রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১
উপজেলা নির্বাচন

দ্বিতীয় ধাপেও ব্যবসায়ী বেশি, কোটিপতি ১১৬

টিআইবির বিশ্লেষণ
যাযাদি রিপোর্ট
  ২০ মে ২০২৪, ০০:০০
দ্বিতীয় ধাপেও ব্যবসায়ী বেশি, কোটিপতি ১১৬

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের প্রায় ৭১ শতাংশই ব্যবসায়ী। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি রয়েছেন ১০৫ জন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় এবার কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণ।

চেয়ারম্যান ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের মধ্যে আটজন কোটিপতি এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি রয়েছেন তিনজন। সব পদের প্রার্থী মিলিয়ে কোটিপতির সংখ্যা ১১৬ জন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২৪-এর দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণের তথ্য তুলে ধরতে টিআইবি রোববার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সমন্বয়ক ইকরামুল হক ইভান।

অস্থাবর সম্পদের ভিত্তিতে এই কোটিপতির হিসাব করা হয়েছে। ভূমির মতো স্থাবর সম্পদের মূল্য নির্ধারণ কঠিন হওয়ায় কোটিপতির হিসাবে তা আনা হয়নি বলে জানিয়েছে টিআইবি।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ১৬০টি উপজেলায় নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন থেকে ১৫৭টি উপজেলার প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য পাওয়া গেছে? এই ১৫৭টি চেয়ারম্যান পদে ৫৯৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৮৯ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে আগামীকাল মঙ্গলবার।

টিআইবির বিশ্লেষণে দেখা যায়, দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৭০ দশমিক ৫১ শতাংশই নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন কৃষিকাজকে। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন আইনজীবী (৪.১৭%) ও শিক্ষক (৪.১৭%)।

একইভাবে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদেরও প্রায় ৬৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৫২ শতাংশই গৃহিণী-গৃহস্থালির কাজকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। পরের অবস্থানে শিক্ষক ও কৃষিজীবী।

টিআইবি বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের সংখ্যা ২০১৪ সালের চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় আট শতাংশ বেড়েছে। অন্য দিকে গৃহিণী/গৃহস্থালি, কৃষিজীবী ও শিক্ষক প্রার্থীদের পরিমাণ দিন দিন কমছে।

এর আগে প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের প্রায় ৭০ শতাংশই ছিলেন ব্যবসায়ী। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি ছিলেন ৯৪ জন।

মন্ত্রী-এমপিদের ১৭ স্বজন

এ দিকে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৩ জন সংসদ সদস্যের আত্মীয়স্বজন অংশ নিয়েছিলেন। এবার দ্বিতীয় ধাপে সেটি বেড়ে ১৭ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, টিআইবি।

মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যের স্বজনরা মূলত চেয়ারম্যান পদেই ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তিনজন সংসদ সদস্যের সন্তান ও একজনের বাবাও আছেন নির্বাচনি দৌড়ে।

পাবনার সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের ছেলে গোলাম হাসনায়েন প্রার্থী হয়েছেন ভাঙ্গুড়া উপজেলায়। নোয়াখালীর সংসদ সদস্য মোর্শেদ আলমের ছেলে সাইফুল ইসলাম দীপু দাঁড়িয়েছেন সেনবাগ উপজেলায়, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের রাকিবুজ্জামান ওই এলাকার সংসদ সদস্য ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে। একই উপজেলার আরেক প্রার্থী মাহবুবুজ্জামান আহমেদ সম্পর্কে নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে।

বগুড়ার সংসদ সদস্য সাইফুলস্নাহ মেহেদীর বাবা সিরাজুল ইসলাম খান রাজু দাঁড়িয়েছেন আদমদিঘী উপজেলায়।

নরসিংদীর মনোহরদীর নজরুল মজিদ মাহমুদ শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের ছোট ভাই, কুমিলস্না সদর দক্ষিণ উপজেলার গোলাম সারওয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই, জামালপুরের বকশীগঞ্জে প্রার্থী নজরুল ইসলাম সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের ভাই, কুষ্টিয়ার সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরীর ভাই বুলবুল আহমেদ টোকন দাঁড়িয়েছেন দৌলতপুর উপজেলায়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় জামিল হাসান দুর্জয় প্রার্থী হয়েছেন শ্রীপুর উপজেলায়। নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙের অভিযোগে তার প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এর বাইরে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার প্রার্থী এহসানুল হাকিম সাধন রেলমন্ত্রী জিলস্নুল হাকিমের চাচাত ভাই। শরীয়তপুরের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর চাচাত বিলস্নাল হোসেন দিপু মিয়া সদর উপজেলার প্রার্থী।

নড়াইলের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার চাচা শ্বশুর ফয়জুল হক রোম লোহাগড়া উপজেলায়, চুয়াডাঙ্গার সংসদ সদস্য সোলায়মান হজ জোয়ার্দারের ভাতিজা নঈম হাসান জোয়ার্দার সদর উপজেলায়, ভোলার সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুলের ভগ্নিপতি মো. জাফির উল্যাহ বোরহান উদ্দিন উপজেলায়, সিলেটের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহিরের শ্যালক বাহুবল উপজেলায়, লক্ষ্ণমীপুরের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরীর ভগ্নিপতি মামুনুর রশিদ রায়পুর উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন।

অস্থাবর সম্পদের শীর্ষে সেনবাগের জাহাঙ্গীর

প্রার্থীদের মধ্যে অস্থাবর সম্পদের তালিকার শীর্ষে আছেন নোয়াখালীর সেনবাগের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। তার মোট অস্থাবর সম্পদ ৮৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তালিকার ২ নম্বরে আছেন ঢাকার ধামরাইয়ের সুধীর চৌধুরী, তার সম্পদ ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে আছেন মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজী, তার অস্থাবর সম্পদ মূল্য ২২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

আইনি সীমার বেশি জমি চার প্রার্থীর জমির মালিকানার দিক দিয়ে আইনি সীমা অতিক্রম করেছেন চারজন প্রার্থী। আইন অনুযায়ী, একজন নাগরিক সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা বা ৩৩ একর জমির মালিক হতে পারেন। এই তালিকার শীর্ষে আছেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এস এম আমিনুল ইসলাম। তার মোট জমির পরিমাণ ৫৪ দশমিক ছয় একর। চার নম্বরে থাকা শিবালয়ের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবদুর রহিম খানের রয়েছে ৩৪ দশমিক ২৯ একর জমি।

সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে দৌলতপুরের সোনালী খাতুনের, ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় আয় বৃদ্ধির দিক দিয়ে সবার ওপরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সোনালী খাতুনের। তার আয় বেড়েছে ১০ হাজার ৯০০ শতাংশ। ২০০০ শতাংশের বেশি আয় বেড়েছে আরও সাত প্রার্থীর। তাদের তিনজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও দুজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী।

অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে

ঝালকাঠির আরিফুরের

অস্থাবর সম্পদের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ঝালকাঠি সদরের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী খান আরিফুর রহমানের। তার সম্পদ বেড়েছে ১১ হাজার ৬৬৬ শতাংশ। ২০০০ শতাংশের বেশি অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে আরও ৯ জন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বড় দুই দলই মাঠপর্যায়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারছে না। ব্যবসায়ীরা নির্বাচনকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখছেন। জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের পদকে আয় ও সম্পদ বিকাশের মাধ্যম হিসেবে দেখছেন। যার ফলে জনস্বার্থের বিষয়ে প্রাধান্য থাকছে না।

সংবাদ সম্মেলনে হলফনামা বিশ্লেষণের তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর ইকরামুল হক ইভান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, ডেটা ভিজুয়ালাইজেশনের সহকারী সমন্বয়ক (অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর) রিফাত রহমান ও কে এম রফিকুল আলম।

এ দিকে, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীর স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়, সেজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তরফে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ এবার কাউকে প্রার্থী করেনি, সমর্থনও করেনি। দলীয়ভাবে কাউকে বসিয়ে দেওয়ার উদ্যোগও নেই। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পরে বলেছেন, স্বজন বলতে স্বামী-স্ত্রী বা সন্তানকে বুঝিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কাউকে দলীয় প্রতীক না দেওয়া এবং প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিয়েছিল ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার চেষ্টায়। তবে বিএনপি ও সমমনারা জাতীয় নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও আসেনি। দলটির যেসব প্রার্থী ভোটে এসেছেন তারাও কাগজে কলম স্বতন্ত্র প্রার্থী, তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এই নির্বাচনে প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৩৬ শতাংশের কিছু বেশি, তবে সেদিন ভোটারদের বাধা দান বা জাল ভোটের মতো অভিযোগ ছিল কম।

বিএনপি যেসব নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে এসেছে, তারাও তেমন কোনো অভিযোগ করেননি। তবে একটি উপজেলায় এক আওয়ামী লীগ নেতা কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন, যদিও তার অভিযোগ সুনির্দিষ্ট ছিল না।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'একদলের একচ্ছত্র যে রাজনীতি, সেটি স্থানীয় পর্যায়ে গভীরতর রূপ লাভ করেছে। অধিকাংশ প্রার্থীই ক্ষমতাসীন দলের। যারা আগেও জনপ্রতিনিধি ছিলেন, তারা যারা ছিলেন না তাদের তুলনায় বেশি অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন। সার্বিকভাবে বলা যায়, এটি ক্ষমতাকেন্দ্রিক নির্বাচন, এখানে দলীয় স্বার্থও নাই, জনস্বার্থও নাই।'

নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ সার্বিক একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে টিআইবি। পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী- উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনেও অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের অধিকাংশই 'আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী' এবং দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সমর্থনপুষ্ট।

দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে দ্বিতীয় ধাপেও লড়ছেন বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীরা। যদিও দলের নির্দেশ না মেনে বহিষ্কৃত হয়েছেন ৬৪ জন।

উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে রাজনৈতিক লড়াই হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে দলগত অবস্থান প্রায় শূন্য।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ জাতীয় নির্বাচনের তুলনায়ও কম। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে নারী প্রার্থী আছেন ২৪ জন।

জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট বাড়ছে। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের সংখ্যা চতুর্থ নির্বাচনের তুলনায় আট শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ শতাংশ।

চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৭০.৫১ শতাংশই ব্যবসায়ী, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রায় ৬৮.৭৩ শতাংশ, নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ২৯.২৬ শতাংশ ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন।

নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৫১.৬৩ শতাংশই গৃহস্থালির কাজকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন।

গৃহিণী/গৃহস্থালিকে পেশা হিসেবে দেখানো প্রার্থীদের সাড়ে ১৪.৫৫ শতাংশের আয় আসে ব্যবসা থেকে, কৃষি থেকে আয় আসে ১৬.২৫ শতাংশের, আয় নেই ১০.৯২ শতাংশের, ৪৭ শতাংশ নিজেদের আয়ের কোনো স্বীকৃত উৎস দেখাননি।

সার্বিকভাবে প্রার্থীদের ৪২ শতাংশই আয় দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে, অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই তাদের। সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন ১০ শতাংশ প্রার্থী।

চেয়ারম্যান ও অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য আয় বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ২১ শতাংশ প্রার্থীদের আয় সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে, যেখানে অন্যান্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তা ৫৩ শতাংশ। একইভাবে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ২৩.৬২ শতাংশর আয় সাড়ে ১৬ লাখ টাকার উপরে। অন্যান্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে তা মাত্র ৩.২৫ শতাংশ। অর্থাৎ চেয়ারম্যান পদে অপেক্ষাকৃত ধনীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রায় ৯৪ শতাংশ প্রার্থীর সম্পদ কোটি টাকার নিচে, বাকি প্রার্থীর সম্পদ কোটি টাকা বা তার বেশি। প্রায় তিন গুণ হয়েছে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা।

প্রায় ২৫ শতাংশ প্রার্থীর ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩১০ কোটি লাখ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীর।

প্রার্থীদের ১৩.১৩% বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত।

পাঁচ বছরে একজন চেয়ারম্যানের আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৯০০ শতাংশ, ১০ বছরে এই বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ৩৩৬ শতাংশ; অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬৬৬ শতাংশ, স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ।

আইনি সীমা বা ১০০ বিঘা বা ৩৩ একর এর বেশি জমি আছে চারজন প্রার্থীর।

৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা পেছনে ফেলেছেন সংসদ সদস্যদের। একজন সংসদ সদস্যদের সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ তিন হাজার ৬৫ শতাংশ, যেখানে একজন চেয়ারম্যানের সম্পদ বেড়েছে ১১ হাজার শতাংশের বেশি।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচিত হননি, এমন প্রার্থীদের গত ৫ বছরের আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, অনির্বাচিতদের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। অর্থাৎ ক্ষমতায় থাকার সঙ্গে দ্রম্নত আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এ ক্ষেত্রে শুধু তাদের নিজেদেরই নয়, স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের আয় ও সম্পদ বেড়েছে পালস্না দিয়ে। আবার যেসব জনপ্রতিনিধি দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন, তাদের আয় ও সম্পদ বেশি বৃদ্ধির প্রবণতাও স্পষ্ট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে