শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১
নতুন দু'টি মিউটেশন শনাক্ত

দেশে ৩০ হাজারে একজন ভুগছেন উইলসন ডিজিজে

বিএসএমএমইউ'র গবেষণার তথ্য
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০
দেশে ৩০ হাজারে একজন ভুগছেন উইলসন ডিজিজে

দেশে প্রতি ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে একজন ভুগছেন উইলসন ডিজিজে। সেই হিসাবে দেশে ছয় হাজারের মতো রোগী রয়েছেন। সম্প্রতি এক গবেষণায় বিরল রোগ 'উইলসন ডিজিজ'র নতুন দু'টি মিউটেশন শনাক্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউরোলজি ও অ্যানাটমি বিভাগের যৌথ গবেষণায় দু'টি মিউটেশন শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে টার্গেট জিন থেরাপির মাধ্যমে বিএসএমএমইউয়ে এই রোগের চিকিৎসা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

মঙ্গলবার দুপুরে বিএসএমএমইউ আয়োজিত 'বাংলাদেশি উইলসেন্স রোগীদের মধ্যে জেনেটিক পরিবর্তন এবং এর স্নায়বিক উপসর্গ' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আহসান হাবিব হেলাল এবং অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু।

গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে অধ্যাপক

\হডা. লায়লা আনজুমান বানু বলেন, 'গবেষণায় আমাদের মোট রোগীর সংখ্যা ছিলেন ৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ছিলেন ২৮ জন এবং নারী ২২ জন। তাদের ছয়জন রোগীর মধ্যে তিনটি মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে দু'টিই বাংলাদেশে নতুন। তাদের টার্গেট জিন থেরাপির মাধ্যমে বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা চলছে।'

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের প্রতি ৩০ হাজার জনের মধ্যে একজনের উইলসন ডিজিজ রয়েছে। সেই হিসাবে রোগীর সংখ্যা হবে ছয় হাজারের মতো। বিএসএমএমইউয়ে এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ২০০ জনের চিকিৎসা দিয়েছি। কারও মধ্যে রোগটি শনাক্ত হলে তাকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। একজন রোগীর মাসে দেড় হাজার টাকার মতো ওষুধের প্রয়োজন হয়। সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে সারা জীবন ভালো থাকার সুযোগ রয়েছে। চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেলে রোগীর মৃতু্য পর্যন্ত হতে পারে।'

এই চিকিৎসক আরও বলেন, 'পরিবারের একজনের যদি রোগটি শনাক্ত হয়, তাহলে অন্য সদস্যদের পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি দ্রম্নত শনাক্ত করা গেলে ঝুঁকিমুক্ত থাকা সম্ভব।'

নিউরোলজি গবেষক ডা. আহসান হাবিব হেলাল বলেন, 'এই গবেষণায় নিউরোলজি বিভাগের মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার ক্লিনিক এবং অন্তঃবিভাগ থেকে রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রোগী থেকে তিন মিলিলিটার রক্ত সংগ্রহ করে অ্যানাটমি বিভাগের জেনেটিক ল্যাবে পাঠিয়ে অ্যানালাইসিস করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'আমাদের রোগীদের বয়সসীমা ছিল ৯ থেকে ৬০ বছর। অধিকাংশ রোগী পাওয়া গেছে ৯ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং এর সংখ্যা ছিল ৪৩ জন। গবেষণায় প্রথম জেনারেশনের আত্মীয়দের মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন সাতজন। এই রোগের কারণে স্কুল ছাড়তে হয়েছে ২৬ শিশুকে।'

রোগের উপসর্গ প্রসঙ্গে এই চিকিৎসক বলেন, 'আমরা যেই রোগীগুলো পেয়েছি, তাদের মধ্যে ভেতরে ঢোক গিলতে সমস্যা ছিল ২৭ জনের, হাত-পায়ের কম্পন ছিল ২৮ জনের, হাত-পা শক্ত হয়ে যাওয়া ছিল ২১ জনের, অনিয়ন্ত্রিত ঘাড় মোচড়ানো সমস্যা ছিল ১৪ জনের, অনিয়ন্ত্রিত হাত-পা মোচড়ানোর সমস্যা ছিল ১১ জনের, নৃত্যের মতো অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া ছিল চারজনের।'

রোগটি কাদের হতে পারে- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বাবা-মা দু'জনেরই যদি এই রোগের জিন থাকে, তাহলে সন্তানও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এজন্য আমরা নিকটাত্মীয়র মধ্যে বিয়ে না করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।'

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএসএমএমইউ'র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক মানসম্মত গবেষণায় গুরুত্বারোপ করে বলেন, 'গবেষণার জন্য যত ফান্ড লাগে, আমি ব্যবস্থা করব। তারপরও ভালো গবেষণা আমরা চাই। আমাদের যথেষ্ট ফান্ড আছে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আরও ফান্ডের ব্যবস্থা করব। আপনারা ভালো কাজ করুন, আমি ফান্ড ম্যানেজ করে দেব।'

উইলসন ডিজিজ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, 'রোগটি মূলত উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। এটি নির্দিষ্ট জিনের পরিবর্তনের ফলে ঘটে যা একটি প্রোটিন তৈরি করার মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত তামা অপসারণ করে। ফলে শরীরে বিশেষত মস্তিষ্ক, যকৃত এবং চোখে তামা জমা হয়। অতিরিক্ত তামা দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতিই উইলসন ডিজিজের উপসর্গগুলো তৈরি করে। পরিবারের একজনের মধ্যে যদি রোগটি শনাক্ত করা যায়, তখন অন্যান্য সদস্যদেরও পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তের মাধ্যমে রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব।'

দীন মো. নূরুল হক আরও বলেন, 'দুই জিন একত্র হলেই সন্তানের উইলসন ডিজিজ হয়। এজন্য আমাদের অবশ্যই খালাতো, মামাতো এবং ফুফাতো বোনের সঙ্গে বিয়ে বন্ধ করতে হবে। তাহলেই এই রোগে আক্রান্তের হার কমে আসবে।'

অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পারিবারিকভাবে উইলসন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়া চারজন রোগী উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে