ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণ শেষে প্রধানমন্ত্রী

উপকূলীয় অঞ্চলে দেওয়া হবে দুর্যোগ সহনীয় ঘর

প্রকাশ | ৩১ মে ২০২৪, ০০:০০

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার পটুয়াখালীর কলাপাড়ার সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ মাঠে বক্তব্য রাখেন
ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্তদের সবরকম সহযোগিতায় সরকার পাশে থাকবে বলে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, 'উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগ সহনীয় ঘর করে দেওয়া হবে। ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছে সরকার।' বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় রেমালকবলিত এলাকা পটুয়াখালীর কলাপাড়ার সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ মাঠে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, 'দেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে, যেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ রেহাই পায়।' তিনি বলেন, 'ভেঙে যাওয়া বাঁধ ইতোমধ্যেই পুনঃনির্মাণ শুরু করে দিয়েছি, যাতে বন্যার আগেই নির্মাণকাজ শেষ হয়। উপকূলে দুর্যোগ সহনীয় ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে যেখানে আপনাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে সেটুকুও নতুন করে তৈরি করে দেব, আমার ওপর আস্থা রাখুন।' শেখ হাসিনা বলেন, 'আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে বলে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। বন্যায় যে সব কৃষকের ক্ষতি হয়েছে তাদের সার-বীজের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে তারা পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারে।' তিনি বলেন, 'বিনা পয়সায় শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হয়েছে। চাকরির পেছনে সময় ব্যয় না করে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে হবে।' যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা থেকে আপনারা পাঁচ ঘণ্টায় এবং বরিশাল থেকে দুই ঘণ্টায় কলাপাড়ায় আসতে পারেন। পায়রা বন্দর এবং তাপবিদু্যৎ স্থাপনের কারণে এলাকার মানুষের কর্মস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।' এর আগে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে কলাপাড়ার হাই স্কুল মাঠে অবতরণ করেন এবং সড়কপথে মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজ মাঠে ত্রাণ বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সময় তিনি প্রায় ১০ মিনিট জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী সড়ক পথে কলাপাড়া-কুয়াকাটা রুটের শেখ কামাল সেতু পরিদর্শন করেন। পরে তিনি হেলিকপ্টারযোগে পায়রা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রে অবতরণ করেন, সেখানে তিনি বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা করেন। শেষে তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রে মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করে বিকাল ৩টায় তিনি ঢাকার উদ্দেশ রওনা হন। এর আগে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের ধ্বংসযজ্ঞ হেলিকপ্টার থেকে দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার সময় হেলিকপ্টার থেকে এসব এলাকার পরিস্থিতি দেখেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ধীরগতিতে অল্প উচ্চতা দিয়ে চক্কর দেয়। আইএমওর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মেরিন স্কলারশিপ করতে চায় বাংলাদেশ এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইএমওর মহাসচিব আর্সেনিও অ্যান্তোনিও ডমিনগুয়েজ সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) মাধ্যমে ছোট দ্বীপ ও আফ্রিকান স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য বঙ্গবন্ধুর নামে সামুদ্রিক খাতে বৃত্তি চালু করতে চায়।' তিনি বলেন, 'আমরা আইএমওর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নামে ১০টি ক্যাডেট প্রশিক্ষণ বৃত্তি চালু করতে চাই।' বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম বলেন, আইএমওর মহাসচিব প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন। বৃত্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আইএমওর মহাসচিব নারী মেরিনার বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রথম নারী মেরিনারদের নিয়োগ দিয়েছে এবং তাদের নাবিক হতে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি এক মাসের মধ্যে ছিনতাইকৃত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহর ক্রুদের মুক্ত করতে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য আইএমওর প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা সামুদ্রিক পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইএমওকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'আমাদের অর্থনীতির জন্য সমুদ্রপথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।' তিনি বলেন, 'বঙ্গোপসাগরের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো একসঙ্গে সমুদ্রপথের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করছে। সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্যান্য জায়গায় একই ধরনের উদ্যোগ নিন।' বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাগুলোর পাশাপাশি জাহাজ নির্মাণ এবং এর রিসাইক্লিং শিল্প নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার জাহাজ নির্মাণ এবং এর রিসাইক্লিং শিল্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশকে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও খরার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় রেমালের কথা উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘস্থায়ী ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে বাংলাদেশের সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ এম জিয়াউদ্দিন ও মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।