নবায়নযোগ্য বিদু্যৎ :বাস্তবে নেই, আছে পরিকল্পনায়

প্রকাশ | ৩১ মে ২০২৪, ০০:০০

রেজা মাহমুদ
দেশের নবায়নযোগ্য খাতে বিদু্যৎ উৎপাদন এখনো হাজার মেগাওয়াট ছাড়াতে পারেনি। তবে চলতি অর্থবছরে এ খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট মহলে তোড়জোড়ের কমতি ছিল না। বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে দেশি-বিদেশি নানা সংস্থা। সরকারের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা, বাস্তবায়িত হয়েছে বেশকিছু প্রকল্পও। তবুও মোট বিদু্যৎ উৎপাদনে এ খাতের অবদান আটকে আছে ৪ শতাংশের নিচে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন বাস্তবতায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদু্যতের ৪০ শতাংশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গেলে ২৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পাশাপাশি দক্ষ জনবল তৈরি ও নিজস্ব প্রযুক্তির মানোন্নয়ন প্রয়োজন হবে, কিন্তু বিদ্যমান নীতি এবং যে গতিতে এ খাতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে তা প্রায় অসম্ভব। তাই পরিকল্পনার মধ্যে আটকে না থেকে প্রতি বাজেটে- এ খাতে সব ধরনের নীতি সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন। এর আগে ২০১৮ সালে নবায়নযোগ্য বিভিন্ন উৎস থেকে বিদু্যৎ উৎপাদন সংক্রান্ত বছরভিত্তিক পরিকল্পনায় ২০২২ সালের মধ্যে সম্ভাব্য অর্জনের একটি হিসাব করা হয়েছিল। এ লক্ষ্যে প্রায় ৪০টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, যার বেশিরভাগই গ্রহণ করা হয়েছে ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে নবায়নযোগ্য বিভিন্ন উৎস থেকে মোট ৫৮৪ দশমিক ৭২ মেগাওয়াট, ২০১৯ সালে ৪৩২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট, ২০২০ সালে \হ৬০৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ও ২০২১ সালে ৫৫৫ দশমিক ৫ মেগাওয়াট নতুন বিদু্যৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে এসে এ খাত থেকে ৯৩৪ মেগাওয়াট বিদু্যৎ সরবরাহ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। এদিকে জীবাশ্ম জ্বালানিতে দেশে বর্তমান বিদু্যৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট। দৈনিক চাহিদা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াটে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাপক সম্ভাবনা সত্ত্বেও এ খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হয়নি। এমনকি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে ছিল চরম উদাসীনতা। দেরিতে হলেও সরকার এখন এ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলছে। তবে কথা আর পরিকল্পনায় সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুলস্নাহ বলেন, সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা তৈরির পরেও ২৬ বছরে কেবল জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা বাড়িয়েছে। গত ১০ বছরে আমদানি জ্বালানিতে বিদু্যৎ উৎপাদনে অন্তত ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু সম্ভাবনা সত্ত্ব্বেও এ খাতে বিনিয়োগে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সাসটেইনেবল রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (স্রেডা) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদু্যৎ উৎপাদন হচ্ছে ৯৩৪ মেগাওয়াট, এর মধ্যে সোলার উৎপাদন ৭০৩ দশমিক ৩৪ মেগাওয়াট। উইন্ড ০.৯ মেগাওয়াট। হাইড্রো ২৩০ মেগাওয়াট। অথচ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ সালে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদু্যৎ উৎপাদনের পরিমাণ পৌঁছানোর কথা ছিল আড়াই হাজার মেগাওয়াট। চলতি সপ্তাহে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নবায়নযোগ্য জ্বলানি খাতে বাজেট শীর্ষক এক সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. অতিউর রহমান বলেন, এই বাজেটই হবে আগামী ৫ বছরের ভিত্তি। তাই সবুজ উন্নয়নের দিকে সরকারকে এখনই নজর দিতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে সবুজ জ্বালানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। তাই এ খাতের জন্য সহায়ক শুল্কনীতি গ্রহণের উদ্যোগ দরকার। দেখা গেছে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিতে উচ্চ শুল্কহার বিদ্যমান রয়েছে। যেমন লিথিয়াম আয়রন ব্যাটারি ১০ বছর মেয়াদি সার্ভিস দিতে সক্ষম। কিন্তু এই ব্যাটারি আমদানিতে ৮৪ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এ ছাড়া সোলার বিদু্যৎ উৎপাদনে ইনভারটার মাউন্টিং স্ট্রাকচার আমদানিতে ৫৪ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। যা পরোক্ষভাবে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে অনাগ্রহী করে তুলছে বলেও তিনি জানান। এদিকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না বলে মনে করেন স্রেডা চেয়ারম্যান মুনিরা সুলতানা। তিনি বলেন, সৌর বিদু্যতে জমির ঘাটতি রয়েছে। তবে বায়ু বিদু্যতে স্থলভাগে কাজ এগোচ্ছে। অফসোর নিয়ে সমীক্ষা চলছে। রিপোর্ট পেলে অফসোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে সৌর বিদু্যৎ শতভাগ নিরবচ্ছিন্ন না। এজন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি কনভেনশনাল বিদু্যতের সমন্বয় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। বিদু্যৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, 'বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস হতে ১২ হাজার ৪৭ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদনে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বর্তমানে ৩ হাজার ২৫৩ মেগাওয়াট সৌরবিদু্যৎ প্রকল্প চলমান রয়েছে। তবে বায়ুবিদু্যৎ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, যদিও এরই মধ্যে উইন্ড ম্যাপিং সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি, ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদু্যৎ উৎপাদনের শতকরা ৪০ ভাগ হবে নবায়নযোগ্য বিদু্যৎ।