শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১
জামিনের মেয়াদ বাড়ল

আমি কারও কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করিনি :ইউনূস

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ মে ২০২৪, ০০:০০
আমি কারও কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করিনি :ইউনূস

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় ৬ মাস দন্ডিত নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের জামিন আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার কাকরাইলে শ্রম আপিল ট্রাইবু্যনালের বিচারক এমএ আউয়াল আগামী ৪ জুলাই শুনানির পরবর্তী দিন রেখে ওইদিন পর্যন্ত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

এদিন বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত শ্রম আপিল ট্রাইবু্যনালে জামিন নিতে আসেন ড. ইউনূস। জামিন আবেদন শেষে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি কারও কোনো ক্ষতি করিনি বা ক্ষতি করার চেষ্টাও করিনি।

তা হলে কেউ কী ভাবছেন যে, আপনি ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ইউনুস বলেন, আমি তো তাদের মাথার মধ্যে ঢুকিনি।

ড. ইউনূস বলেন, এখানে এসে আমরা অপেক্ষা করছিলাম তখন একজন বিদেশি এসেছেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। তিনি বললেন, আমি ব্যবসা করি, বাংলাদেশের সঙ্গে আমার ব্যবসা আছে, এটা বলে আমার হকাছে নানা দিক থেকে পরামর্শ চাইলেন। এই যে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, ব্যবসাকে উদ্বুদ্ধ করা, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষও আমার কথা গ্রহণ করছেন। এই একটা লেভেলে আমরা আসতে পেরেছি। এ ছাড়া আরও কাজ করতে পারতাম যদি না এসব টানাহেঁচড়ের মধ্যে পড়তাম। তার পরও জীবনে যা করার তা করার চেষ্টা করেছি। শেষ বয়সে এসেও আরও করতে চেয়েছিলাম, তবে সেই সুযোগ আমাকে দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমাকে নানাভাবে টানাহেঁচড়ার মধ্যে রাখা হচ্ছে। নতুন কিছু করতে পারলে অন্য দেশের মানুষ বলত এটা বাংলাদেশ থেকে আমরা শিখেছি। সেই সুযোগটা হলো না, এটাই দুঃখের বিষয়। এই দুঃখ থেকে যেন আমি মুক্তি পেতে পারি, সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।

আপনার কথা অনুযায়ী, আপনি দেশের জন্য কাজ করছেন, তাহলে আপনার প্রতি বিদ্বেষ কেন? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আপনি যেমন আগ্রহ নিয়ে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন, ঠিক সেভাবেই আমিও আপনাদের কাছে এর উত্তর জানতে চাইলাম। কে আমার ওপর রাগ করল, কেন রাগ করল এটা আমি জানি না। এত রাগ করল যে আমাকে কাজকর্ম থেকে বিচু্যত করে দিতে হবে, আমাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দিতে হবে ইত্যাদি, ইত্যাদি। কী সেই রাগের কারণ, এটা আমারও প্রশ্ন?

এদিকে, গত ১৬ এপ্রিল এ মামলার চার আসামিকে ২৩ মে পর্যন্ত জামিন দিয়েছিল শ্রম আপিল ট্রাইবু্যনাল। সেই মেয়াদ শেষে নতুন করে জামিন চাইতে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হন ইউনূস।

আদালতে ইউনূসের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন আবদুলস্নাহ আল মামুন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দিয়ে গত ১ জানুয়ারি রায় দেয় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত।

সাজাপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

মামলাটিতে ইউনূসের সাজা হওয়ার পর দেশের পাশাপাশি প্রতিক্রিয়া এসেছে বিদেশ থেকেও। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন ইউনূসসহ চারজন। শ্রম আপিল ট্রাইবু্যনাল ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে এবং তৃতীয় শ্রম আদালতের দেওয়া রায় ৩ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করে চারজনকে জামিন দেয়। এর পর থেকে জামিনের মেয়াদ মামলার তারিখে তারিখে বাড়ানো হচ্ছে।

এর মধ্যে শ্রম আদালতের রায় ও আদেশ স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইবু্যনালের আদেশের অংশবিশেষের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা করেন কলকারখানা অধিদপ্তরের আইনজীবী। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৫ ফেব্রম্নয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়।

শ্রম আপিল ট্রাইবু্যনালের সেই আদেশ কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। ইউনূসসহ চারজন এবং রাষ্ট্রের পক্ষে ঢাকার জেলা প্রশাসকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।

মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করার অভিযোগ আনা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে