শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১
হাইকোর্টের রায়

মৃতু্যদন্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা অবৈধ

যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০
মৃতু্যদন্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা অবৈধ

মৃতু্যদন্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এ-সংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষে সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন- অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন- অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। তাদের সঙ্গে ছিলেন- সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু।

এর আগে ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা জিলস্নুর রহমানসহ মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে শিশির মনির এই রিট দায়ের করেন।

রিটকারী কারাবন্দিরা হলেন- চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিলস্নুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিলস্না কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত এই তিন আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।

রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজন্স, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিলস্নার সিনিয়র জেল সুপারকে বিবাদী করা হয়।

রিট আবেদনে মৃতু্যদন্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে আবদ্ধ রাখা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে রুলটি বিবেচনাধীন থাকা

অবস্থায় আবেদনকারীদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তরের আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের সব জেলের কনডেম সেলে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাখার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে (সুযোগ, সুবিধা) কারা মহাপরিদর্শককে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল মৃতু্যদন্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জেল কোডের ৯৮০ বিধি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চান আদালত। পাশাপাশি কনডেম সেলে থাকা আসামিদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে ৬ মাসের মধ্যে কারা মহাপরিদর্শককে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজনস, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিলস্নার সিনিয়র জেল সুপারকে এসব রুলের জবাব দিতে বলা হয়। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।

পরে মৃতু্যদন্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা নিয়ে যেকোনো দিন রায়ের জন্য মামলাটি অপেক্ষমান (সিএভি) রেখেছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারিকৃত রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

পরে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, বিচারিক আদালতে মৃতু্যদন্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃতু্যদন্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারামতে মৃতু্যদন্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একই সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী, হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃতু্যদন্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকার বলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন। তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী, আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে বিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সর্বোপরি মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯-এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি ওই ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর করলে তখন মৃতু্যদন্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে। কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃতু্যদন্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি রাখা হয়। তাই, রিটে জেল কোডের ৯৮০ বিধি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে, মৃতু্যদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের পৃথকভাবে কনডেম সেলে রাখা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে