লোকসভা ভোটের চতুর্থ দফা পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশে অশান্তির অভিযোগ

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোট গ্রহণে পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশে বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ উঠেছে। সোমবার নয়টি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৯৬টি এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিকাল ৫টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আট কেন্দ্রে গড় ভোট পড়ে ৭৫.৬৬ শতাংশ, দেশে ভোটের হার ৬২.৩০। অন্যদিকে, জম্মু-কাশ্মীরে ৩৫.৭৫% ভোট পড়েছে। খবর : এনডিটিভি। চতুুর্থ দফায় সোমবার অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগর আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ কেন্দ্রে ভোট শান্তিপূর্ণ হলেও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে অশান্তির ঘটনার অভিযোগ সামনে এসেছে। ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, নদীয়া, বর্ধমানসহ একাধিক জায়গা থেকে নানা অভিযোগ উঠে এসেছে। নির্বাচনের আগেরদিন রাত থেকেই এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ কেন্দ্র করে উত্তপ্ত ছিল পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্ধমানের মন্তেশ্বরে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা। তার কনভয়ে কিছু গাড়ির কাচ ভাঙা হয়েছে বলেও অভিযোগ। এই ঘটনায় রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে, ভোটের দিন সকাল থেকে কোথাও এক দলের সমর্থকদের বিপক্ষের কর্মীদের মারধর, বুথ এজেন্টদের না ঢুকতে দেওয়া, এমনকি ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টার মতো একাধিক ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে বেলা ১১টার মধ্যেই এক হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমে বাড়তে থাকে এই সংখ্যা। বেলা আড়াইটের মধ্যে সেটি পৌঁছায় ১ হাজার ৭০৫ এ। সোমবার দুর্গাপুরে তৃণমূল এবং বিজেপি কর্মীদের মধ্যে বচসা ক্রমে হাতাহাতির আকার নেয়। ওই এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। পরে রাস্তায় বসে বিক্ষোভও দেখান বিজেপি কর্মীরা। প্রসঙ্গত, ভোট বয়কট করেছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বাগিলা গ্রাম পঞ্চায়েতের দিলালপুর গ্রামের বাসিন্দারা। দীর্ঘ সময় ধরে পাকা সেতু এবং রাস্তার তৈরির দাবিতে তারা ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কোনো রাজনৈতিক দলকে প্রচার করতেও দেওয়া হয়নি। নামমাত্র ভোট পড়েছে ওই গ্রামে। এদিকে, কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণিতে বিজেপি কর্মীকে মারধরের পর সেই কর্মীদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থানায় যান বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়। কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। পুলিশের সঙ্গে তার বচসাও হয়। অমৃতা রায় বলেন, 'আমাদের ছেলেদের তুলে আনা হয়েছে। ওরা বুথের ৩০০ মিটারের মধ্যে থাকা পতাকা খুলতে গিয়েছিল। খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। উর্দি পরে গুন্ডামি করতে পারে না পুলিশ।' অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলার তেনালির এক ভোট কেন্দ্রে শাসক দল তেনালির ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির বিধায়ক এ শিবকুমার এক ভোটারকে চড় মারেন। তাকেও পাল্টা চড় মারেন ওই ভোটার। সঙ্গে সঙ্গেই তার সমর্থকরা ওই ভোটারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এই ঘটনার ১০ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকজনকে এই মারধর থামানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। আক্রান্ত ভোটারকে উদ্ধার করতে অবশ্য কোনো নিরাপত্তা কর্মীকে দেখা যায়নি। হাতাহাতি শুরু হওয়ার আগে ঠিক কী হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। তবে ভোটারের ওপর বিধায়কের আক্রমণ সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। এদিকে, বীরভূমের ইলামবাজারের ২৫ নম্বর বুথ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রিসাইডিং অফিসারকে। ওই বুথে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠছিল। ওয়েব কাস্টিং ও সংবাদমাধ্যমগুলোর ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ভোটারদের ধরে ধরে বুথের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমনকি, ভোটারদের সঙ্গে ইভিএমের সামনে পৌঁছে যাচ্ছেন কেউ কেউ। আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কোন বোতাম টিপতে হবে, কোথায় ভোট দিতে হবে। প্রিসাইডিং অফিসারের সামনেই এসব ঘটনা চলতে থাকে। তিনি কাউকে বাধা দেননি। ফলে তাকে সরিয়ে রিজার্ভ রাখা অন্য এক ভোট কর্মীকে ওই কেন্দ্রে পাঠানো হয়।