সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১

উপকূলে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রবন্দরে সতর্কতা জারি

ক্ষতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ
যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ মে ২০২৪, ০০:০০
উপকূলে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রবন্দরে সতর্কতা জারি

উপকূলে ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। এটি রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। আর আঘাত হানার সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার থাকতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি)। সংস্থাটি জানায়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি শুক্রবার দুপুরে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আজ সকালে আরও ঘনীভূত হয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসায় আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত জারি করেছে। একইসঙ্গে মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলে থাকতে বলেছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি ধীরে ধীরে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বন্দরের সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিয়েছে।

শুক্রবার বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মলিস্নক বলেন, 'বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি চট্টগ্রাম থেকে ৮০৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।'

ভারতের আবহাওয়া দপ্তর থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার কথা বলা হলেও আবহাওয়া বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট করে বলা হচ্ছে এটি ভারতের ওড়িশা অথবা বাংলাদেশের উপকূলের ওপর দিয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অফিস বলেছে, ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানা শুরু করতে পারে রোববার বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে রাত আড়াইটার মধ্যে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এ কারণে দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তাদের গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

নিম্নচাপের প্রভাবে শুক্রবার পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল দেখা গেছে। আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন ছিল। উপকূলের বিভিন্ন স্থানে বাতাসের চাপ কিছুটা বেড়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদ-নদীর পানির উচ্চতা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। তবে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রচুর ভ্যাপসা গরম অনুভূত হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে কতটা শক্তিশালী হবে, এর গতিবেগ কত হতে পারে, সম্ভাব্য আঘাত হানার এলাকা ও সময় কোনটি হতে পারে, এটি কোন ধরনের ঘূর্ণিঝড় হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

তাদের ধারণা, 'রেমাল' যদি আসে, তবে বাংলাদেশের সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনা ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার উপকূলের দিকেই আঘাত হানতে পারে। এর বিস্তৃতি অপেক্ষাকৃত বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. শামীম আহসান বলেন, 'এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়নি। গাণিতিক মডেলগুলো বলছে, এটি সৃষ্টি হলে তা বাংলাদেশের উপকূলের দিকেই আসতে পারে। এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার হতে পারে।'

আরেক আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মলিস্নক বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয় তখন তাকে 'ঘূর্ণিঝড়' বা 'ট্রপিক্যাল সাইক্লোন' বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয় তখন তাকে 'প্রবল ঘূর্ণিঝড়' বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয় তখন সেটিকে 'অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়' বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তা হয় 'সুপার সাইক্লোন'।

তিনি বলেন, 'রেমাল আঘাত হানলে তা প্রবল থেকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। তবে 'সুপার সাইক্লোন' হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।'

ঘূর্ণিঝড়ে কখন আঘাত হানতে পারে তা এখনো সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না বলে উলেস্নখ করে আবহাওয়াবিদ মো. শামীম আহসান বলেন, 'ধারণা করা হচ্ছে, এটি আগামী রোববার রাতের মধ্যে আঘাত হানতে পারে।'

তবে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ দুপুরের দিকেই আসতে পারে বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মলিস্নক।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের (আইডবিস্নউএফএম) অধ্যাপক এ কে সাইফুল ইসলাম মনে করেন, ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে উপকূলের অনেক বড় এলাকাজুড়ে। এতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হওয়ারও আশঙ্কাও করছেন তিনি। বাংলাদেশের উপকূলই এখন পর্যন্ত রেমালের সম্ভাব্য আঘাতস্থল। তবে দেশের সর্বত্রই এর প্রভাব দেখা যেতে পারে। সেই প্রভাব বোঝা যাবে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার মধ্য দিয়ে।'

২০২০ সালে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়। সেখান থেকেই এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়নি। যখন এই ঘোষণা আসবে তখনই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এ নিম্নচাপটিকে ?ঘূর্ণিঝড় 'রেমাল' হিসেবে অভিহিত করা হবে।

মোকাবিলায় প্রস্তুত চট্টগ্রাম বন্দর

খোরশেদুল আলম শামীম, চট্টগ্রাম থেকে জানান, বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে এজন্য এর গতিপ্রকৃতি ও ধরন নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এটি আঘাত হানলে সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে বন্দর কর্মীদের। ইতোমধ্যে বন্দর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কর্মীদের প্রস্তুত থাকার জন্য।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে। এর জন্য সম্ভাব্য সবদিক বিবেচনা করে প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রামের সব সরকারি-বেসরকারি বিভাগ।

চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি কনজাভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। যদি ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে আসে তাহলে সম্ভাব্য মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে বন্দর। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছি। এছাড়া কর্মীদের টেনিংয়ের মাধ্যমে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে