শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১
তাপপ্রবাহের শঙ্কা নেই

মে'র শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা

যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০
মে'র শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা

বৃষ্টিপ্রবণতা বাড়ায় এপ্রিলের মতো তীব্র বা অতিতীব্র তাপপ্রবাহের আপাতত কোনো শঙ্কা নেই। তবে চলতি সপ্তাহে মৃদু তাপপ্রবাহের দেখা মিলতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ইত্যবসরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে লঘুচাপ। আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল বিশ্লেষণ করে তাদের ধারণা, চলতি মাসের শেষভাগে একটি নিম্নচাপ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এর আগে গত শুক্রবার আমেরিকা ও ইউরোপিয়ানের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে 'রিমাল'। ওমানের দেওয়া এই আরবি নামের অর্থ-বালু। ২০ থেকে ২৭ মে'র মধ্যে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আঘাত হানতে পারে।

সোমবার আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানিয়েছেন, আমাদের গাণিতিক মডেলগুলো বলছে চলতি সপ্তাহে মৃদু তাপপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। তবে সেটা কেবল দেশের পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় হতে পারে। আগামী ৭ দিনে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহেরও কোনো শঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। তবে মে মাসে যেহেতু তাপমাত্রা বেশি থাকার ইতিহাস অতীতে রয়েছে, সেহেতু তাপমাত্রা কোথাও কোথাও বাড়তেও পারে। কেননা মে মাসের এখনো ১৭ দিন বাকি। শেষের দিকে কী হবে তা এখন শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যায় না।

তবে এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, চলতি মে মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে যার মধ্যে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।

এদিকে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ একটি সংবাদমাধ্যমকে গত শুক্রবার জানিয়েছিলেন, 'বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় মূলত বর্ষা মৌসুম শুরুর পূর্বে ও বর্ষা মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পর। বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু প্রবাহ শুরু

\হহয় সাধারণত ৩০ মে'র পর থেকে ৭ জুনের মধ্যে। বর্ষা মৌসুম শুরুর পূর্বের ঘূর্ণিঝড় মৌসুম মার্চ মাসে শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড়-নিম্নচাপ কিংবা লঘুচাপও সৃষ্টি হয়নি। তাই বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট পরিমাণে শক্তি জমা হয়েছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু ২০ মে'র পর সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই এটি খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চারটি প্রধান উপাদানের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩টি উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে।'

আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের তথ্য উলেস্নখ করে এই আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ আরও জানান, আগামী ২০ থেকে ২৭ মে'র মধ্যে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের প্রবল আশঙ্কা করা হচ্ছে। 'রিমাল' নামে এই ঘূর্ণিঝড়টি মে মাসের ২৩-২৫ এর মধ্যে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সরাসরি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আঘাত হানতে পারে।

পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় সম্বন্ধে জানা যাচ্ছে যে, ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টির সম্ভাব্য সময় ১৯-২১ মে। পূর্ণিমা রাত ২৩ মে। স্থলভাগে আঘাতের সম্ভাব্য সময় ২৩-২৫ মে। স্থলভাগে আঘাতের সম্ভাব্য স্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী যে কোনো স্থান। আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম উপকূলে আঘাত করলে ঘণ্টায় ১৫০-১৮০ কিলোমিটার, পূর্ব উপকূলে আঘাত করলে ঘণ্টায় ১৭০-২০০ কিলোমিটার।

'বর্ষা পূর্ববর্তী সময়ে সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি থাকে। সে হিসেবে চলতি মে মাসের শেষদিকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে' বলে উলেস্নখ করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, 'লু হাওয়ার মতো দাবদাহ থেকে বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ কোথাও কোথাও ২০ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কিছুটা বেশি। বৃষ্টির পর ফের তাপমাত্রা বাড়ছে। যা রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। ঢাকার তাপমাত্রা থাকবে ৩৬ থেকে ৩৮ সেলসিয়াসের মধ্যে। আগামী ১৫ মে থেকে পুরো মাসজুড়েই তাপপ্রবাহ থাকতে পারে।

অন্যদিকে, সোমবার সকালে তিনদিনের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগসমূহের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সে. বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

এ ছাড়া মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগসমূহের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সে. বাড়তে পারে।

অন্যদিকে বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে