চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণ শুরু, আতঙ্কে উপকূলবাসী

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০

চট্টগ্রাম অফিস
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রেমালে রূপ নিয়ে ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। আজ সন্ধ্যার পর এটি উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এ সময় উপকূলবর্তী এলাকায় ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছেন তারা। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসার খবরে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুন্ড, সন্দ্বীপ, মিরসরাই উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অন্যদিকে, শনিবার দুপুরের পর থেকেই চট্টগ্রামের কোথাও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আবার কোথাও শুরু হয়েছে ভারী বর্ষণ। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সাগর। আনোয়ারা উপকূলবর্তী জুঁইদন্ডি এলাকার ফরিদুল আলম বলেন, 'অতীতের সবকটি ঘূর্ণিঝড়ের সময় জুঁইদন্ডির বিস্তীর্ণ এলাকা উঁচু জলোচ্ছ্বাসে ডুবে গিয়েছিল। এবারও সেই আতঙ্ক বিরাজ করছে মানুষের মনে। জলোচ্ছ্বাস হলে এলাকার অনেক অপরিপক্ব বোরো ধান নষ্ট হয়ে যাবে। নষ্ট হবে শত শত একরের সবজি ক্ষেত। মারা যাবে গরু-ছাগল। এ ছাড়া এই উপকূলের অনেক মানুষ মাছ ধরতে গিয়ে এখনো সাগর থেকে ফেরেনি। তাদের ভাগ্য কী হবে- এ নিয়ে মানুষ বেশ চিন্তিত।' সীতাকুন্ড উপকূলের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা দিদার আশরাফ জানান, উপজেলার প্রায় ২৪ কিলোমিটার উপকূলে অনেক চাষাবাদ হয়েছে। রয়েছে সবজি ক্ষেত। যা ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন এলাকার মানুষ। আগের সবকটি ঘূর্ণিঝড়ের সময় উপকূল অরক্ষিত থাকলেও এবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ফলে অনেকটা সুরক্ষিত। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় যদি প্রবল আঘাত হানে ওই বাঁধও ভেঙে যেতে পারে। আর জলোচ্ছ্বাস হলে ফসল ও প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন উপকূলবাসী। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত থেকে জানমাল রক্ষায় উপকূলীয় পাঁচ উপজেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৮৮ আশ্রয়কেন্দ্র ও সাত হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ইতোমধ্যে ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রাথমিক চাহিদা মেটানোর জন্য ১৫টি উপজেলায় ত্রাণ হিসেবে চাল ও টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে এবং পাহাড়ধস এড়াতে পাহাড়ি এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রত্যেক মসজিদে জুমার নামাজের বয়ানে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে বলার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সব ইমামকে বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।' প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিদ্রম্নত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়। শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ ৭ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে এসব নির্দেশনা পেয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বলে জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সচিব ওমর ফারুক বলেন, তিন নম্বর সংকেত দেখাতে বলার পর ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। বন্দরের স্টান্ডিং কমিটির মিটিং ও অন্য বিষয়ে বিভিন্ন কমিটিকে অ্যালার্ট করা হচ্ছে। সব ধরনের লাইটার জাহাজকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হচ্ছে। ৫নং সংকেত দেখাতে বললে জেটিতে থাকা জাহাজ বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পাউবোর ছুটি বাতিল, কন্ট্রোল রুম চালু সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সংস্থাটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সেজন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রিন রোডের পানি ভবনের লেভেল-২ এবং কক্ষ নম্বর ২১৪-এ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যার কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চলবে। এর সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন দপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়া। এদিকে, রেমালের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। আকাশে সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত থাকার পাশাপাশি দমকা হাওয়াসহ ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে বাড়ছে বাতাসের গতিও।