দুই দিনের হিট অ্যালার্ট

তাপপ্রবাহ ফের বিস্তৃত হয়েছে ৪২ জেলায়

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চলতি বছরের পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে সারাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মাঝারি থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায়ও রেকর্ড ভাঙা গড়ার খেলা চলেছে। বাংলাদেশে সাধারণত এপ্রিল মাসে দুই থেকে তিনটি তাপপ্রবাহ বয়ে গেলেও এ বছর তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তি দীর্ঘ হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন আবহাওয়াবিদরা। হয়েছেও তাই। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ফের তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। গত সোমবার থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহ বুধবার আরও বিস্তার লাভ করে ৪২ জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। আজ বৃহস্পতিবার ও আগামীকাল শুক্রবার এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে দুই দিনের সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা একদিন আগে ছিল নীলফামারীতে ৩৮.৪ ডিগ্রি। বুধবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা মঙ্গলবার ছিল ৩৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই হিসাবে একদিন ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, সিলেট বিভাগসহ টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, রাঙামাটি, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিলস্না, কক্সবাজার, ভোলা ও পটুয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি বিস্তার লাভ করতে পারে। একই সঙ্গে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তাপপ্রবাহের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির আভাসও দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। সংস্থাটি জানিয়েছে, আকাশ মেঘলা থাকার পাশাপাশি রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এবার এপ্রিলে দেশবাসী অতি তীব্র তাপপ্রবাহ দেখেছে। কেবল তা-ই নয়, দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহও ছিল এবার। ১ এপ্রিল দেশে শুরু হওয়া এই তাপপ্রবাহ ছিল ৫ মে পর্যন্ত। তারপর সাত দিন দেশের কোথাও না থাকলেও সোমবার থেকে আবার তাপপ্রবাহ ফিরে এসেছে। সোমবার সাত জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, 'দেশে আবার তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। তবে তা এপ্রিলের মতো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা কম। মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। ১৮-১৯ মে পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকার পর বৃষ্টির প্রবণতা একটু বাড়ার সম্ভাবনা আছে। তখন তাপমাত্রা কমে আসবে।' প্রসঙ্গত, ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মে মাসের ২০ তারিখের পরে বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বজ্রপাত, সেই সঙ্গে হতে পারে কালবৈশাখী ঝড়ও। জুনে বর্ষাকাল শুরুর আগ পর্যন্ত সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সঙ্গে হতে পারে শিলাবৃষ্টিও। এদিকে, চলতি মে মাসের শেষের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ণ রূপ নিলে এর নাম হবে 'রেমাল'। এই নামটি দিয়েছে ওমান। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। ২০ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে পারে ঘূর্ণাবর্ত। এরপর সেটি ক্রমে উত্তর দিকে হয়ে শক্তি বাড়িয়ে ২৪ মে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। আগামী ২৫ মে সন্ধ্যার পরে এই ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে বলে ভারতীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। অন্যদিকে, এক রিপোর্টের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, আগামী ২০ মে থেকে এই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ স্পষ্ট হতে পারে। তবে কোথায়, কত গতিতে এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অনুমান করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের মধ্যে কোথাও এটি আছড়ে পড়তে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ২৪ মে রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হতে পারে উপকূল এলাকায়। বৃষ্টি চলতে পারে ২৬ মে পর্যন্ত। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ মে সুন্দরবনে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় আইলা। সেই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ১৫তম বর্ষের সন্ধ্যাতেই ঘূর্ণিঝড় 'রেমাল' আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।