টিআইবি'র গবেষণা প্রতিবেদনে তথ্য

ঋণের বোঝা চাপাচ্ছে সবুজ জলবায়ু তহবিল

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযদি রিপোর্ট
গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিএসএফ) বা সবুজ জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশের প্রাপ্য অর্থ অন্যায়ভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে দিয়ে দিচ্ছে। গত এক দশকে এই তহবিলের ভূমিকা হতাশাজনক। সংস্থাটি অনুদানের পরিবর্তে অধিক পরিমাণ ঋণ প্রদানের ফলে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ওপর ঋণ পরিশোধের বোঝা বেড়েই চলছে। পাশাপাশি নীতিমালা অনুসরণ করছে না বরাদ্দের ক্ষেত্রেও। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের 'সবুজ জলবায়ু তহবিলে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অভিগম্যতা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতি প্রতিরোধে জিএসফের জিরো টলারেন্স নীতি থাকলেও ইউএনডিপির মতো বড় প্রতিষ্ঠানের জলবায়ু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অমীমাংসিত রেখে তাদের পুনঃস্বীকৃতি দিয়েছে। জিএসএফ ইউএনডিপিকে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। গবেষণায় জানানো হয়, জিসিএফের ঋণের অর্থ বিদেশি মুদ্রায় সুদের সঙ্গে ফেরত দিতে হয়। যা ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর বহিস্থ ঋণের বোঝা বাড়ায়। ফলে স্থানীয় মুদ্রার ওপর সৃষ্টিসহ জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। এতে জানানো হয়, তহবিল বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অসম প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে। দুর্নীতি প্রতিরোধসহ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার ঘাটতির অজুহাতে জিসিএফ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশে বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'জিএসএফে জবাবদিহিতা করার মতো কোনো অবকাঠামো নেই। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব নীতিমালা লঙ্ঘন করছে ও বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। জিসিএফের ত্রম্নটি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দেন দরবারের সুযোগ রয়েছে। জাতীয় সংস্থাকে ঋণ আর আন্তর্জাতিক সংস্থাকে বেশি করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে।' এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'জিএসএফ দুর্নীতিগ্রস্ত এই অর্থে যে, তারা নিজস্ব নীতিমালা লঙ্ঘন করছে। স্বেচ্ছাচারিতা ও বৈষম্যমূলক কাজ করছে। তারা তাদের পারফরম্যান্সে ফেল করছে। কাজেই ক্ষমতার অপব্যবহার বলতে যা বোঝায়, তা হচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হয়।' আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি বাস্তবতা। এই বাস্তবতা আমরা মেনে নেইনি, নেব না। তবে এটিকে পুঁজি করে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রাপ্য অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত করতে হবে, করা হবে এটি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।' টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, 'বাংলাদেশের যে অর্থ প্রয়োজন জিএসএফের মাধ্যমে সিংহভাগ আসার কথা, কিন্তু জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সুফল পাচ্ছে না। তারা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে বেশি অর্থায়ন করছে। এটা গ্রহণযোগ্য না।' এ সময় সংস্থাটির কান্ট্রি ওনারশিপ নীতিমালা স্পষ্ট করা, তহবিল বাড়ানো, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।