চরমপন্থি নেতা শিমুলই হলেন আমানুলস্নাহ

প্রকাশ | ২৪ মে ২০২৪, ০০:০০

খুলনা অফিস
'আমানুলস্নাহ' ছদ্মনামে শিমুল ভূঁইয়াই আলোচিত ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মূল হত্যাকারী। তিনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-জনযুদ্ধ) অন্যতম শীর্ষ নেতা। এখনো খুলনার অপরাধ জগতে আতঙ্কের নাম শিমুল ভূঁইয়া। তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বর্তমানে খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য। আর ভাই শরীফ মোহাম্মদ ভূঁইয়া (শিপলু) খুলনার ফুলতলার দামোদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। এমপি আজিম খুনের ঘটনায় ঢাকায় ধরা পড়ার পর তিনি পুলিশের কাছে নিজেকে সৈয়দ আমানুলস্নাহ নামে পরিচয় দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা তথা দক্ষিণ জনপদের নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি দল এমএল জনযুদ্ধের প্রধান শিমুল ভূঁইয়া। এ অঞ্চলের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হত্যার মাস্টার মাইন্ড তিনি। নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সন্ত্রাসী দলটির কার্যক্রম না থাকলেও আঞ্চলিক নেতা শিমুল ভূঁঁইয়া নানা কৌশলে দলটির কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। বছরের পর বছর ধরে সংগঠিত করে রেখেছেন সংগঠনের মতাদর্শীদের। টাকার লোভে এদের অনেকে ভাড়াটে খুনি তার গ্রম্নপের কিলিং মিশনে কাজ করছে। দক্ষিণাঞ্চলে শিমুল ভূঁইয়ার ইশারায় বেশ কিছু রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ আছে। তিনি বছরের পর বছর আত্মগোপনে থেকে অনুসারীদের দিয়ে এসব হত্যাকান্ড বাস্তবায়ন করেন। ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বৃহস্পতিবার বলেন, 'এমপি আনোয়ারুল আজিমকে হত্যার পরিকল্পনা চলছিল দু-তিন মাস ধরে। মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহিনের গুলশান ও বসুন্ধরার দু'টি ফ্ল্যাটে একাধিক বৈঠক করেছিল হত্যাকারীরা।' আর এই মামলায় আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, 'এই খুনের বিভিন্ন পর্যায়ে চরমপন্থি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা রয়েছেন। শিমুল ভূঁইয়াকে যিনি ভাড়া করেছেন, সেই আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-লাল পতাকা) শীর্ষ নেতা ডা. মিজানুর রহমান ওরফে টুটুলের আত্মীয়। মিজানুর রহমান ২০০৮ সালে পুলিশের সঙ্গে এক 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হন। চরমপন্থিদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল খুলনার একটি সূত্র বলছে, আমানুলস্নাহ নামে এক চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়ার অন্যতম সহযোগী ছিলেন। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, শিমুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে খুনসহ অন্তত দুই ডজন মামলা আছে। গণেশ নামের এক ব্যক্তিকে খুন করে যশোরের অভয়নগর থানার এক মামলায় আমানুলস্নাহ সাত বছর (১৯৯১-৯৭) জেল খাটেন। ইমান আলী নামের এক ব্যক্তিকে খুনের ঘটনায় ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জেল খাটেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কলকাতার নিউ টাউনের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্যকে খুন করে ১৫ মে দেশে ফেরেন আমানুলস্নাহ পরিচয় দেওয়া শিমুল ভূঁইয়া। পরে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন যে আনোয়ারুলকে তারা খুন করেছেন। এই খুনের জন্য আনোয়ারুলের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিনের সঙ্গে তার চুক্তি হয়। আনোয়ারুলের সঙ্গে আক্তারুজ্জামানের সোনা চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথ্য পাচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজিমকে খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সৈয়দ আমানুলস্নাহ নামে পরিচয় দানকারী কুখ্যাত এই সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়া।