শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

জবি শিক্ষার্থী তিথির পাঁচ বছর কারাদন্ড

জবি প্রতিনিধি
  ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০
জবি শিক্ষার্থী তিথির পাঁচ বছর কারাদন্ড

ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে পল্টন থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকার সাইবার ট্রাইবু্যনালের বিচারক জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন।

এদিন ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় তিথিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষের দেওয়া সাক্ষ্যে কী কী বলা হয়েছে, তা তিথিকে পড়ে শুনিয়ে জানতে চাওয়া হয় তিনি দোষী না নির্দোষ। তিনি দোষ স্বীকার করলে বিচারক রায় ঘোষণা করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তিথির বিরুদ্ধে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ তুলে ২০২০ সালে মামলা করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আবু মুসা রিফাত। এর মধ্যে তিথিকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তিথি তখন বলেছিলেন, তার ফেসবুক পাতা হ্যাকারের কবলে পড়েছে। অভিযোগ জানিয়ে থানায় জিডিও করেছিলেন তিনি।

এরপর ওই বছর ২৪ অক্টোবর ঢাকার পলস্নবীর বাসা থেকে থানার পথে বেরিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। এ নিয়ে তার পরিবার থানায় জিডিও করে। এর মধ্যে ওই বছরের ৩১ অক্টোবর সিআইডির সাইবার মনিটরিং

টিম দেখতে পায়, সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ের চারতলা থেকে তিথি সরকারকে 'হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে' বলে একটি পোস্ট সোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। তখন সিআইডি তদন্তে নেমে 'গুজব রটনার' অভিযোগে নিরঞ্জন বড়াল নামে একজনকে রামপুরার বনশ্রী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। ১৮ দিন পর, ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর তিথি সরকারকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি জানায়, নরসিংদীর মাধবদীর পাঁচদোনায় স্বামীর এক দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়ের বাড়িতে তাকে পাওয়া গেছে।

সিআইডি তখন বলেছিল, 'তিথি তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট, কমেন্ট ও তথ্য শেয়ার করেন। ফলে বিশ্বদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সমাবেশ করে। ভবিষ্যৎ বিপদ এড়াতে এবং নিজেকে নিরাপদ রাখতে ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে মর্মে গত ২৩ অক্টোবর পলস্নবী থানায় একটি জিডি করেন তিথি। তারপর আত্মগোপনে থেকে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল এভাবে আত্মগোপনে থেকে নিজেকে লুকিয়ে অপহরণের দায়ভার অন্যের ওপর চাপিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ঘটনা থেকে রেহাই পাবেন বা ঘটনা অন্যদিকে ধাবিত হবে।'

তিথিকে পাওয়ার আগেই নিরঞ্জনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২ নভেম্বর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে সিআইডি।

জগন্নাথের এই শিক্ষার্থকে গ্রেপ্তারের দিনই তার স্বামী শিপলু মলিস্নককে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিথি সরকারকে এক দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। তবে শিপলুকে কারাগারে পাঠানো হয়। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৯ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান। ওই বছর ৪ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে তিথির বিচার শুরুর আদেশ দেন সাইবার ট্রাইবুনালের তৎকালীন বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেন। তবে তার স্বামী শিপলু এবং বনশ্রী থেকে গ্রেপ্তার নিরঞ্জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিচার শেষে সেই মামলাতেই তিথির সাজার রায় এল।

ঢাকার সাইবার ট্রাইবু্যনালের ভারপ্রাপ্ত বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) জুয়েল মিয়া বলেন, 'তিথিকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন প্রবেশনে পাঠানো হবে। যদি প্রবেশনে তিথি নিজেকে 'সংশোধন' করে নেন, তাহলে তাকে পাঁচ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে না। এ ট্রাইবু্যনালে তিথির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের আরও একটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে