রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

ঢাকায় দিনদুপুরে তুলে নিয়ে গাড়িতে 'ধর্ষণ' ২ জন গ্রেপ্তার

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
ঢাকায় দিনদুপুরে তুলে নিয়ে গাড়িতে 'ধর্ষণ' ২ জন গ্রেপ্তার

ঢাকায় স্কুলপড়ুয়া এক ছাত্রীকে দিনদুপুরে সড়ক থেকে তুলে নিয়ে প্রাইভেটকারে ধর্ষণের অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ বলছে, যারা একটি সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত চক্রের সদস্য।

মোহাম্মদপুরের রিং রোড থেকে গত ১১ মে ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে তাজমহল রোডে ধর্ষণ করা হয়।

মেয়েটিকে আরও ক্ষতি করার ভয় দেখিয়ে তার পরিবার ও পরিচিতদের কাছ থেকে তারা টাকাও আদায় করেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা গত ১৪ মে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। এরপর পুলিশ তৎপর হয়ে অভিযানে নেমে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ কর্মকর্তা মিজানুর বলেন, দুদিন তৎপরতা চালিয়ে বৃহস্পতিবার বাড্ডা থেকে ঘটনার হোতা নাজমুল হাসান শান্ত ও মো. সাহেদ নামে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১১ মে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে রিকশায় বাসায়

ফেরার পথে মোহাম্মদপুর রিং রোডে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে মেয়েটির পথরোধ করে অপহরণকারীরা। সেখান থেকে তাকে প্রাইভেটকারে তুলে নেয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সহকারী কমিশনার মিজানুর বলেন, 'পথরোধ করা প্রাইভেটকারে থাকা এক ব্যক্তি মেয়েটি ও তার ছেলে বন্ধুর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে। সে তাকে ভয়ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নিয়ে তাজমহল রোডে পার্কের পাশে একটি গলিতে নিয়ে যায়।'

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রাইভেটকারে জিম্মি অবস্থায় ছাত্রীটির কাছ থেকে তার মায়ের মোবাইল নম্বর নিয়ে কল দিয়ে 'বড় ক্ষতি করা হবে' বলে ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করে ধর্ষকরা। বিকাশে ২ হাজার টাকা পাঠনোর পর আরও টাকা দাবি করে তারা। ছাত্রীটির ছেলে বন্ধুর কাছ থেকেও একই কায়দায় বিকাশে ৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় এই চক্র।

সহকারী কমিশনার বলেন, মামলায় কারও নাম-পরিচয় ছিল না। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। শান্ত ও সাহেদ নামে দুজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটিও জব্দ করা হয়েছে। শান্তই ঘটনার হোতা, সাহেদ তার সহযোগী।

শান্তর নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় একই ধরনের অপরাধ করে আসছে বলে জানতে পেরেছেন এ মামলার তদন্তকারীরা।

মিজানুর বলেন, এক বছরে শান্তর বিকাশ নম্বরে প্রায় ১৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, একই ধরনের অপরাধে ভুক্তভোগীদের বস্ন্যাকমেইল করে অধিকাংশ টাকা নম্বরটিতে আনা হয়েছে।

শান্ত ও সাহেদকে আদালতে তুলে রিমান্ড চাওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই চক্রে আর কারা আছে, তারা কতটা সংঘবদ্ধ; সেসব বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হবে।

মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তোফাজ্জল হোসেন বলেছেন, শান্তর বিরুদ্ধে একই ধরনের অপরাধে একাধিক মামলা থাকার তথ্য পেয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, শান্ত ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন পার্ক, রেস্টুরেন্ট, মার্কেট, আবাসিক হোটেলের সামনে ওঁৎ পেতে থাকে। কোনো তরুণী বা কিশোরী ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে ফিরছে অনুমান করে তাদের পিছু নেয়। সুযোগ বুঝে অপহরণ করে ধর্ষণ করে তার ভিডিও ধারণ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং ভুক্তভোগীর পরিবারকে বস্ন্যাকমেইল করে টাকা আদায় করে তারা।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি মাহফুজুল হক ভূঞা বলেন, শান্তর বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তিনি রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে প্রাইভেটকার চালিয়ে থাকেন। 'টার্গেট' ধরার জন্য প্রাইভেটকারটি তিনি অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করেন।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আগেও এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন শান্ত। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকটি ঘটনার 'ভিকটিম'দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তারা 'পুরনো ঘটনা' বলে নতুন করে সেসব সামনে এনে মামলা করতে রাজি হননি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে