শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

কোমর পানিতে ডুবল চট্টগ্রাম

বঙ্গবন্ধু টানেল, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা ও বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কা
সন্‌জীব নাথ ও খোরশেদুল আলম শামীম, চট্টগ্রাম
  ২৮ মে ২০২৪, ০০:০০
রেমালের প্রভাবে রাতভর ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায়। ছবিটি সোমবার কাতালগঞ্জ এলাকা থেকে তোলা -স্টার মেইল

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল চট্টগ্রামে সরাসরি আঘাত না করলেও এর প্রভাবে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। সোমবার ভোর থেকে তিন ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এতে ডুবেছে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা। বিশেষ করে নগরীর নিচু এলাকায় কোমর সমান পানি জমে যায়। পানি ঢুকে পড়ে মানুষের বাসাবাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে।

কর্মব্যস্ত দিনের শুরুতে এমন বৃষ্টিতে নগরবাসী স্বস্তি পেলেও বিপাকে পড়েছেন পথচারী ও কর্মজীবী মানুষ। দেখা দেয় চরম জনদুর্ভোগ। এদিন দুপুরেও দমকা বাতাসের সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়।

এদিকে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৭ ঘণ্টা পর ফ্লাইট ওঠানামা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিপদ সংকেত কেটে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রোববার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও সোমবার ভোর হতেই এর তীব্রতা বাড়তে থাকে। বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় ঝড়ো বাতাস। এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকার দোকান, বাসাবাড়ি ও অলিগলির রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২০৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর, চকবাজার, ডি সি রোড, কে বি আমান

আলী রোড, বাকলিয়া, দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, প্রবর্তক মোড়, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, এম এম আলী রোড পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া হালিশহর, শুলকবহর, মির্জাপুল, ওয়াসা মোড়, তিন পোলের মাথা, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকাও পানিতে তলিয়ে যায়।

জলাবদ্ধতার কারণে অনেকে কর্মস্থলে যেতে পারেননি। আবার অনেকে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানিও জমেছে। কোথাও কোমর সমান। অনেককে আবার এই পানি মাড়িয়ে কর্মস্থলে ছুটতে দেখা গেছে। বিঘ্নিত হয় বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য।

প্রবর্তক মোড় এলাকায় দেখা যায়, কোমর সমান পানি ঠেলে রিকশা টেনে নিচ্ছেন চালকরা। পথচারীরা কেউ কেউ সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে হেঁটে মোড় পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও সেই আইল্যান্ডও ডুবে আছে পানিতে। বিভিন্ন এলাকার খাল ও নালা উপচে পানি বয়ে যাচ্ছে সড়কের ওপর দিয়ে।

মুরাদপুরের ষোলকবহর এলাকার বাসিকা গিয়াস উদ্দিন কাজ করেন একটি গার্মেন্টসে। তিনি বলেন, 'রাস্তায় হাঁটুর কাছাকাছি পানি উঠে গেছে। কিন্তু এর মধ্যে অফিসে যেতে হয়েছে, কিছু করার নেই।'

চকবাজারের কে বি আমান আলী রোডের বাসিন্দা ইলিয়াছ হোসেন বলেন, 'আমি নিচতলায় ভাড়া থাকি। সকাল হতেই ঘরে পানি ঢুকেছে। এজন্য অফিসেও যেতে পারিনি।'

এাছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নগরের উপকূলীয় এলাকা পতেঙ্গার আকমল আলী রোড সংলগ্ন জেলেপাড়া অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। এতে সেখানকার প্রায় ৩০০ পরিবার দুর্ভোগে পড়ে বলে জানা গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল দুর্বল হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে দেওয়া ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই চার বন্দরে এখন ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত চলছে।

এ বিষয়ে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা এমএইচএম মোসাদ্দেক বলেন, 'প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে চট্টগ্রামের ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী দুই দিন টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও পাহাড় ধস হতে পারে।'

১৮ ঘণ্টা পর বঙ্গবন্ধু টানেল চালু

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার পর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল খুলে দেওয়া হয়েছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় এটি খুলে দেওয়া হয়।

এদিন সকাল ৬টায় বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগায় বেলা সাড়ে ১১টায় এটি খোলা হয়। অর্থাৎ ১৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর খুলল টানেলের দ্বার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উপপ্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে টানেলটি প্রায় ১৮ ঘণ্টা বন্ধ রাখার পর সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামে বিমান ওঠানামা শুরু

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৭ ঘণ্টা পর ফ্লাইট ওঠানামা শুরু হয়েছে। সোমবার ভোর ৫টা থেকে বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু করা হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে রোববার দুপুর ১২টা থেকে সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছিল ফ্লাইট ওঠানামা।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সোমবার ভোর ৫টা থেকে যথারীতি নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করেছে। এয়ারফিল্ড এবং রানওয়ের সব ন্যাভিগেশন সাপোর্টসহ দৃঢ়ভাবে সক্রিয় রয়েছে।

এর আগে, আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রামে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রোববার দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ৮ ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় সময় বাড়িয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত ১৭ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়।

বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু

এছাড়া বিপদ সংকেত কেটে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বন্দর জেটিতে জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস এবং ডেলিভারির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার দুপুরের পর থেকেই বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া জাহাজসমূহকে বন্দর জেটিতে ফিরিয়া আনার কার্যক্রম শুরু হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রেক্ষিতে বন্দর নিরাপদ রাখতে বন্দর জেটি থেকে ১৯টি জাহাজ গভীর সমুদ্রের বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ কেটে যাওয়ার পর জাহাজগুলোকে ক্রমান্বয়ে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে