রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১
ঢাকায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃতু্য, কিশোরগঞ্জে প্রাথমিকের ২৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ

ফের দেশজুড়ে বইছে তাপপ্রবাহ

যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ মে ২০২৪, ০০:০০
ফের দেশজুড়ে বইছে তাপপ্রবাহ

ফের তীব্র দাবদাহে নাজেহাল দেশের মানুষ। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই তাপপ্রবাহ বুধবার ৪২ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ আকারে বয়ে গেছে। তবে বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা আরও বেড়ে দেশের সব জেলায় বিস্তৃত হয়েছে। এদিন বিভিন্ন জেলায় মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ আকারে বয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, অসহনীয় এ পরিস্থিতি আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

অন্যদিকে রাজধানীর সড়কে অসুস্থ হয়ে আনসারের এক পস্নাটুন কমান্ডারের মৃতু্য হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, তিনি হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকালে জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এই সময় সারাদেশের ওপর দিয়ে যে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। আর ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৮ ডিগ্রি।

অবশ্য আগামীকাল শনিবার ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছে সংস্থাটি। ফলে এদিন চলমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংস্থাটি আরও জানায়, শনিবার রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দেশের অন্যত্র তা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। এ সময় রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, সাধারণত তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। আর ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে

মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির ওপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

আবহাওয়াবিদরা জানান, আজ সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এদিনও সারাদেশে চলমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকার পাশাপাশি দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৫ দিনের বর্ধিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির প্রবণতা রয়েছে এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।

এদিকে, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে একজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থরা সবাই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় ক্লাস করছিল। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অভিভাবকদের ডেকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। পরে স্কুল ছুটি দেওয়া হয়।

হোসেনপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা সংবাদমাধ্যমকে জানান, স্কুলের ২৫ শিক্ষার্থী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া এক শিক্ষার্থীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরে অভিভাবকদের ডেকে বাকি শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পাঠানো হয়। অসুস্থদের বেশিরভাগই দোতালায় ক্লাস করছিল। অতিরিক্ত গরমে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর স্কুল ছুটি দেওয়া হয়েছে।

হোসেনপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) মো. নুরুল ইসলাম জানান, 'খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। অসুস্থদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অভিভাবকদের মাধ্যমে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।'

নিকলি আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক আক্তার ফারুক জানান, বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছিল।

হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. তানভীর হাসান জানান, হাসপাতালে ভর্তি ৯ বছর বয়সি এক শিক্ষার্থীর পেটে হালকা ব্যথা হয়েছিল। বর্তমানে সে সুস্থ রয়েছে।

অন্যদিকে, ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে অচেতন হয়ে মো. আবু তালেব (৫৫) নামে আনসারের এক পস্নাটুন কমান্ডারের মৃতু্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, আবু তালেব পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার চরপাড়া গ্রামের মৃত দবির উদ্দিনের ছেলে। তিনি এক ছেলে এক মেয়ের জনক ছিলেন। নিউমার্কেট সংলগ্ন বিশ্বাস বিল্ডার্স কমপেস্নক্সে পস্নাটুন কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।

ঢামেক হাসপাতালে কর্মরত আনসারের পস্নাটুন কমান্ডার মো. মিজান বলেন, 'আবু তালেব ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়ে কর্মস্থল থেকে কিছু দূর গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় এক দোকানি তাকে চিনতে পেরে দ্রম্নত ঢামেক হাসপাতালে আনেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি গরমে স্ট্রোক করে মারা গেছেন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে