সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যাকান্ডের সেই স্থান দেখালেন দুই দেশে গ্রেপ্তার চার আসামি। সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটে এ সময় ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ প্রতিনিধি দলের সামনে ঢাকা থেকে ভিডিওকলে যুক্ত করা হয় আমানুলস্নাহ আমান ওরফে শিমুলসহ গ্রেপ্তার তিনজনকে। ফ্ল্যাটের কোথায়, কীভাবে হত্যা করা হয়, মরদেহ কীভাবে খন্ড খন্ড করা হয়, কীভাবে বাইরে নেওয়া হয় তারা সবই বর্ণনা করেন। সোমবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র এ তথ্য জানায়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার তিন আসামি আমানুলস্নাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ও সিলিস্তি রহমান। তদন্তের স্বার্থে এই তিন আসামির
সঙ্গে কলকাতায় গ্রেপ্তার কসাই জিহাদের ভিডিওকলে এ কথোপকথন হয়। মূলত শিমুল ভূঁইয়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় যেসব তথ্য দিয়েছেন সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কসাই জিহাদকে ভিডিওকলে নেওয়া হয়।
এ ছাড়া মরদেহের খন্ডাংশ ফেলার স্থান কসাই জিহাদ যেখানে দেখিয়েছেন আদৌ ঘটনাস্থল এক কি না সে বিষয়েও কথা হয়। ভিডিওকলে তাদের কথোপকথনের সময় উপস্থিত ছিলেন ভারতে অবস্থানরত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তিন সদস্যের দল ও কলকাতা পুলিশের কর্মকতারা।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জিহাদ হত্যাকান্ডের শুরু থেকে দেহাংশ ফেলা পর্যন্ত সবকিছু জানে। এজন্য তার সঙ্গে ভিডিওকলে কথোপকথন হয়েছে ঢাকায় গ্রেপ্তার তিন আসামির। উভয়েই নতুন চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।
ভিডিওকলে ফ্ল্যাটের হত্যাকান্ডের স্থান, মাংস থেকে হাড় আলাদা করার জায়গা ও বেরিয়ে যাওয়ার স্থানসহ প্রত্যেকটি স্থানের বর্ণনা দেন আমানুলস্নাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া। প্রায় একই কথা জানান কসাই জিহাদও।
ডিবির কর্মকর্তারা জানান, ভারতীয় পুলিশের উপস্থিতিতে কসাই জিহাদকে নিয়ে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটে যান ডিবির প্রতিনিধি দল। আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহ কীভাবে খন্ড খন্ড করা হয় তার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন কসাই জিহাদ। এসময় ডিবির প্রতিনিধি দল কসাই জিহাদকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জিহাদকে ওই ফ্ল্যাটে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখালে তিনি সবকিছু স্বীকার করেন।
অপহরণ মামলার তদন্ত ও মরদেহ উদ্ধারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত দল রোববার সকালে কলকাতায় যায়। প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো. আব্দুল আহাদ ও এডিসি শাহীদুর রহমান।
এদিকে সোমবার বেলা দুইটা পর্যন্ত হত্যাকান্ডের ১৪ দিন পার হলেও এমপি আনারের টুকরো টুকরো করা দেহের কোনো অংশই উদ্ধার হয়নি। খুনে ব্যবহার করা চাপাতিসহ অন্য ধারালো অস্ত্রও উদ্ধার করা যায়নি। আলামত উদ্ধারে কলকাতা পুলিশ ময়লার ভাঁগাড়, খাল ও ডোবায় গত কয়েকদিন ধরেই তলস্নাশি চালাচ্ছে।
অন্যদিকে পুলিশ রিমান্ডে থাকা তিন আসামির জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িত আরও কয়েকজনের সম্পৃক্ততার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তারা দেশ-বিদেশে অবস্থান করছেন। তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাদের গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, 'সঞ্জীবা গার্ডেন থেকে ঢাকায় রিমান্ডে থাকা কিলার শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুলস্নাহ আমানকে ভিডিওকলে যুক্ত করা হয়। কীভাবে খুন করা হয়েছে, মরদেহ কোথায় টুকরো টুকরো করা হয়েছে তা ভিডিওকলে বিস্তারিত দেখান শিমুল ভূঁইয়া। খুনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আমরা পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তদন্তে কী পেয়েছি তারা কী পেয়েছে, সেই তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। এ ছাড়া কসাই জিহাদ হাওলাদারের সঙ্গে কথা বলেছি।'