শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১
উপজেলা নির্বাচন

দ্বিতীয় ধাপেও ভোটের খরা

৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়তে পারে :সিইসি চট্টগ্রামে দফায় দফায় সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি
যাযাদি ডেস্ক
  ২২ মে ২০২৪, ০০:০০
ভোটারশূন্য কেন্দ্রের বাইরে বসে অলস সময় পার করছেন দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। ছবিটি মঙ্গলবার পঞ্চগড়ের বোদা থানার ৫১নং জামাদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তোলা -স্টার মেইল

ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে কম ভোটের রেকর্ড হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে ভোটগ্রহণ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনে ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়তে পারে। প্রথম দফার নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৩৬ শতাংশ। ১৯৮৫ সালে দেশে প্রথম উপজেলা নির্বাচন এবং ১৯৯০ সালের উপজেলা নির্বাচনের ভোটের হারের সঠিক তথ্য জানা না গেলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই দুই নির্বাচনে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের দুই ধাপের চেয়ে অনেক বেশি ভোট পড়েছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এ নিয়ে চতুর্থবার উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। সে সময় ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এরপর ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১ শতাংশ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল। মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচনী এলাকায় বিচ্ছিন্ন সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, পুলিশের ফাঁকা গুলি, গ্রেপ্তার, কারাদন্ড প্রদান, প্রার্থীদের ভোট বর্জন, জাল ভোট প্রদান, কর্মকর্তা প্রত্যাহার, সাংবাদিকদের ওপর হামলাসহ নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশের ১৫৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। ভোটগ্রহণ শেষে বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভোটের হার ৩০ শতাংশের বেশি হতে পারে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচন মোটামুটি ভালোই শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় ভোট দিতে না পারা এবং ইভিএমের কারণে ভোট প্রদানে ধীরগতির অভিযোগও ওঠে। কয়েকটি কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তা প্রত্যাহার এবং নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা অপরাধে কয়েকজনকে জেল-জরিমানা করা হয়। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ভোট দিতে এসে দু'জন ভোটারের মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে, প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপের ভোটেও ভোটারের উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ১৮২৪ জন প্রার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান ৬০৩, ভাইস চেয়ারম্যান ৬৯৩ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২৮ জন। নির্বাচনে ভোটার ৩ কোটি ৪২ লাখ। ভোটকেন্দ্র ১৩ হাজার ১৬টি এবং ভোটকক্ষ ৯১ হাজার ৫৮৯টি। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৭ জন চেয়ারম্যানসহ ২১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এদিকে, ভোট শেষে মঙ্গলবার বিকালে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, 'দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে থাকতে পারে। ভোট পড়ার সুনির্দিষ্ট হার আগামীকাল (আজ) পাওয়া যাবে। ভোট কারচুপির চেষ্টা হয়েছে সেখানেই হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১০ জনকে তাৎক্ষণিক কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।' সিইসি জানান, যেখানে অনিয়ম হয়েছে, ভোট কারচুপির চেষ্টা হয়েছে সেখানেই হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১০ জনকে তাৎক্ষণিক কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে, জালভোট দেওয়ার জন্য। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ২:চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে দু'জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জন। উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের জোবরা পি পি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে মঙ্গলবার দুপুর থেকে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদের মোটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী রাশেদুল আলম ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী সোহরাব হোসেন নোমানের সমর্থকদের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। এ সময় দুই পক্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সোহরাব হোসেন নোমানের স্স্নিপ ক্যাম্প, চেয়ার, মোটর সাইকেল ভাঙচুর ও জোবরা রেললাইনে অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়। এ সময় মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এতে ঘোড়া প্রতীকের দুই সমর্থক গুলিবিদ্ধ হন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১৫ জন। হাটহাজারী থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, চেয়ারম্যান পদের মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী রাশেদুল আলম ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী সোহরাব হোসেন নোমানের সমর্থকদের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। এ সময় কেন্দ্রের বাইরে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়েন। ছুরিকাঘাতে যুবকের মৃতু্য :কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, নবগঠিত প্রথম ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী পশ্চিম মালমোরাপাড়া কেন্দ্রের বাইরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে ছপুর আহমদ (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। বিকাল ৪টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক টেলিফোন মার্কা প্রতীক চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু তালেবের কর্মী। এ ব্যাপারে ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভরঞ্জন চাকমা বলেন, 'ছুরির আঘাতে একজন নিহত হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।' কসবা-আখাউড়ায় ২২ জনের কারাদন্ড :স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, কসবা ও আখাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। এ ছাড়া আখাউড়ায় ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে দেবগ্রাম পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে পুলিশ পুকুর থেকে ব্যালট বাক্সটি উদ্ধার করে। জানা যায়, আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুরাদ হোসেন ভূঁইয়ার সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোলস্না ও তার ছোট ভাই শাহীন মোলস্না লোকজন নিয়ে পৌর শহরের ওই কেন্দ্রে ঢুকে একটি ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে তারা ব্যালট বাক্সটি পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে ফেলে দেন। পরে পুলিশ পুকুর থেকে ব্যালট বাক্সটি উদ্ধার করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তানভীর ফরহাদ শামীম। পরে তিনি ব্যালট বাক্সটি দেখে ভোট অক্ষত অবস্থায় থাকায় তা গণনার জন্য প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শাহ ইলিয়াস উদ্দিনকে নির্দেশ দেন। গাংনীতে পোলিং এজেন্টের কারাদন্ড : গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরের গাংনীতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর এক পোলিং এজেন্টকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলার চিতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের প্রভাবিত করার অপরাধে সাইদুল ইসলাম (৩৬) নামের ওই এজেন্টকে কারাদন্ড প্রদান করা হয়। দন্ডিত সাইদুল ইসলাম ওই গ্রামের লস্কর শেখের ছেলে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম জানান, দন্ডিতকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এজেন্টদের জেল-জরিমানা : গাজীপুর ও শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, ভোট গ্রহণ চলাকালে ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভোটদানে বাধা প্রদান, জাল ভোট প্রদানসহ নানা অভিযোগে তাদের ওই দন্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মো. হাসিবুর রহমান।

একজনের ২ বছরের সাজা : আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, প্রতিপক্ষ প্রার্থীর এজেন্টকে মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অপরাধে জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া (৪৫) নামে একজনকে ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সাজাপ্রাপ্ত জাহিদুল ইসলাম লক্ষ্মীবরদী এলাকার মৃত ছমিরউদ্দীন ভূঁইয়ার ছেলে। তাকে শৃভুপুরা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আটক করে এ সাজা দেওয়া হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামছুর রহমান তাকে এ সাজা প্রদান করেন।

দুর্গাপুরে সংঘর্ষ, আটক ১৪ : রাজশাহী অফিস ও দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি জানান, দুর্গাপুর উপজেলার গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পানানগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত নয়জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন ১৪ জন। আহতদের হাসপাতালে তিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ওসি খাইরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, পুঠিয়া উপজেলার হাড়ুখালী ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পর ফয়েজ উদ্দিন (৭২) নামের এক ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার বাড়ি হাড়ুখালী গ্রামে।

পুঠিয়া থানার ওসি সাইদুর রহমান বলেন, দুপুর ১১টার দিকে ফয়েজ উদ্দিন ভোট কেন্দ্র এসে ভোট দেন। এরপর বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।

জালভোট দেওয়ায় দুই যুবকের সাজা : রংপুর প্রতিনিধি জানান, মিঠাপুকুরের শঠিবাড়ি কলেজ কেন্দ্রে জালভোট দেওয়ার অভিযোগে দুই যুবককে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরা হলেন- মিঠাপুকুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের এমদাদ মিয়ার ছেলে রুমান মিয়া (২৭) ও সুলতান মিয়ার ছেলে রাশেদ মিয়া (২৮)।

মিঠাপুকুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘আটকদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে দশ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ নেতাকে কারাদণ্ড, প্রিসাইডিং অফিসার প্রত্যাহার : বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে চিতলমারীর চরবানিয়ারি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রফুল্ল কুমার মন্ডলকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অন্যদিকে একই অপরাধে ফকিরহাট উপজেলার হোচলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রতন কৃষ্ণ দাসকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের বুড়ির বটতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের গোপন কক্ষে একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তি প্রবেশ করায় ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অরবিন্দু বিশ্বাস এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফকিরহাটের ইউএনও সাজিয়া সিদ্দিকা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কুড়িগ্রামে রিকশাচালকের কারাদণ্ড : এদিকে দ্বিতীয়বার ভোট দিতে এসে আটক এক রিকশাচালককে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের থেতরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তাকে আটক করা হয় বলে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান। দণ্ডিত আবুল কালাম (৩৫) ওই ইউনিয়নের কুমার পাড়া এলাকার বাসিন্দা।

চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর হামলা, আহত ৩ : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির সোনাপুর মীর মশাররফ হোসেন কলেজ কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া ওই প্রার্থীর দুজন সমর্থককে দুটি স্থানে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সজল কুমার সোম বলেন, ‘দুজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আবদুর রাজ্জাককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসান খানকে রাজবাড়ীতে স্থানান্তর করা হয়েছে।’

প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নির্বাচনের আগে থেকেই প্রতিপক্ষের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা তার কর্মীদের ওপর কয়েকবার হামলা করেছেন।’

অভিযোগ অস্বীকার করে অপর প্রার্থী এহসানুল হাকিম বলেন, ‘ওই কেন্দ্রে আমার কোনো ভোট নেই। আমি বড়জোর ৫০ থেকে ৬০টি ভোট পেতে পারি। এ জন্য কেন্দ্রটি ছেড়ে দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সঠিক নয়।’

চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট বর্জন : একের পর এক কেন্দ্র থেকে এজেন্টকে বের করে দেওয়া, ব্যালটে প্রকাশ্যে সিলমারা, ভুয়া এজেন্ট সাজিয়ে কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী জেড এম আজাদ খান। ভোট চলাকালে দুপুর ১২টার দিকে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক শামীম আরা বলেন, ভোট বর্জন প্রার্থীর একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে তার কিছু বলার নেই। তবে একটি কেন্দ্রে আগে যে কয়টি ব্যালট পেপারে সিল মারা পাওয়া গেছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।’

ফিরে গেলেন অশীতিপর ফাতেমা বিবি : ৮০ বছর বয়সি ফাতেমা বিবি অনেক আগ্রহ নিয়ে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার ভোটার নম্বর পাওয়া গেল না। শেষে হতাশ হয়ে বেলা বাড়ি ফিরে যান বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটি।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছে। ভোটার ফাতেমা বিবি পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার মৃত আহাদ আলীর স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘৬০ বচর ধইরে ভোট দি আইসচি। এমপি ভোটে সমস্যা হইল না, এই ভোটে নম্বরই খুঁইজেই পালাম না।’

কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল এই নারীর ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।

বকশীগঞ্জে এসি ল্যান্ডের হুমকি : ভোট গ্রহণ চলাকালে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলাখিয়া পাবলিক কলেজ কেন্দ্রে সাংবাদিকদের ভিডিও ধারণ ও ছবি নিতে বাধা দেওয়াসহ অসদাচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে একজন সহকারী কমিশনারের (ভূমি, এসি ল্যান্ড) বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত এসি ল্যান্ডের নাম আসমা-উল-হুসনা। তিনি বকশীগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে আছেন।

অভিযোগের বিষয়ে আসমা-উল-হুসনা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আপনার কিছু জানার থাকলে নির্বাচনের পর অফিসে আইসেন।’

বাগাতিপাড়ায় সংঘর্ষে আহত ৪ : নাটোরের বাগাতিপাড়ায় প্রথম দুই ঘণ্টায় ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা, এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া এবং দুই প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ফাগুয়াড়দিয়াড় থেকে দুজনকে আটক করেছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) মাছুদুর রহমান জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। বাইরে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেসব ঘটনা প্রতিহত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে।

ভোলায় ককটেল বিস্ফোরণ : সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের রতনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে ৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় ভোটারদের দৌড়াদৌড়িতে অন্তত ৫ জন আহত হন। খবর পেয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রিটার্নিং অফিসার মো. জাহিদ হোসাইন জানান সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট হচ্ছে। কোথাও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

রামগঞ্জে ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা : লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে পশ্চিম কাজিরখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলের চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।

জানা গেছে, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রার্থী দেওয়ান বাচ্চুর লোকজন কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এ সময় তারা একটি মোটর সাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর ও চালককে মারধর করেন। এ সময় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াংকা দত্ত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেহের নিগার, রামগঞ্জ উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন ইসলাম ও পুলিশ-বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

অন্যদিকে আমাদের গাইবান্ধা, পঞ্চগড় ও জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, উপজেলার নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে গাইবান্ধা সদর, পলাশবাড়উ ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা, জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা এবং পঞ্চগড়ের বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এসব উপজেলা নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। আর ভোটার না থাকায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য, আনসার সদস্য ও প্রার্থীর এজেন্টরা অলস সময় কাটিয়েছেন। ভোট কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীর কর্মী ও সর্মথকরা ভিড় করলেও কেন্দ্রের ভিতরে সুনসান নীরবতা।

সকাল ১১টা পর্যন্ত জয়পুরহাট সদরের সোটাহার ধারকী কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৫৫টি। একই সময়ে কোমরগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট পড়ে ৭১টি। এছাড়া গাইবান্ধা ও পঞ্চগড়ের চারটি উপজেলায়ও একই চিত্র দেখা যায়।

কর্মকর্তারা বলেন, মাঠে ধান কাটার কাজ চলায় ভোটারের উপস্থিতি কম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে