শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী সংকট

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী সংকট

দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো চরম শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে বলে জানিয়েছে মেডিকেল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। এ অবস্থার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অটোমেশন নীতিকে দায়ী করছেন তারা। এছাড়া বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস-বিডিএস কোর্সে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমছে। গত তিন বছর ধরে কমতে কমতে এবার শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৪৫ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশেষ করে সর্বোচ্চ শিক্ষার্থীর দেশ ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়েছে।

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) আয়োজিত 'বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় চলমান শিক্ষার্থী সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা' শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য উঠে আসে।

বেসরকারি মেডিকেল মালিকরা বলছেন, ২০২৩-২৪ সালে চলতি শিক্ষাবর্ষে দেশের ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ও ২৬টি ডেন্টাল কলেজে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী ৬ হাজার ২০৭টি আসনের মধ্যে প্রায় এক হাজার ২০০ আসন এখনো খালি আছে। অনেক ভালো ভালো কলেজেও দেশি-বিদেশি এবং অসচ্ছল ও মেধাবী কোটায় আসন শূন্য রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজে মোট আসনের ৪৫ শতাংশ হিসেবে বিদেশি শিক্ষার্থীর আসন রয়েছে ২ হাজার ৭৯০টি। এর মধ্যে বেসরকারি কলেজে আবেদন করেছেন ১ হাজার ৪৮৯ জন। প্রতি বছর যেখানে গড়ে দুই হাজারের মতো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন সেখানে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় এখনো ৫০০-৬০০ আসন খালি আছে। অর্থাৎ মোট আসনের ৫০-৬০ শতাংশ ভর্তি হয়েছে, ৪০ শতাংশ খালি আছে।

তারা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পদ্ধতিগত ভুলের কারণে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। অটোমেশনের নামে প্রাইভেট মেডিকেল সেক্টর ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র

চলছে। চলতি বছর এক হাজার ২০০ সিট খালি রয়েছে। গত দুই বছর মেডিকেলগুলোর ২০ শতাংশের ওপর সিট খালি ছিল। এমনকি গরিব ও মেধাবী কোটাতেও শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। একই কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে গেছে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোয়াজেম হোসেন বলেন, 'দেশে ভারতের সবচেয়ে বেশি মেডিকেল শিক্ষার্থী ১২ হাজার অধ্যয়ন করছে। এ থেকে আমাদের ২ হাজার কোটি টাকা আয় হচ্ছে। অসচ্ছল ও মেধাবী কোটায় ৩১০ আসন থাকলেও আমরা পাচ্ছি না।'

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, অটোমেশন নতুন কিছু নয়। এটি আগেও ছিল। আমি নিজে পাকিস্তান আমলে ঢাকা মেডিকেলে আবেদন করতে পারিনি। কারণ আমার রেজাল্ট কিছুটা কম ছিল। আমাদের মেট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েটের রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে ভাইভা হতো। তাই শুধু অটোমেশনের জন্য শিক্ষার্থী আসছে না, তা হতে পারে না। এর অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।

মানোন্নয়নের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কোয়ালিটি মেনে পরিচালনা করতে হবে। হাসপাতালে রোগী ও শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রেও নিজের কোয়ালিটি বিবেচনা করতে হবে। কারণ তারা এখানে অর্থ ব্যয় করে জ্ঞান অর্জন করতে আছে। কোয়ালিটি মেইনটেইন না হলে এ সেক্টরে থাকার প্রয়োজন নেই। এই কোয়ালিটি আমি শিক্ষার্থী, রোগী সেবা ও শিক্ষক নিয়োগেও দেখতে চাই। দুই ক্ষেত্রেই চাই। একটি মেডিকেল করতে হলে আগে হাসপাতাল তৈরি করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) সভাপতি এম এ মুবিন খান বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সেক্টর ধ্বংস করার নীলনকশা করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে- প্রতিষ্ঠান গড়া কঠিন, ধ্বংস করা সহজ। প্রাইভেট সেক্টরে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা নিজের চয়েজমতো ভর্তি হবেন। কিন্তু অটোমেশনের কারণে তারা তা পারছেন না। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবাই হতাশ। হাত-পা বেঁধে পানিতে সাঁতার কাটতে দেওয়ার মতো অবস্থায় অটোমেশন। যার জন্য এই পেশায় আসতে শিক্ষার্থীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ হাবিবুল হক বলেন, অটোমেশন পদ্ধতিটি অন্য দেশ থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি নিজেদের ক্ষেত্রে প্রয়োগের বিষয়ে অন্য দেশের পরিস্থিতি আর আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয়নি। অন্য দেশে এক আসনের বিপরীতে ১০ জন পরীক্ষা দেয়। সেখানে অটোমেশন প্রয়োজন। আমাদের দেশে তো সে রকম না। এখানে কয়েকটা সিটের বিপরীতে একজন প্রার্থী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে