বাস হেলপার থেকে দক্ষ আইফোন চোর

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০

গাফফার খান চৌধুরী
মো. রাসেল ওরফে সাগর
রাতারাতি ধনী হতে বাস হেলপারের পেশা পরিবর্তন করে নিজেকে গড়ে তোলেন দক্ষ আই ফোন চোর হিসেবে। চার মাসে তিনি অসংখ্য আই ফোন চুরি করেছেন। সেসব ফোন বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকাও পেয়েছেন। কিন্তু রাখতেন পারেননি স্বভাবের দোষে। এই চোর রীতিমতো আতঙ্ক হয়ে উঠেছিলেন ঢাকার বসুন্ধরা মার্কেটের ফোন ব্যবসায়ীদের কাছে। শেষ পর্যন্ত গণধোলাইয়ের পর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বর্তমানে রয়েছেন চৌদ্দ শিকের লাল দালানে। গত ১৬ মে বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার পান্থপথে বসুন্ধরা শপিং কমপেস্নক্স থেকে গণধোলাইয়ে মারাত্মকভাবে আহত মো. রাসেল ওরফে প্রকাশ ওরফে সাগর (২৮) নামের ওই চোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন ফয়েজুর রহমান রজত নামের বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের বেজমেন্ট-২ এর অ্যাপেল গেজেট নামের ২৬ নম্বর দোকানের এক কর্মচারী। মামলার বাদির দাবি, চলতি মাসের ২ মে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের দোকান থেকে ৮৫ হাজার টাকা দামের সবুজ রংয়ের আই ফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স চুরি করে পালিয়ে যায় সাগর। এমন ঘটনার পর তেজগাঁও থানায় লিখিত আকারে অভিযোগ করা হয়। দোকানের সিসি ক্যামেরা \হদেখে চোরকে শনাক্ত করা হয়। সবশেষ গত ১৬ মে বিকালে আবারও সাগর তাদের দোকানে যান মোবাইল ফোনের ক্রেতা সেজে। একটি লেটেস্ট প্রযুক্তির আই ফোন কিনবেন বলে জানান। ভিড়ের মধ্যে সাগর একটি দামি আই ফোন চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় দোকানদার, দোকান কর্মচারী ও জনতা মিলে তাকে ধরে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পরে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকার শেরে বাংলানগর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার তাকে সেখান থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোর্পদ করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। মামলার বাদি জানান, গত কয়েক মাস ধরে প্রায়ই বসুন্ধরা শপিং কমপেস্নক্সের বিভিন্ন মোবাইলের দোকান থেকে দামি দামি আই ফোন চুরির ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে শপিং মলের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ পর্যায়ে গেছে যে, কোনো ভদ্র লোক এবং সত্যিকারের ক্রেতাদের দেখেও অনেক দোকান মালিক বা কর্মচারী মনে মনে তাদের মোবাইল ফোন চোর হিসেবে ভেবে থাকেন। এটি পরিস্থিতির কারণে হয়েছে। এতে দোকান মালিক বা কর্মচারী বা সত্যিকারের ক্রেতাদের কোনো দোষ নেই। ক্রেতার বেশে অহরহ দামি দামি মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা ঘটায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। গ্রেপ্তার সাগর মার্কেটটির দোকানদারদের কাছে রীতিমতো মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল। আর চুরি এমন একটি ব্যাপার, হাতেনাতে ধরা না পড়লে কাউকে চোর সাব্যস্ত করা খুবই কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এতে বিপদে পড়ার আশঙ্কাই বেশি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সাগরকে। জিজ্ঞাসাবাদ ও মামলার এজাহারে দেওয়া তথ্য মোতাবেক, তার পিতার নাম আব্দুল মান্নান। মায়ের নাম জেসমিন বেগম। বাড়ি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানাধীন কাদিরদী গ্রামে। থাকতেন ঢাকার মিরপুর-১২ পলস্নবী থানাধীন ১ নম্বর সড়কের ধ বস্নকের ১৭৪ নম্বর বাড়িতে। তেজগাঁও থানার ডিউটি অফিসার এসআই ইউনূস আলী ফরাজী যায়যায়দিনকে বলেন, শুক্রবার সকালে আসামিকে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত দায়েরকৃত মামলাটির তদন্ত করছেন তেজগাঁও থানার এস আই সালেকীন মিলস্নাত তাওফিক। ঘটনার বিষয়ে তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন যায়যায়দিনকে বলেন, সাগরের পিতা একজন বাস চালক। সাগর নিজেও এক সময় পিতার সঙ্গে বাসের হেলপারের কাজ করতেন। এরপর চলে যান কাতারে। ৪ বছর কাতারে ছিলেন। অনেক টাকা রোজগার করলেও ব্যক্তিগত খারাপ অভ্যাসের কারণে টাকা ধরে রাখতে পারেননি। দেশে ফিরে আবারও পিতার সঙ্গে বাসের হেলপারি শুরু করেছিলেন। কিন্তু সাগর রাতারাতি ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। তাই এক সময় তিনি বাসের হেলপারের কাজ ছেড়ে দেন। পেশা পরিবর্তন করে নিজেকে দক্ষ চোর হিসেবে গড়ে তোলেন। ওসি বলেন, সাগরের দাবি তিনি চার মাস ধরে বসুন্ধরা সিটির অনেক দোকান থেকেই দামি দামি আই ফোন চুরি করেছেন। সেসব ফোন বাইরে বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকাও পেয়েছেন। কিন্তু অভ্যাস খারাপ থাকায় টাকা ধরে রাখতে পারেননি। তবে তিনি মাদকাসক্ত নন। প্রাথমিকভাবে সাগরের অনলাইন জুয়ার প্রতি আসক্তি থাকার তথ্য জানা গেছে। ব্যক্তিগত জীবনে সাগর উচ্চ মাধ্যমিক পাস। কিন্তু স্বভাব চরিত্র ভালো না হওয়ায় কোথাও টিকতে পারেননি। পিতা মাতা অনেক কষ্ট করে কাতার পাঠিয়েছিলেন। লাভের লাভ কিছুই হয়নি। ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, সাগর আই ফোন চুরিতে নিজেকে এতটাই দক্ষ করে তুলেছিলেন যে, বসুন্ধরা সিটিতে তিনি রীতিমতো আই ফোন সাগর নামে পরিচিতি পেয়ে যান। তার চুরির হাত এতটাই দক্ষ। কোনো দিনই তিনি ধরা পড়েননি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। এই প্রথম বারের মতো ধরা পড়েছেন। পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করার প্রস্তুতি চলছে। আপাতত তিনি কারাগারে রয়েছেন। প্রয়োজনে তাকে একাধিকবার রিমান্ডে পেতে আদালতে আবেদন করা হবে। সাগর কোনো আই ফোন চোর চক্রের পেশাদার সদস্য কিনা সেটি জানতে এবং চুরি করা আই ফোনের ক্রেতা এবং ওইসব আই ফোন কি ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়, সেটি জানতেই সাগরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।