো সরকার গড়তে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। আর প্রকৃত চিত্র ভিন্ন হলে বিজেপির

\হরাজত্ব শেষে কারা আসছে ক্ষমতায় সেটিও দেখার বিষয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, কেন্দ্রফেরত জরিপের ফলাফল সঠিক নাও হতে পারে, কাছাকাছি যেতে পারে; আবার চূড়ান্ত ফলাফলের দিন তা উল্টেও যেতে পারে।

জরিপ সংস্থা 'ইন্ডিয়া নিউজ-ডি ডাইনামিক্স'-এর সম্ভাব্য ফলাফলে বিজেপিকে দেওয়া হয়েছে ৩৭১টি আসন, যেখানে কংগ্রেসের জন্য রাখা হয়েছে ১২৫টি। অন্য দলগুলো পেতে পারে ৪৭টি আসন।

'জন কি বাত'-এর কেন্দ্রফেরত জরিপে এনডিএ পেতে যাচ্ছে ৩৬২-৩৯২টি আসন, যেখানে ইন্ডিয়া পেতে পারে ১৪১-১৬১টি। অন্যদের জন্য রাখা হয়েছ ১০-২০টি আসন।

নিউজ ন্যাশনের জরিপে এনডিএকে এগিয়ে রাখা হয়েছে যেখানে জোটটি ৩৪২ থেকে ৩৭৮টি আসন পেতে পারে বলে অনুমান দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে ইন্ডিয়া পেতে যাচ্ছে ১৫৩ থেকে ১৬৯টি আসন এবং অন্যরা পেতে পারে ২১-২৩টি আসন।

আরেক জরিপ সংস্থা রিপাবলিক ভারত- মাট্রিজ আভাস দিয়েছে, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেতে যাচ্ছে ৩৫৩ থেকে ৩৬৮টি আসন, যেখানে ইন্ডিয়া পেতে পারে ১১৮ থেকে ১৩৮টি আসন। সংস্থাটি অন্যান্য দলের জন্য ৪৩ থেকে ৪৮টি আসন পাওয়ার আভাস দিচ্ছে।

ভারতের লোকসভায় ৫৪৩টি আসন, যেখানে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসনে জয়। চারটি সংস্থার কেন্দ্রফেরত জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি বিজয়রেখা স্পর্শ করার মতো যথেষ্ট আসন পেতে যাচ্ছে। আর জোটগতভাবে সে সংখ্যা আরও বড় হতে পারে।

তবে বিজেপি নেতারা যেভাবে '৪০০' আসন জেতার হুংকার দিয়েছিলেন, কোনো কেন্দ্রফেরত জরিপে সেটির প্রতিফলন ঘটেনি।

এনডিটিভি বলছে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বুথফেরত জরিপগুলোতে বিজেপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনার চিত্র ফুটে উঠেছিল। তবে চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, বিজেপি এককভাবে লোকসভার ২৮২টি আসনে জিতেছে। আর দলটির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সর্বমোট ৩৩৬টি আসন জিতে নেয়। অর্থাৎ সেবার বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতার আসার বিষয়ে পূর্বানুমান করতে ব্যর্থ হয় জরিপ সংস্থাগুলো।

ওই নির্বাচনের কেন্দ্রফেরত জরিপগুলোতে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের ঝুলিতে রাখা হয়েছিল ৯৭ থেকে ১১৫টি আসন। তবে চূড়ান্ত ফলাফলে তার প্রতিফলন হয়নি। দলটি এককভাবে মাত্র ৪৪টি আসন পায়, যেখানে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট মাত্র ৬০টি আসন দখল করে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের কেন্দ্রফেরত জরিপ অনুযায়ী বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের ঝুলিতে যাওয়ার কথা ছিল ৩০০-৩৬৫টি আসন। চূড়ান্ত ফলাফলে এ জোট ৩৫২টি আসন পায়, যেখানে বিজেপি এককভাবে পায় ৩০৩টি আসন।

পাঁচ বছর আগের ওই নির্বাচনে সর্বনিম্ন ৭৭টি থেকে সর্বাধিক ১২৪টি আসন কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট পেতে পারে বলে আভাস মিলেছিল। শেষপর্যন্ত তা ৯১ আসনে ঠেকে, যেখানে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছিল ৫২ আসন।

২০১৯ সালে জরিপের পূর্বাভাসের সঙ্গে চূড়ান্ত ফলাফলের মিল ছিল বেশি। তবে এবার চিত্র একটু ভিন্ন হতে পারে বলে জানাচ্ছে এনডিটিভি।

গত ১৯ এপ্রিল প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ দিন থেকে বিজেপির জন্য নতুন কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয়। দলটির আদর্শিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এর কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের একটি অংশের মধ্যে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহের কথা উঠে আসতে থাকে। বিপরীতে মোদিবিরোধী হাওয়া জোরালো হতে থাকে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বলে আসছে, এবার তারা '৪০০ আসন' পার করবেন। মোদি তার জনসভাগুলোতে এমন প্রত্যাশার কথা বলেছেন।

এদিকে কংগ্রেসসহ ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকরা মোদিকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে এবার আরও বেশি আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন। এককভাবে না হলেও কংগ্রেস সভাপতি মলিস্নকার্জুন খাড়গে দাবি করেছেন, ইন্ডিয়া জোটের শরিকরাই সরকার গঠন করবে, পতন হবে মোদি সরকারের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে