শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১
বিদেশি কর্মীদের জন্য বন্ধ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

শেষ মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় যেতে শ্রমিকদের দৌড়ঝাঁপ

কয়েক হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকে ঠাসা কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর
যাযাদি ডেস্ক
  ০১ জুন ২০২৪, ০০:০০
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য শুক্রবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির হয়েছিলেন কয়েকশ' মানুষ। যাদের বেশিরভাগই ফ্লাইট ধরতে পারেননি -স্টার মেইল

বিদেশি কর্মীদের জন্য শনিবার (১ জুন) থেকে বন্ধ হয়ে গেছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। শুক্রবার জরুরিভিত্তিতে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে কর্মী পাঠানো হয়েছে। একসঙ্গে অনেক কর্মী প্রবেশ করায় কোম্পানিগুলো যথাসময়ে কর্মীদের রিসিভ করছে না। এতে চাপ পড়েছে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কয়েক হাজার বাংলাদেশি কর্মী বিমানবন্দরে অবস্থান করছেন।

এদিকে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের জন্য ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর রুটে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এই অতিরিক্ত ফ্লাইট শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায় বলে বিমানের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ওই ফ্লাইটে মোট ২৭১ জন যাত্রী মালয়েশিয়ায় যেতে পেরেছেন। কিন্তু টিকিট ছাড়াই কয়েকশ' মানুষ শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে ভিড় করে ছিলেন মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য।

কুষ্টিয়া থেকে আসা মনিরুল ইসলাম নামের একজন বলেন, এজেন্সি তাদের দফায় দফায় সময় দিয়েও ফ্লাইটের টিকেট দিতে পারেনি। বলছে, টিকেটের দাম বেশি হওয়ায় তারা

কুলিয়ে উঠতে পারছে না।সর্বশেষ সন্ধ্যার একটি ফ্লাইটের টিকেট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই টিকেট তিনি এখনও হাতে পাননি।

মালয়েশিয়া যেতে বাংলাদেশি নতুন কর্মীদের সময় শেষ হয়েছে শুক্রবার। এই সময়সীমার সুযোগ নিয়ে একটি চক্র মালয়েশিয়ার টিকিটের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই রুটে ৩০ হাজার টাকার টিকিটের দাম ১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ নিয়ে মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক কয়েক হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন।

অন্যদিকে মালয়েশিয়া সরকার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে চাপ কমাতে ইমিগ্রেশন বিভাগের জনবল বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি অপেক্ষমাণ কর্মীদের জন্য খাবার এবং পানির ব্যবস্থা করতে বলেছে।

সিলেটের আলামিন তিন মাস ধরে অপেক্ষায় ছিলেন কবে তার ভিসা আসবে এবং তারপর ফ্লাইট ঠিক হবে। এদিকে মালয়েশিয়া সরকারের কর্মী নেওয়া বন্ধ ঘোষণায় বেশ চিন্তিত ছিলেন তিনি। ধারণা করছিলেন যে পাঁচ লাখ টাকা বোধহয় জলেই যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে বিশেষ ফ্লাইট ব্যবস্থা করায় তিনি মালয়েশিয়া পৌঁছাতে পেরেছেন। তবে এখনো অপেক্ষা করছেন বিমানবন্দরে। তার অভিযোগ ৮ ঘণ্টা হলেও কোম্পানির কেউ তাকে রিসিভ করতে আসেনি। তার সঙ্গে অপেক্ষমাণ আছে আরও কয়েকশ' কর্মী।

বিমানবন্দর থেকে আলামিন জানান, কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে এই মুহূর্তে কয়েক হাজার বাংলাদেশি আটকা পড়ে আছেন। তাদের ইমিগ্রেশন কখন হবে কেউ বলতে পারছেন না। শেষ মুহূর্তে অনেক কর্মী মালয়েশিয়া এসেছে।

শনিবার অপর এক কর্মী অভিযোগ করে বলেন, ফ্লাইট আসছে ৬-৭ ঘণ্টা হয়ে গেছে। এখনো কেউ রিসিভ করতে আসেনি। যার কারণে ইমিগ্রেশন করা যাচ্ছে না। এখানে অনেক বাংলাদেশি আছে যাদের একই অবস্থা।

মালয়েশিয়ার অধিকারকর্মীরা বলছেন, কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে কম দক্ষ এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসী শ্রমিকে উপচে পড়েছে। দুবাই, কলম্বো, হংকং ও ব্যাংককের মতো বিশ্বের দূর-দূরান্তের ট্রানজিট গন্তব্যসহ সব ধরনের বৈধ চ্যানেলে শেষ মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় আসছেন এসব কর্মী। আগামী ৩১ মে সরকার অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় প্রবেশের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার আগেই আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দামে টিকিট কিনতে হয়েছে তাদের।

এদিকে এমন অবস্থায় মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে সে দেশের সরকার। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ জানায়, মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ পরিস্থিতি নিরসনে কাজ করছে। বিমানবন্দরের এক এবং দুই নম্বর টার্মিনালে বিদেশি কর্মীদের সংখ্যা উপচে পড়ছে। ৩১ মে সময়সীমার মধ্যে নিয়োগকর্তারা শেষ মুহূর্তে কর্মীদের নিয়ে আসছে এ দেশে। এই কারণে এমন সংকট তৈরি হয়েছে। এই কর্মীদের অবশ্যই মালয়েশিয়ায় প্রবেশের আগে বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে এবং তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে হবে।

ইমিগ্রেশন বিভাগ জানায়, অন্যান্য সময় বিমানবন্দরে ৫০০ থেকে ১০০০ বিদেশি কর্মী প্রবেশ করেন। গত ২২ মে থেকে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫০০-তে। আর ২৭ মে'তে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে একদিনে চার থেকে সাড়ে চার হাজার। এয়ারলাইন্সগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শেষ সময়ের এই কয়দিনে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে ইমিগ্রেশন বিভাগ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানায় বিবৃতিতে। এসব কর্মীদের যাচাই-বাছাই এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কাউন্টার বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করার জন্য আরও ইমিগ্রেশন অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং এসব কর্মীর জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা হবে।

মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩১ মে'র পর অনুমোদিত কোটার আর কোনো কর্মী সেদেশে প্রবেশ করতে পারবেন না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে এই সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ করা হলেও গতকাল ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাসিম জানিয়েছেন, এই সময় আর বাড়ানো হবে না। ৩১ মে'র মধ্যে কর্মীদের সেদেশে প্রবেশ করতে হবে এবং এই সিদ্ধান্ত অন্যান্য ১৪টি উৎস দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য।

২০০৮ সালে বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, আট বছর পর তা চালু হয়েছিল ২০১৬ সালে। এরপর দুর্নীতির অভিযোগে ফের ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নতুন সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে সেই বাজার খুলতে সময় লেগেছিল তিন বছর। ২০২২ সালের আগস্টে দেশটিতে আবারও বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়। মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১ জুন থেকে বাংলাদেশসহ বিদেশি কর্মীদের দেশটিতে প্রবেশ বন্ধ থাকবে। নতুন নিয়মে কর্মী পাঠাতে হলে আবারও সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। দেশটি বর্তমানে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে শ্রমিক নেয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে