রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

চালকের বেপরোয়া গতিতে প্রাণ গেল ৫ জনের

চৌদ্দগ্রাম (কুমিলস্না) প্রতিনিধি
  ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
চালকের বেপরোয়া গতিতে প্রাণ গেল ৫ জনের

'যাত্রীরা বারবার নিষেধ করার পরও বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালাচ্ছিলেন চালক। একসময় যাত্রীদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে তিনি বাসটি কুমিলস্নায় একটি হোটেলে পার্ক করেন। সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর আবারও বেপরোয়া গতিতে বাস চালানো শুরু করেন। দুশ্চিন্তা সত্ত্বেও ভোর হওয়ায় যাত্রীদের চোখে ঘুম ঘুম ভাব। দ্রম্নতগতির বাসটি চৌদ্দগ্রাম এলাকার বসন্তপুর নামক স্থানে এসে বিকট শব্দে রাস্তার পাশেই উলটে যায়। তখন সবাই বাঁচার জন্য আকুতি করছিলেন। কিন্তু কারো কিছুই করার ছিল না। আমিও যেন মৃতু্যর দুয়ার থেকে ফিরে আসলাম।'

কুমিলস্নার

চৌদ্দগ্রামের সড়ক দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া দুর্ঘটনাকবলিত রিল্যাক্স বাসের যাত্রী এবং ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র রাঙামাটির আরজ হোসেন সুমন এভাবেই বিপৎসঙ্কুল বাস যাত্রার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

শুক্রবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের বসন্তপুর নামক স্থানে এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায় দ্রম্নতগতির রিল্যাক্স পরিবহণের ওই এসি বাসটি। ঘটনাস্থলে পাঁচ যাত্রী নিহত এবং ১৫ যাত্রী আহত হন।

মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার এসআই নজরুল ইসলাম জানান, নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মতিউর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন (৩০), চট্টগ্রামের বাশখালীর বাহারছড়া গ্রামের নুরুল আবসারের ছেলে বদরুল হাসান রিয়াদ (২৬) এবং নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার সাহাপুর গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে নাসির উদ্দিন পলাশ (৪০)। অন্য দুইজনের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

বাসের যাত্রী, স্থানীয় বাসিন্দা ও হাইওয়ে পুলিশের সূত্র বলছে, বাসের বেপরোয়া গতির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীদের বারবার অনুরোধের পরেও চালক তার বেপরোয়া গতি অব্যাহত রেখেছে যে-কারণে ফাঁকা সড়কে এই দুর্ঘটনায় ঝরল পাঁচ প্রাণ।

আরজ হোসেন সুমন আরও জানান, রাত সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে বাসটি ছাড়ার কথা থাকলেও ২৮ জন যাত্রী নিয়ে রাত ২টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে। ফজরের নামাজের আগে কুমিলস্নার পদুয়ার বাজার এলাকায় একটি হোটেলে যাত্রাবিরতি করে। যাত্রাবিরতির আগে গাড়িটির গতি বেপরোয়া থাকায় যাত্রীরা চিৎকার করেন। যাত্রাবিরতি শেষে গাড়িটি আবারও বেপরোয়া গতির কারণে চৌদ্দগ্রামের বসন্তপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়। এ সময় বাসের অধিকাংশ যাত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। বেপরোয়া গতির কারণেই বাসটি দুর্ঘটনায় পড়েছে।

আরেক যাত্রী চট্টগ্রামের আজান হোসেন বলেন, 'বেশিরভাগ যাত্রী ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুম ভেঙে দেখেন সবাই বাসের ভেতর আটকে পড়েছেন। এ সময় আমরা কয়েকজন মিলে বাসের সামনের গস্নাস ভেঙে আহতদের উদ্ধারের চেষ্টা করি। আশপাশের কাউকেই আমরা এগিয়ে আসতে দেখিনি। ভোর হওয়ায় রাস্তা ফাঁকা ছিল। আশপাশে কোনো যানবাহনও ছিল না। কিছু সময় পর স্থানীয়রা এসে উদ্ধার কাজ শুরু করেন।'

চট্টগ্রামের হাটহাজারির নাবিল হোসেন বলেন, 'গাড়ির গস্নাস ভেঙে আটকে পড়াদের বের হতে সহায়তা করি। আহতদের কয়েকজনকে টেনে বের করি। বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।'

নিহত মোহাম্মদ হোসেনের বড় ভাই আহত ফিরোজ হোসেন বলেন, 'ছয় ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে মোহাম্মদ হোসেন তৃতীয়। সে পেশায় নির্মাণ ঠিকাদার। ছোট ভাই মোহাম্মদ আকাশকে বিমানবন্দর পৌঁছে দিয়ে এক আত্মীয়সহ আমরা দুই ভাই বাসে করে বাড়ি ফিরছিলাম। পথে দুর্ঘটনায় ছোট ভাইকে হারালাম।'

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রবিউল হাসান বলেন, 'সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ১০ থেকে ১৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চারজনকে কুমিলস্না মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।'

মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম লোকমান হোসাইন বলেন, 'দুর্ঘটনার পর বাসের চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছেন। বাসটি উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'যাত্রীদের সঙ্গে আমরা কথা বলে জানতে পেরেছি, ভোরে সড়ক ফাঁকা থাকার কারণে চালক বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন। যাত্রীদের নিষেধের পরেও তিনি গতি কমাননি। চালক ও সহযোগীকে না পেলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কাজ করছি।'

চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সাব ইনচার্জ বিপস্নব কুমার নাথ বলেন, 'আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি চারদিকে মানুষের আর্তনাদ। কয়েকজন আটকে পড়া যাত্রীকে উদ্ধার করি। কিন্তু ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যান।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে