তীব্র ক্ষোভ ইসরাইলের

ফিলিস্তিনকে ইউরোপীয় তিন দেশের স্বীকৃতি

প্রকাশ | ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ের প্রতিনিধিদের ফটোসেশন
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইউরোপের তিন দেশ-স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে। এ ঘটনায় আগেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের প্রতি ইউরোপের আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক দেশের এমন সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে গাজা যুদ্ধের ৭ মাস পর ইসরাইল এখন মনে করছে, বিশ্বে ক্রমেই তারা আরও বেশি একঘরে হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে প্রায় ১৪৪টি দেশই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। মাদ্রিদ, ডাবলিন ও অসলো বলেছে, ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে তাদের এ সিদ্ধান্ত ভূমিকা রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশগুলো স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে ওই তিন দেশের স্বীকৃতি অনেকটা প্রতীকী হিসেবে রয়ে যাবে। তবু তাদের আশা, এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশকে অনুরূপ পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রাণিত করবে। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তম ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ স্পেন ও আয়ারল্যান্ড। ২৭ জাতির ইইউর সদস্য সুইডেন, সাইপ্রাস, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড, স্স্নোভাকিয়া, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া এরই মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং ইইউর সদস্য মাল্টা ও স্স্নোভেনিয়াও ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। ফ্রান্স বলেছে, ফিলিস্তিনকে এখনো স্বীকৃতিদানের সময় আসেনি। আর ইসরাইলের কট্টর সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে জার্মানি। দেশ দুটি এমন 'একতরফা' পদক্ষেপ নাকচ করে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্য সংকটে ইসরাইল-ফিলিস্তিন এই দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান অবশ্যই সংলাপের মাধ্যমে হতে হবে। ২২ মে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, 'আমরা আশা করি, আমাদের স্বীকৃতি ও যৌক্তিক আচরণ পশ্চিমা দেশগুলোকে একই সিদ্ধান্ত (ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি) নিতে ভূমিকা রাখবে। কেননা আমাদের দল যত ভারী হবে, যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় আমরা তত প্রভাব খাটাতে সক্ষম হবো।' গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালিয়ে ১২ শতাধিক মানুষকে হত্যা করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা। সে সময় ইসরাইল থেকে ২৪০ জনের মতো ব্যক্তিকে ধরে এনে জিম্মি করে হামাস। ওইদিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইলে। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৬৭ সালের আগের সীমানাকে বহাল রেখে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে। আর জেরুজালেমকে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন উভয়ের রাজধানী হিসেবে মানবে দেশ তিনটি। এ পদক্ষেপে ফিলিস্তিন নিয়ে কূটনৈতিক প্রটোকলেও পরিবর্তন আসবে। পশ্চিম তীরে দেশ তিনটির প্রতিনিধিদের কার্যালয় উন্নীত হবে পূর্ণ দূতাবাসে। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানে ওই তিন দেশের সিদ্ধান্তের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরাইল। দেশটি মাদ্রিদ, অসলো ও ডাবলিন থেকে তার রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করেছে। পাশাপাশি তলব করছে দেশ তিনটির রাষ্ট্রদূতদের। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের কনসু্যলার সেবা দেওয়া থেকে স্পেনকে বিরত রাখার পদক্ষেপও নিয়েছে তেল আবিব। জবাবে স্পেনও ইসরাইলের প্রতি সমালোচনা জোরদার করেছে। দেশটি বলেছে, গাজায় সত্যিকারের জাতিগত হত্যা চলছে। স্পেন গতকাল সোমবার বলেছে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) গাজার রাফা শহরে ইসরাইলকে অভিযান বন্ধে যে নির্দেশ দিয়েছেন, সেটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানাতে ইইউর সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবে তারা। এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এক 'অপরিহার্য' পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। তিনি আজ বলেন, 'আমরা যদি শান্তি অর্জন করতে চাই, তবে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি এক অপরিহার্য বিষয়।'