ভৈরবে নারী আসামির মৃতু্য
পরিবারের দাবি নির্যাতনর্ যাব বলছে 'হৃদরোগে'
প্রকাশ | ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের্ যাব হেফাজতে সুরাইয়া খাতুন (৫২) নামে এক নারী আসামির মৃতু্যর ঘটনার প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শুক্রবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে তার মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ওই হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। আর শনিবার দুপুরে পুলিশ পাহারায় জানাজার পর তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সুরাইয়ার স্বজনদের অভিযোগ,র্ যাব হেফাজতে নির্যাতনে তার মৃতু্য হয়েছে। অন্যদিকে, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে দাবি করছের্ যাব। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে ভৈরব থানায় একটি অপমৃতু্য মামলাও হয়েছে বলে জানিয়েছে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার সামন থেকে বৃহস্পতিবার রাতে এক নারী আসামিকে আটকের পর কিশোরগঞ্জের ভৈরবের্ যাব-১৪ কার্যালয়ে নিয়ে আসার পর শুক্রবার সকালে তার মৃতু্য হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে সুরাইয়া খাতুন (৪৫) নামে ওই আসামিকের্ যাব সদস্যরা মৃত অবস্থায় ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে আসেন বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ। সুরাইয়া খাতুন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দা গ্রামের আজিজুল ইসলামের স্ত্রী। যৌতুকের দাবিতে অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূ রেখা আক্তারকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে নান্দাইল থানায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি ছিলেন তিনি।
এদিকে, সুরাইয়া খাতুনের মৃতু্যর প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে সুরাইয়ার মরদেহের সুরতহাল সম্পন্ন হয় ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহানের উপস্থিতিতে।
এরপর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ওই হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুরাইয়ার মরদেহ তার স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে সুরাইয়ার স্বামী আজিজুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'বৃহস্পতিবার রাতে নান্দাইল থানা পুলিশ আমাদের ডেকে এনের্ যাবের হাতে আমার স্ত্রী সুরাইয়াকে তুলে দেয়। এরপর খবর পেলাম রাতেই আমার স্ত্রী মারা গেছে।র্ যাবের নির্যাতনেই আমার স্ত্রীর মৃতু্য হয়েছে। আমি আদালতে মামলা করব। আমি এই হত্যার বিচার চাই।'
সুরাইয়ার দেবর আব্দুল আওয়াল বলেন, 'সুরাইয়া চার সন্তানের মা। তার শরীরে কোনো রোগ-বালাই ছিল না। নির্যাতনের কারণেই তার মৃতু্য হয়েছে।'
জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে আজিজুল ইসলামের ছেলে তাইজুল ইসলামের সঙ্গে ভৈরবের ভেড়ামারি গ্রামের হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। গত ২৬ এপ্রিল রেখা মারা যায়। অভিযোগ আছে, শ্বশুরবাড়ির লোকদের নির্যাতনে তার মৃতু্য হয়েছে। গত ২ মে রেখার মা ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবু্যনালে আজিজুল ইসলামসহ তার ছেলে ও স্ত্রীকে আসামি করে মামলা করেন। বিচারক মামলার শুনানি শেষে মামলাটি নথিভুক্ত করে তদন্ত করতে নান্দাইল থানার সাব-ইন্সপেক্টর নাজমুল ইসলামকে নির্দেশ দেন। এরপর গত ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়।
ভৈরবর্ যাব ক্যাম্পের সদস্যরা বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে নান্দাইল থানায় গিয়ে পুলিশের মাধ্যমে সুরাইয়া খাতুন, আজিজুল ইসলাম ও তাইজুল ইসলামকে ডেকে আনেন। এরপর আজিজুল ইসলামকে ছেড়ে দিয়ে বাকি দু'জনকে আটক করে ভৈরব ক্যাম্পে নিয়ে আসেন গভীর রাতে। শুক্রবার সকালে মৃত অবস্থায় সুরাইয়াকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে যানর্ যাব সদস্যরা।
সুরাইয়ার স্বামী আজিজুল ইসলামের প্রশ্ন, 'মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নান্দাইল থানার পুলিশ। আমাদের সবাইকে থানায় ডেকে আনার পর পুলিশই গ্রেপ্তার করতে পারত। কিন্তুর্ যাব সদস্যরা কেন ভৈরব ক্যাম্পে নিয়ে গেল?'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাইজুল ইসলামকে নান্দাইল মডেল থানায় হস্তান্তর করেছের্ যাব সদস্যরা।
এ বিষয়ের্ যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মো. আশরাফুল কবির সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'আটকের পর ভৈরব ক্যাম্পের ভেতরে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন সুরাইয়া। সম্ভবত হৃদরোগে তার মৃতু্য হয়েছে। ময়নাতদন্তে তার মৃতু্যর কারণ জানা যাবে।'
নান্দাইল থানার ওসি আবদুল মজিদ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আদালতে একটি মামলার সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য জামালপুরে ছিলেন তিনি। রাত ১১টার দিকে তিনি ফেরেন বলে জানান। এই সময়ের মধ্যে কিছু হয়েছে কিনা তিনি বলতে পারেন না।
মামলার তদন্ত কমর্কতা সাব-ইন্সপেক্টর নাজমুল ইসলাম বলেন, 'আজিজুল ইসলাম ও তার পরিবারের কাউকে সেদিন থানায় ডাকা হয়নি। র?্যাব আসামিদের গ্রাম চন্ডিপাশা থেকে ধরে নিয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। থানা থেকে র?্যাব বা আসামি কাউকেই ডাকা হয়নি।'
জানা গেছে, শনিবার দুপুরে নান্দাইল উপজেলায় নিহতের বাড়ির পাশের একটি মাঠে পুলিশ পাহারায় জানাজা শেষে বিকালে স্থানীয় কবরস্থানে সুরাইয়া খাতুনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।