বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

অনলাইনে গরু খোঁজা শুরু, চড়া দাম

গবাদি পশুর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তপথ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত
আলতাব হোসেন
  ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০
আসন্ন কোরবানি ঈদে এই গরুটি বিক্রির জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে -সংগৃহীত

ঈদুল আজহার প্রায় মাসখানেক বাকি থাকলেও এরই মধ্যে অনলাইনে গরু খোঁজা শুরু হয়েছে। বিক্রেতারা গরু বিক্রির জন্য দিচ্ছেন চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাট ঘুরে পছন্দের গরু-ছাগল কেনার চল বহু দিনের। বর্তমান সময়ে রাজধানী ঢাকায় কোরবানির পশুর হাটগুলোতে সশরীরে গিয়ে পশু কেনা এবং তা বাসায় নিয়ে আসা যে কত ঝক্কিঝামেলার ব্যাপার, তা ভুক্তভোগীরা জানেন। তাই রাজধানীতে অনলাইনে গরু কেনা সহজ ও জনপ্রিয় ওয়ে উঠেছে।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ঢালিকান্দির ঠিকানা উলেস্নখ করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়েছে বামিরাহ অ্যাগ্রো। সেখানে বিভিন্ন সাইজের গরু প্রদর্শন করা হয়েছে। শুক্রবার গুডকাউ নামে অনলাইনে একটি লাল রঙের গরুর বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। দুই দাঁতের ২২৩ কেজি ওজনের ৩ বছর বয়সি গরুটির উচ্চতা ৪ ফুট ৫ ইঞ্চি। লম্বা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। পাশ প্রায় ৩ ফুট। এর দাম হাঁকা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মানিকগঞ্জের একটি কালো রঙের ১২৭ কেজি ওজনের একটি গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ টাকা। ফেসবুকে গাজীপুর শ্রীপুরের ৩০০ কেজি ওজনের একটি গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৩ লাখ টাকা। সাভার আশুলিয়ার রফিকুল আলম একটি ষাঁড় বিক্রির জন্য ছবিসহ পোস্ট দিয়েছেন। লাল-কালো এ গরুটির ওজন ৫৪২ কেজি। দুই দাঁতের এই গরুটির দাম চাওয়া হচ্ছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪০ টাকা। পোস্টে লেখা হয়েছে, মোটাতাজা, দেখতেও সুন্দর, নিজ বাড়িতে লালন-পালন করা। গ্রামের খাবার যেমন-

বিচালি, গাছের পাতা, গমসহ কয়েক রকম ভুসি, সরিষার খৈল, খড় ও মাঠের কাঁচাঘাস, ভাতের মাড় খাওয়ানো হয়। মোটাতাজার ইনজেকশন দেওয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কোরবানির হাটে মানুষের ভিড়, দালালদের খপ্পর, বাজারের অস্থিরতা, বায়ু দূষণের বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকে আগে-ভাগে গরু কেনায় বেছে নিচ্ছেন পশুর ভার্চুয়াল হাটকে। গত কয়েক দিন ধরে গাজীপুরের শ্রীপুরের অ্যাসুরেন্স ফার্ম দারাজ, অনলাইন গরুর হাট, আলমগীর রেঞ্চ ডটকম, জমজম অ্যাগ্রোফার্ম ডটকম, সারা অ্যাগ্রোফার্ম, এখানেই ডটকম, আমারদেশ ই-শপ হাট, গরু ডটকম, ঈদকাউসহ বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটে কোরবানির পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, অনলাইন ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গরু-ছাগলের ছবি, পশুর দাম, বয়স, দাঁতের সংখ্যা, ওজন, চামড়ার রঙ, জাত, জন্মস্থান এবং প্রাপ্তিস্থানের উলেস্নখ আছে ওয়েবসাইটে। হাটের ভিড় ও ঝক্কি-জামেলা এড়াতে অনলাইনে গরুর দরদাম চলছে। ক্রেতারা বলছেন, এবার বাড়তি দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা।

মিরপুরের ব্যাংক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম রনক বলেন, তিন বছর ধরে তিনি অনলাইনে গরু কিনে কোরবানি দিচ্ছেন। এবার তার ১০ বছর বয়সি ছেলে রুহান মোবাইলে গরু দেখে পছন্দ করছে। দাম ঠিক করে কিনে গরুর মালিকের কাছে রেখে দেবেন। কোরবানির একদিন আগে গরুটি বাসায় পৌঁছে দেবেন খামারিরা।

অনলাইন গরুর হাট সম্পর্কে জানতে চাইলে অনলাইন গরুর হাটের বিক্রয় কর্মকর্তা আশিক রণি বলেন, অনলাইনে গরু বিক্রি এখন খুবই জনপ্রিয়। ক্রেতারা গরুর জন্য তাদের সাইটে সার্চ দিতে শুরু করেছেন। অনেকে আগেভাগেই গরু কিনতে চান। ইতোমধ্যে তাদের ১৭টি গরু বুকিং কনফার্ম হয়েছে।

গরু-ছাগল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন বাংলাদেশ। এখন আর কোরবানির পশুর জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হয় না। দেশি গরুতেই কোরবানির চাহিদা মিটবে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য খামারিদের কাছে পর্যাপ্ত গরু-ছাগলের জোগান রয়েছে। দেশের খামারিদের ন্যায্যমূল্য দিতে সীমান্তপথে গরুর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তপথ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোরবানি শেষে এবার ২২ থেকে ২৫ লাখের বেশি গরু অবিক্রীত বা উদ্বৃত্ত থাকতে পারে।

ঈদুল আজহা মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সারা দেশে কোরবানির পশুর হাট প্রস্তুত হচ্ছে। মহান আলস্নাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য পশু কোরবানি দেওয়া এই উৎসবের প্রধান উপলক্ষ্য। এই ঈদকে কেন্দ্র করে গবাদি পশু কেনাবেচায় অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে অর্থনীতিতে চাঙাভাব চলে আসে। সামর্থ্য অনুযায়ী ধনী-গরিব সবাই পশু কোরবানি করে থাকেন। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। তাই এবার ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি থাকবে বলে বলছেন খামারিরা। কোরবানির সংখ্যাও আগের চেয়ে কমতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে