প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
ঢাকায় চলবে ব্যাটারি চালিত রিকশা
প্রকাশ | ২১ মে ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
নিম্ন আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে ঢাকা সিটিতে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার গাড়ি চলাচলের অনুমতি দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্মূল্যের বাজারে মেহেনতি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বিবেচনা করে, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিটি এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, জীবিকার ব্যবস্থা না করে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিধিমালা করে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের (রেগুলেট) জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন এবং তা চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দিতে বলেছেন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় শেখ হাসিনা এসব নির্দেশনা দেন। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।
এর আগে ১৫ মে সড়ক পরিবহণ উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা
\হচলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে অভিযানে নামে পুলিশ। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে রোববার রাজধানীর মিরপুরে দিনভর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চালকরা। একপর্যায়ে ওই এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে। তিনি স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, তাদের জীবিকার বিষয়টি উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তাদের জীবিকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে। একটি বিধিমালার মাধ্যমে এটি রেগুলেট করতে হবে এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দিতে হবে। এর বাইরে তারা যাবেন না। তবে কোনো অবস্থাতেই যেন মহাসড়ক বা বড় সড়কে না যান, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সড়ক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন।'
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'এটি (ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত) প্রধানমন্ত্রী জানতেন না। তিনি বলেছেন তার নজরে আনা হয়নি। জীবিকার ব্যবস্থা না করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াটা যৌক্তিক মনে করেননি প্রধানমন্ত্রী।'
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশার যন্ত্রের সঙ্গে উপযুক্ত কাঠামো বা মডেল করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিক্ষোভ হয়েছে সোমবারও
যানজটে চরম ভোগান্তি
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আগে সোমবারও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে ঢাকার রামপুরা ও ডেমরাসহ আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে। যানবাহনগুলোর চালক ও মালিকরা প্রায় এক ঘণ্টা রামপুরার মূল সড়ক বন্ধ করে রেখেছিলেন। এতে অফিসগামী মানুষের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে মূল রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। এক ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হয় পুরো এলাকায় যানবাহন চলাচল।
রামপুরা থানার ওসি মশিউর রহমান যায়যায়দিনকে জানান, 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুরো এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে শুনিয়ে মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। যে কারণে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।'
এদিকে বিক্ষোভের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন হাতিরঝিল থানার ওসি শাহ্ মো. আওলাদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ওসি যায়যায়দিনকে বলেন, 'রোববারের মিরপুরের ঘটনা জানার পর আমরা বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরাতে কোনো ধরনের বল প্রয়োগ করিনি। তাদের সুন্দরভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একই সময় ঢাকার ডেমরা সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার হাজীনগর ব্রিজে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক ও মালিকরা। বিক্ষোভকারীরা বেরিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান নেন। এতে করে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ডিএমপির ডেমরার ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোস্তাইন বিলস্নাহ ফেরদৌস জানান, 'বিক্ষোভকারীরা ওই সড়ক অবরোধ করলেও তারা মূল সড়কে আসতে পারেননি। পরে তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।'
৪ মামলায় আসামি আড়াই
হাজার, কারাগারে ৪২
এদিকে রোববার ঢাকার মিরপুরে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক ও মালিকদের বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, কালশীতে ট্রাফিক পুলিশের দুটি বক্স ভাঙচুরের পর পুড়িয়ে দেওয়া ও অন্তত ১০টি যানবাহনে ভাঙচুরের ঘটনায় চারটি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে আড়াই হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক ও মালিককে। যদিও তাদের নাম উলেস্নখ করা হয়নি। দায়েরকৃত মামলার মধ্যে পলস্নবী থানায় ২টি, কামরুল ও মিরপুর মডেল থানায় ১টি করে ২টি মোট ৪টি মামলা করা হয়। এসব মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে বিক্ষোভকারীদের হামলায় অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মিরপুর মডেল থানার ওসি মুন্সী সাব্বির আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, দায়ের করা মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কাফরুল থানার ওসি ফারুকুল আলম জানান, দায়েরকৃত মামলায় ৬শ' থেকে ৭শ' জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২ জনকে।
ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোলস্না জানান, পুলিশের কাজে বাধাদান, যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৭ জন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালককে। এছাড়াও পরে ভাঙচুরে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার হয় আরও ৫ জনকে। সবমিলিয়ে ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করার অনুমতি দিয়েছেন তাই সে বিষয়টি মাথায় রেখেই মামলার পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, রোববার মিরপুরে যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত ৪ মামলায় গ্রেপ্তার ৪২ জনকে সোমবার বিকালে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলাম আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।