শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১
ট্রাম্পকে রিপাবলিকান দাতাদের সমর্থন

ডোনাল্ড ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত, সাজা ঘোষণা ১১ জুলাই

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ জুন ২০২৪, ০০:০০
ডোনাল্ড ট্রাম্প

ব্যবসায়িক নথিপত্রে তথ্য গোপনের অভিযোগে করা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের একটি আদালত এ রায় দেন। ওই মামলায় আনা ৩৪টি অভিযোগের সব কটিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির এই নেতা।

আদালতের এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলেন। আগামী ১১ জুলাই এ মামলায় ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা করা হবে। সাবেক এ প্রেসিডেন্টের কারাদন্ড হতে পারে। তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, তাকে জরিমানা করার সম্ভাবনাই বেশি।

বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, এটা তার জন্য মর্যাদাহানিকর। তিনি ন্যায়বিচার পাননি। আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন।

ট্রাম্পের এই বক্তব্য থেকে বোঝাই যায়, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। তবে এটাই কিন্তু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একমাত্র মামলা নয়। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বর্তমানে একটি মামলা চলছে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষের পর হোয়াইট হাউস থেকে সরকারি গোপন নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে করা আরও একটি মামলা ঘাড়ে নিয়ে ঘুরছেন তিনি।

৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা এই মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ২০০৬ সালে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পরে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে মুখ না খুলতে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে স্টর্মিকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়া হয়। তার হাতে এ অর্থ তুলে দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন। তবে ব্যবসায়িক নথিপত্রে এ লেনদেনের তথ্য গোপন করা হয়েছিল। যদিও এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন ট্রাম্প।

নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে দীর্ঘ পাঁচ সপ্তাহ ধরে শুনানির পর বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন ১২ জন বিচারকের একটি বেঞ্চ। এর আগে তারা রায় নিয়ে ১১ ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা করেছেন। এমন সময় এ রায় ঘোষণা করা হলো, যখন কয়েক মাস পরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবার প্রেসিডেন্ট পদে আসতে চাচ্ছেন ট্রাম্প। তবে রায়ের কারণে তার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কোনো বাধা আসবে না।

এদিকে এই মামলার মাধ্যমে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে 'আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব' বিস্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আদালতে অভিযোগ এনেছিলেন তার আইনজীবীরা। এটাও বলেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ভুল কিছুই করেননি। প্রতিনিয়ত একই কথা বলছিলেন ট্রাম্পও। আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের একাধিকবার বলেছেন, তিনি আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।

এদিকে, পর্নো তারকাকে দেওয়া ঘুষের ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে জোরালো সমর্থন দিয়েছেন তার দল রিপাবলিকান পার্টির প্রধান দাতারা।

যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ নভেম্বরের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পকে লাখ লাখ ডলার দিয়ে সহায়তা করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার জুরিরা ট্রাম্প দোষী বলে রায় জানানোর পর যেসব বড় দাতা তাকে জোর সমর্থন দিয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন ধনকুবের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী মিরিয়াম অ্যাডেলসন ও হটলিয়ার রবার্ট বিগলো।

তারা যে আর্থিক অনুদানের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন তাতে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে ট্রাম্পের পক্ষে ব্যাপকভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার, দ্বারে দ্বারে ভোট চাওয়া এবং ফোন ব্যাংকিং সেবা ত্বরান্বিত হবে।

আদালতের রায়ের পর ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের কিছু দাতা তার জন্য আর্থিক অনুদান আরও বাড়িয়েছেনও। অন্তত একটি ক্ষেত্রে এই দাতারা প্রথমবারের মতো বড় অঙ্কের অনুদান দিয়েছেন।

রবার্ট বিগলো ট্রাম্পের শীর্ষ সমর্থকদের একজন। ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়া একটি গোষ্ঠীকে তিনি এরই মধ্যে ৯০ লাখ ডলারের অনুদান দিয়েছেন। বিগলো বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার বিচার প্রক্রিয়া 'মর্যাদাহানিকর'।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, 'আমি (সাবেক) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেওয়া প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী তার জন্য আরও ৫০ লাখ ডলার পাঠাচ্ছি।'

জ্যামাইকায় ট্রাম্প আমলের রাষ্ট্রদূত ডন টাপিয়া বলেছেন, তিনি এবং ছোট একটি পারিবারিক নেটওয়ার্ক ও বন্ধুরা মিলে নির্বাচনে ট্রাম্পকে সহায়তা করতে প্রায় আড়াই লাখ ডলার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালতের রায় আসার পর টাপিয়া রয়টার্সকে বলেন, তাদের লক্ষ্য আগামী কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্পপন্থি এমএজিএ ইনকরপোরেট গ্রম্নপকে ১০ লাখের বেশি ডলার দেওয়া। ট্রাম্পের জন্য তারা সব কিছুই করবেন বলে জানিয়েছেন টাপিয়া।

ওদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেট টুইটার) এক পোস্টে সিলিকন ভ্যালির বিনিয়োগকারী শন ম্যাগুয়ার সহায়তা হিসাবে ট্রাম্পকে তিন লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে কাজে লাগানো হচ্ছে বলেই আমি বিশ্বাস করি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে