শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১
উপজেলা নির্বাচন

ভোটার খরা :তৃতীয় ধাপেও একই চিত্র

শান্তিপূর্ণ ভোটে সন্তোষ প্রকাশ সিইসির কারচুপির অভিযোগে আটক ৩০
যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ মে ২০২৪, ০০:০০
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ভোটার দেখা যায়নি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দেওরাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে -সংগৃহীত

তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বড় ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে কিশোরগঞ্জ ইটনা ও চট্টগ্রামের পটিয়ার একটি কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ইটনায় পুলিশ ১৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। এছাড়া অনিয়মের কারণে ফেনী সদরে আটক হয়েছেন একজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। জালভোটের অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জেও। সেখানে আটক করা হয়েছে ১৭ জনকে। তিন প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। ফরিদপুরের সদরপুরে জালভোট দেওয়ায় একজনকে ছয় মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় পোলিং কর্মকর্তার 'প্রক্সি' দিতে গিয়ে একজন আটক হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬ জনকে কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। রাজশাহীর পবা ও মোহনপুর উপজেলায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৩জন। হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে অসুস্থ হয়ে একজন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার মৃতু্য হয়েছে।

বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা দেশের ৮৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ চলে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবের পরপরই অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের এ নির্বাচনও ভোটার খরা

অর্থাৎ ভোটার উপস্থিতি আগের দুই ধাপের মতো কম ছিল।

এদিকে, নির্বাচন শেষে বুধবার বিকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল তৃতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ৩৫ শতাংশের কম-বেশি ভোট পড়তে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন।

সিইসি শান্তিপূর্ণ ভোট ও ভোটার উপস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, 'আজকের নির্বাচন সন্তোষজনক হয়েছে। এখন পর্যন্ত উপস্থিতির যে তথ্য পেয়েছি, সেটি ৩৫ শতাংশের কমও হতে পারে, বেশিও হতে পারে। সঠিক তথ্য পেতে আরও সময় লাগবে।'

খুবই সীমিত পরিসরে কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে উলেস্নখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, অনিয়ম-ভোট কারচুপির চেষ্টায় ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজনকে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় ৬ জন আহত হয়েছে। একজন প্রিজাইডিং অফিসার অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। বান্দরবানের নানিয়ারচরে একটি কেন্দ্রে ইউপিডিএফ সদস্যরা গন্ডগোল করার চেষ্টা করেছিল, তা প্রতিহত করা হয়েছে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচন মোটামুটি হয়েছে। প্রশাসন, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল। দুই-চারটি অনভিপ্রেত ঘটনা ছাড়া যথেষ্ট শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি ৩৫ শতাংশের পস্নাস-মাইনাস হবে।'

এর আগে, দুপুরে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের জানান, কোথাও উলেস্নখযোগ্য তেমন ঘটনা ঘটেনি, সবখানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। আধা বেলায় ১৭ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে বলে ধারণা দেন সচিব।

এবারের ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে ৮ মে প্রথম ধাপে গড়ে ৩৬% এবং দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে গড়ে ৩৮% ভোট পড়ে। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা হয়েছিল ১১২ উপজেলার। কিন্তু প্রার্থীর মৃতু্য, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রার্থী নির্বাচিত, মামলার কারণে ভোট স্থগিত এবং রেমালের কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও বিদু্যৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন থাকায় সব মিলিয়ে ২৫টি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বুধবার ভোট হয় ৮৭ উপজেলায়।

এই ধাপে মোট ১ হাজার ১৫২ জন প্রার্থী বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৯৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৫৬ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৯৯ জন। প্রথম দুই ধাপের ভোটে বেশির ভাগ স্থানে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাই জিতেছেন। এছাড়া বিএনপির বহিষ্কৃতসহ অন্তত ১০ জন জয়ের মুখ দেখেছেন।

সবশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা ভোটে গড়ে ৪১% এর বেশি ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১% এবং তৃতীয় উপজেলা ভোটে ২০০৯ সালে ৬৭.৬৯% ভোট পড়ে। এই হিসাবে গত দেড় দশকের মধ্যে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ভোটের হার এবারই সবচেয়ে কম।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ভোট করার সুযোগ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।

অন্যদিকে বিএনপির অল্প কিছু নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করলেও, দলটি উপজেলা পরিষদের ভোট বর্জন করেছে। দেশের মোট ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫ উপজেলায় চার ধাপে ভোট হচ্ছে এবার। প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ভোট হয়। আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপের ভোট রয়েছে।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা, ফাঁকা গুলি : হাওড়াঞ্চল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, জেলার ইটনা উপজেলার চৌগাঙ্গা শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিনের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার ভোট চলাকালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার ওপর হামলা চালিয়ে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হননি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ জানান, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন গিয়ে ফাঁকা ১৪ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ১৫-২০ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। পরে আবারও ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এ ঘটনায় কেউ আটক হয়নি। তবে পরবর্তীতে মামলা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

প্রতীকে অমিল, ভোট স্থগিত : বগুড়া প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর প্রতীকে অমিল থাকায় পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার বেলা ১১টার দিকে এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

জানা যায়, এই পদের প্রার্থী ইফতারুল ইসলাম মামুন 'কাঠিওয়ালা আইসক্রিম' প্রতীক পান। কিন্তু ভোট প্রদান করতে গিয়ে ভোটাররা দেখতে পান, ব্যালটে আইসক্রিম প্রতীক নেই। খবর পেয়ে প্রার্থী ইফতারুল ইসলাম মামুন বগুড়া সাত মাথায় সাংবাদিকের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন। বিষয়টি দ্রম্নত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে প্রকাশে ভোট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।

বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ফিরোজা পারভীন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদের ব্যালটে প্রতীক ভুল আসায় এই পদে ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।'

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বরখাস্তের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমি মৌখিকভাবে শুনেছি তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে, তবে এখনো চিঠি পাইনি।'

চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ : আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় দুই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুইজন আহত হয়েছেন। বুধবার সকাল ১০টায় বরুমছড়া আখতারুজ্জামান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের পর দুই পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আনোয়ারা থানার ওসি (তদন্ত) মহিউদ্দিন জানান, ভোটকেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টিম সেখানে রয়েছে।

তিন প্রার্থীর ভোট বর্জন : কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, জোরপূর্বক এজেন্ট বের করে দেওয়া, এজেন্ট ফরম ছিঁড়ে ফেলা ও কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাতসহ তিন প্রার্থী। বুধবার সকালে সাংবাদিকদের ভোট বর্জনের বিষয় নিশ্চিত করেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাত হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা বেগম পারুল।

প্রার্থীদের অভিযোগ, সকাল ৮টার আগেই মেয়র কাদের মির্জা ও তার ছেলে তাশিক মির্জার নেতৃত্বে এজেন্টদের কাগজ ছিঁড়ে ফেলে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। তিনি নিজে মেয়র হয়ে সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করেন। প্রশাসনকে জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ভোটের পূর্ব রাতে মোটর সাইকেল বাহিনী বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা, হুমকি, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভোটাররা যেন কেন্দ্রে না আসে, সে জন্য আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাত হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পুনরায় তফসিল ও নির্বাচন দাবি করে বলেন, 'প্রার্থী হয়ে আমি নিজেও ভোট দিতে পারিনি। মেয়র কাদের মির্জা ও তার ছেলে তাশিক মির্জা আমাকে ভোট দিতে দেয়নি।'

পবা ও মোহনপুরে সংঘর্ষ, আহত ১৩ : রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, পবা ও মোহনপুর উপজেলায় ছয়টি কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে ১৩ জন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পবা উপজেলার পারিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে আনারস প্রতীকের প্রার্থী ফারুক হোসেন ডাবলু ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী এমদাদুল হকের সমর্থকদের মধ্যে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে। এতে একজন ছুরিকাহত হন। পুলিশ ও বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মোহনপুর উপজেলার সিংহমারা, হাটরা, মহিশকুন্ডি কেন্দ্রের বাইরে আনারস ও কাপ পিরিচের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের মোট ১২ জন আহত হয়েছেন।

কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, 'আমরা বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখছি, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। অতিউৎসাহী কিছু মানুষ গোলযোগ করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার সমন্বয়ের মাধ্যমে সেটি প্রতিহত করা হচ্ছে। আমরা আশা করি, ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।'

ছয়জনকে কারাদন্ড : স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, জেলার আশুগঞ্জ ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ভোট চলাকালে ব্যালটে সিল দিয়ে ছবি তোলা, জাল ভোট দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে আশুগঞ্জে চারজন ও বাঞ্ছারামপুরে দুইজনকে কারাদন্ড দেওয়া হয়।

কারাদন্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- আশুগঞ্জ উপজেলার মাহবুবুর রহমান, তামিম সরকার, মো. জহুরুল ইসলাম ও আমির হোসেন এবং বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মো. আলামিন মিয়া ও মো. নজরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর এবং আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন সুলতানা বলেন, 'নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোথাও গোলযোগের কোনো ধরনের চেষ্টা করা হলে, তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা দেওয়া আছে।'

যুবকের ৬ মাসের কারাদন্ড : ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার সদরপুর উপজেলার নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়ার দায়ে আরিফ মাতুব্বর (২৬) নামে এক যুবককে ছয় মাসের সশ্রম কারাদন্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. শাওন হোসেন। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও দুইদিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড ভোগ করতে হবে। দন্ড পাওয়া যুবক চরনাসিরপুর ইউনিয়নের মুজিরচরকান্দি গ্রামের দাদন মাতুব্বরের ছেলে।

আদালতের বিচারক মো. শাওন হোসেন বলেন, 'সদরপুরের চরনাসিরপুর ইউনিয়নের আব্দুল হাকিম মাতুব্বরডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৩ সালের ৭২ নম্বর বিধিতে দোষী সাব্যাস্ত করে এই সাজা প্রদান করা হয়। দুপুর ১টার দিকে তাকে ফরিদপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।'

সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের মৃতু্য : এদিকে, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকালে হবিগঞ্জে মো. এমদাদুল হক নামে এক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের মৃতু্য হয়েছে। তিনি হবিগঞ্জ এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

হবিগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম জানান, 'মো. এমদাদুল হক সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শহরের উমেদনগর পৌর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে সদর আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।'

জাল ভোট দেওয়ায় আটক ১৭ : অন্যদিকে, ফেনীতে জাল ভোটে সহযোগিতা ও জাল ভোট দেওয়ার দায়ে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ ১০ জনকে আটক করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা (কুমিলস্না অঞ্চল) ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, 'ফেনী সদর উপজেলায় পিটিআই কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার সময় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও একজন পোলিং এজেন্টকে আটক করেছেন। এ ছাড়া ফেনী সদরে সরকারি বালিকা কেন্দ্রে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। দাগনভূঞা উপজেলার গজারিয়া কেন্দ্রে মারুফ হোসেন (১৮) ও সোনাগাজী উপজেলার রাজাপুর মাস্টার মুজিবুল হক একাডেমি কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অপরাধে আরও একজনকে আটক করা হয়েছে।'

সিল মারা ব্যালটের ছবি ফেসবুকে : স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী জানান, ভোট কেন্দ্রের গোপন বুথে সিল মারা ব্যালটের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকার মাসুদ। এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠলে ছবিটি দ্রম্নত সড়িয়ে নেন তিনি। বুধবার দুপুরে জেলা শহরের রাবেয়া বালিকা বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে ভোট দেন মাসুদ।

এ বিষয়ে জানতে মাসুদ সরকার মাসুদের মোবাইলে কল করলে 'বিষয়টি আমি বুঝতে পেরেছি' বলে কল কেটে দেন তিনি। এরপর আর কল রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন, 'এ বিষয়ে আপনি লিখিত অভিযোগ করেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেবে।' তবে ভোট কেন্দ্রের গোপন বুথে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার ছবি ফেসবুকে দেওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিরোদা রানী রায় মোবাইল ফোনে বলেন, আপনি আগে ছবিটা আমাকে পাঠান, তারপর দেখে জানাব। ছবি পাঠানোর পর একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর হামলা : রংপুর প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ইকবাল হোসেনের (আনারস প্রতীক) ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের (হেলিকপ্টার প্রতীক) কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। বুধবার দুপুর সদর উপজেলার মোবারক হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ন্যায়বিচার ও ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রার্থী ইকবাল হোসেন কেন্দ্রের সামনে ঘণ্টাব্যাপী প্রতীকী অনশন করেন।

ইকবাল হোসেন বলেন, দুপুরে আমি মোবারক হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন গেলে হেলিকপ্টার প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা প্রশাসনের সামনে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন। এ কেন্দ্রের ভোটারদের রাস্তায় আটকে রাখা হয়। তাদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হয়। নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে না আসায় আমি এখানে অবস্থান নিয়েছি।

ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান ঘটনার সততা নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। খবর পেয়ে বিজিবির সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত হয় বলে তিনি জানান।

চেয়ারম্যান প্রার্থী ডা. দেলোয়ার হোসেন হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, 'নির্বাচনে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা রটিয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা চলছে। মূলত ওই প্রার্থী ঘটনাস্থলে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করায় অন্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা উত্তেজিত হলে সেখানে হট্টগোল শুরু হয়।

ফেসবুকে সিল মারা ব্যালটের ছড়াছড়ি:স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল জানান, সদর উপজেলায় ভোট কেন্দ্রে পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারা ব্যালটের সঙ্গে ছবি তুলে ও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন একাধিক প্রার্থীর সমর্থকরা। বুধবার জেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের সিল মারা ব্যালট পেপারের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানে পদে এম শিবলী সাদিককে টেলিফোন প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট পেপারের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যক্তি। টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন খান তোফাকে দোয়াত-কলম প্রতীকে ও ভাইস চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহম্মেদ রাজীবকে উড়োজাহাজ প্রতীকে ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পপি গুহকে পদ্মফুল প্রতীকে সিল মেরে ব্যালটের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন মুহিত ইসলাম নামে এক ভোটার।

একই উপজেলায় ঘোড়া প্রতীকে সিল মেরে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন কাজী ইলিয়াস নামে একজন। সদর উপজেলাতে কৌশিক আহম্মেদ রাজু উড়োজাহাজ প্রতীকে ভোট দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। আসলাম খান জনি নামে এক ব্যক্তি ঘোড়া প্রতীকে সমর্থন জানিয়ে ফাঁকা ব্যালট পেপার পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। এছাড়া আরও অনেককে ব্যালটের ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট করতে দেখা গেছে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মতিয়ুর রহমান জানান, সিলমারা ব্যালটসহ কেউ ফেসবু?কে? দি?য়ে?ছে কিনা তা তিনি জানেন না। খোঁজ নিয়ে ?বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে