স্বর্ণের সন্ধান

ঠাকুরগাঁওয়ের সেই ইটভাটায় ১৪৪ ধারা জারি

প্রকাশ | ২৭ মে ২০২৪, ০০:০০

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে দুই ধাপে প্রায় ২০ দিন ধরে খোঁজাখুঁজির পরও কোনো স্বর্ণ পাওয়ার নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। অবশেষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। শনিবার রাত থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রকিবুল হাসান এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশ দেন। এদিকে শনিবার রাত ও রোববার সকাল থেকে মাইকিং করে এই আদেশের কথা জনসাধারণকে জানানো হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশের পাহাড়া বসানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রানীশংকৈল থানার পাঁচ নম্বর বাচোর ইউনিয়নের অন্তর্গত কাতিহার বাজারের উত্তর পার্শ্বে রাজোর গ্রামে মো. রুহুল আমিনের মালিকানা আরবিবি ইটভাটায় মাটির স্তূপ খুঁড়ে স্বর্ণ পাওয়া যাচ্ছে- এমন খবরে স্থানীয়সহ আশপাশের অসংখ্য মানুষ বেশ কিছুদিন ধরে খুন্তি, কোদাল ইত্যাদি দিয়ে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেন। প্রতিদিন সেই স্থানে তারা স্বর্ণের সন্ধান করছে। ফলে আগ্রাসী লোকজন স্বর্ণ পাওয়ার আশায় ঝগড়া-বিবাদ, কলহ ও দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছে। এতে আরও উলেস্নখ করা হয়, প্রতিদিন জনগণ মাটি খুঁড়ে স্বর্ণের সন্ধান করতে থাকলে যে কোনো সময় ঘটনাস্থলে মারামারি, খুন, জখমসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইটভাটা এলাকা ও এর আশপাশে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার কাতিহার আরবিবি ইটভাটায় গত কয়েকদিন ধরে চলছে মাটি খনন প্রতিযোগিতা। গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ কোদাল নিয়ে ভাটার ইট তৈরির জন্য স্তূপ করে রাখা মাটি খুঁড়ে খুঁজছেন স্বর্ণ। তাদের মধ্যে শ্রমিক শ্রেণির মানুষই বেশি। অতিরিক্ত গরমে অনেকেই অসুস্থও হয়ে পড়েন। এতে থমকে গেছে ইটভাটার কার্যক্রম। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, স্বর্ণের লোভে অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, শুনেছি অনেকেই স্বর্ণ পেয়েছেন, কিন্তু আমরা পাইনি। এই গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে যে, যারা পাচ্ছে, সেটা সরকার জানলে নিতে পারে- এই ভয়ে প্রচার করছে না। ইটভাটার ম্যানেজার আসাদুজ্জামান লিটনের অভিযোগ, ইটভাটা বন্ধ করার উদ্দেশে এলাকায় স্বর্ণের খনি আছে- এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই মেলেনি। প্রাচীন মন্দিরের আশপাশে এরকম স্বর্ণ পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা। তবে কারও স্বর্ণ পাওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাননি বলে জানান ইতিহাসবিদ ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রকিবুল হাসান জানান, পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় উন্মাদনা বন্ধ হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জেলাবাসীর উদ্দেশে বলেন, 'আমাদের এই জেলা সম্পূর্ণ বন্যামুক্ত একটা জেলা। যেখানে মাটিতেই সোনা ফলে, সেখানে মনোযোগ দিয়েই অনেকে গাড়ি-বাড়ি-সোনাদানার মালিক হয়েছেন। সোনার হরিণের পেছনে তাই এই ছোটাছুটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। পরিশ্রম ও বিদ্যা-বুদ্ধি-মেধা নিয়োগ করেই সম্পদ অর্জন করতে হবে।'