জরিপের তথ্য

ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে ঢাকার ১৮ ওয়ার্ড

প্রকাশ | ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব নির্দিষ্ট সূচকের চেয়ে বেশি, যা ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ড 'উচ্চ ঝুঁকিতে' রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোর বহুতল ভবনেই মশার ঘনত্ব সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীন গত ১৭ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চালানো প্রাক-বর্ষা জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্র্ড এডিস মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। এ ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব (ব্রম্নটো ইনডেক্স) পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পাশপাশি ঢাকা-উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এ ছাড়া দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪, ৫২, ৫৪, ১৬, ৩, ৫, ১৫, ১৭, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং উত্তর সিটির ১৩, ২০, ৩৬, ৩১, ৩২, ১৭, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদন্ডের চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া গেছে। তবে কীটতত্ত্ববিদরা বলেছেন, গত ৩ দিন যাবৎ ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সারাদেশে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাতে রাজধানীর অনেক এলাকা দীর্ঘদিন পানি জমে থাকবে। এতে এডিস মশার লার্ভা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। ছড়িয়ে পড়া লার্ভা যদি ধ্বংস করা না যায় তাহলে অধিক পরিমাণ মশা জন্ম নেবে। মঙ্গলবার রাজধানীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আয়োজিত মৌসুম পূর্ব এডিস সার্ভে-২০২৪ এর ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. দাউদ হায়দার আদনান। তিনি বলেন, ঢাকা-উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯৯টি ওয়ার্ডে ২১টি টিমের মাধ্যমে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রতি ওয়ার্ড ৮টি বস্নকে ভাগ করা হয়েছিল। দুটি টিম ৪টি বস্নকে ১৫টি করে প্রতি ওয়ার্ডে ৩০টি করে বাড়ি জরিপ করেন। দশ দিনে ৯৯টি ওয়ার্ডে সর্বমোট ৩ হাজার ১৫২টি বাড়িতে জরিপ করা হয়। কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার যায়যায়দিনকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মশা বেশি। সামনের দিনগুলোয় এই মশা আরও বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে জরুরিভাবে মশাগুলো মেরে ফেলতে হবে। এ ছাড়া যেসব বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী আছে, সেসব বাড়িতে হটস্পট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে উড়ন্ত মশাগুলো মেরে ফেলতে হবে। নতুবা ডেঙ্গু রোগী বাড়বে। ওই জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব 'ব্রম্নটো ইনডেক্স' সূচকে প্রকাশ করা হয়। সাধারণত এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি 'ব্রম্নটো ইনডেক্স'র মানদন্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে রাজধানীর দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতে ব্রম্নটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। ফলে এই এলাকাগুলো ডেঙ্গুর বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ওই জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা-উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ১২নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে এডিসের ব্রম্নটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পরের অবস্থানে রয়েছে ১৩ এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ড। এই দুই ওয়ার্ডে ব্রম্নটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪০ শতাংশ। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৩১ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ১৭ এবং ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ ব্রম্নটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রম্নটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ঢাকার সবচেয়ে বেশি ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ৫২ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ব্রম্নটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দক্ষিণ সিটির ৩, ৫, ১৫, ১৭ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ ব্রম্নটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। ঢাকা-উত্তর সিটিতে মশার ঘনত্ব পরিমাপক সূচক ব্রম্নটো ইনডেক্স ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং হাউস ইনডেক্স ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া দক্ষিণ সিটিতে মশার ঘনত্ব পরিমাপক সূচক ব্রম্নটো ইনডেক্স ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং হাউস ইনডেক্স ১৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, জনসাধারণের সচেতনতা ছাড়া এডিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। শুধু চিকিৎসা নিশ্চিত করে প্রাণহানি ঠেকানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে নাগরিকের জনসচেতনতা সবচেয়ে বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার জন্য বলা হয়েছে। ঢাকায় চিকিৎসা নিতে এসে প্রাণহানি বাড়ায় এবার স্ব স্ব জেলায় চিকিৎসা নেওয়ার অনুরোধ করেন। পাশাপাশি প্রাণহানি এড়াতে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের সমন্বিত চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। তিনি বলেন, ২০১?৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত মৌসুম পূর্ব জরিপে উভয় সিটি করপোরেশনে এডিসের লার্ভার উপস্থিতি প্রতি বছর বেড়েছে। তাই লক্ষণ প্রকাশ পেলেই সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে আসার পাশাপাশি আগে এক বা একাধিকবার আক্রান্তদের সর্বোচ্চ সতর্কতা মানার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান করেন।