রাজনীতিতে যেভাবে উত্থান

আনোয়ারুল আজিমের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মধুগঞ্জ বাজার এলাকায়। টানা তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে তিনি এমপি নির্বাচিত হন

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মধুগঞ্জ বাজার এলাকায়। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। টানা তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। বুধবার সকালে ভারতের কলকাতার নিউটাউন এলাকায় খুন হয়েছেন আনার। তার মৃতু্যতে রাজনৈতিক জীবনের নানা ঘটনা উঠে আসে সহযোদ্ধা ও কর্মীদের আলোচনায়। তার বাবার নাম ইয়াকুব আলী ও মাতার নাম জহুরা খাতুন। বাবা-মা দুইজনই গত হয়েছেন। চার ভাই, ছয় বোনের অষ্টম সন্তান তিনি। এমপি আনার জেলার কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ রোড়স্থ বাড়িতে বসবাস করতেন। তার রয়েছে দুই মেয়ে ও স্ত্রী। ১৯৮৪ সালে শহরের নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৮৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন শহরের মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজ থেকে। একই কলেজ থেকে ১৯৯০ সালে স্নাতক পাস করেন। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। অল্প বয়সে তিনি এই অঞ্চলের একজন জনপ্রিয় খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। ১৯৯৩ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে কমিশনার নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৪ সালে একই পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এ সময় তিনি রাজনৈতিক ঝামেলায় দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে ছিলেন। একই বছর ভারতে পালিয়ে থাকা অবস্থায় কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০০-২০০৮ সাল পর্যন্ত তার নামে ২১টি মামলা হয়। এরমধ্যে তিনটি হত্যা, তিনটি স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্ট, ১০টি বিস্ফোরকদ্রব্য এবং পাঁচটি পেনাল কোর্ডের বিভিন্ন ধারায়। ২০০৮ সালে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় তার নাম ওঠে। পরে ২০০৮ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০৯ সালে আনার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় ইন্টারপোলের তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করা হয়। ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮-২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে টানা তিনবার নির্বাচিত হন। শেষবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাঁচ মাস পর ঘাতকের হাতে হত্যার স্বীকার হলেন তিনি। কথিত আছে, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার এক সময় দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থিদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৯৮৬ সালের দিকে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে আনার মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। ভারতের বাগদা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের বাঘাভাঙ্গা সীমান্ত পথে চোরাচালান করতেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানের কাজ করতেন। নিহত সংসদ সদস্য পুলিশের তালিকায় বিভিন্ন মামলার আসামি থাকলেও স্থানীয় জনগণের কাছে একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। টানা তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নে কাজ করেছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তার বেশ সুনাম ছিল। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা শুনতেন ও সমাধান করতেন। সাধারণত তিনি চলাচলের সময় পুলিশ প্রটোকল ব্যবহার না করে একা একা চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। সব থেকে আলোচিত বিষয়, তার নির্বাচনী এলাকায় যে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার বাড়িতে পৌঁছে শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতেন। এমনও হয়েছে, তিনি একদিনে ১০ জন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি পাঁচ সহস্রাধিক মৃত ব্যক্তির দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। যা দেশের একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিরল বলে উলেস্নখ করেছেন তার নেতাকর্মীরা। প্রসঙ্গত, গত ১২ মে রোববার দুপুরে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য দর্শনার গেদে বন্দর দিয়ে ভারতে যান। বুধবার সকালে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, কলকাতার নিউটাউন এলাকার অভিজাত আবাসন সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে ভারতীয় পুলিশ।