ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন

গাজীপুরে হাসপাতালের লিফটে আটকে রোগী মৃতু্যর অভিযোগ

প্রকাশ | ১৩ মে ২০২৪, ০০:০০

গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেলের লিফটে আটকে পড়ে এক নারী রোগীর মৃতু্যর অভিযোগ উঠেছে। রোববার সকালে হাসপাতালের ৩ নম্বর লিফটে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা গিয়ে লিফটে আটকে পড়া রোগীর লাশসহ অন্যদের উদ্ধার করেছে। নিহতের স্বজনরা সাংবাদিকদের কাছে লিফট অপারেটরদের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ করেছেন। ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহত মমতাজ বেগম (৫০) কাপাসিয়া উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়িগাঁও গ্রামের শারফুদ্দিন বিএসসি'র স্ত্রী। নিহতের ভাগ্নে খন্দকার শাহদত হোসেন সেলিম জানান, তার মামি মমতাজ বেগম শ্বাস কষ্ট ও হৃদরোগ নিয়ে রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ওই হাসপাতালের ১১ তলার মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে একই ভবনের ৪র্থ তলায় থাকা কার্ডিওলজি বিভাগে ট্রান্সফার করেন। তিনি বলেন, 'মামি হাঁটাচলা করতে পারলেও তখন তাকে দ্রম্নত হৃদরোগ বিভাগে নেওয়ার জন্য ট্রলিতে ওঠানো হয়। পরে মমতাজ বেগম, তার ছেলে আব্দুল মান্নান ও মেয়ে শারমিনসহ আমরা হাসপাতালের ৩ নং লিফটে উঠি। কিন্তু লিফটি হাসপাতালের ৯ম ও ১০ তলা মাঝমাঝি থাকা অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায়। তখন আমি লিফটে থাকা মোবাইল নম্বরে একাধিক ব্যক্তিকে বার বার ফোন করলেও তারা কোনো কর্ণপাত করেননি। উপরন্তু বার বার ফোন করায় তারা বিরক্ত হয়ে আমাদের গালিগালাজ করেন।' খন্দকার শাহদত হোসেন সেলিম আরও বলেন, 'একপর্যায়ে রোগী ছটফট করতে থাকলে আবারো অপারেটরদের ও ৯৯৯ নম্বরে ফোন করি। আটকে থাকার ৪৫ মিনিট পর কয়েকজন অপারেটর গিয়ে দরজা কিছুটা ফাঁক করে আবার তা বন্ধ করে চলে যায়। এ সময় অনেক কষ্টে আমরা তিনজন বেরিয়ে আসতে পারলেও মমতাজ বেগমকে বের করা সম্ভব হয়নি। পরে ৯৯৯ নম্বরে পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে লিফটের ভেতরই রোগী মারা যান। পরে জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা দরজা খুলে লাশ উদ্ধার করে।' যদি সঠিক সময়ে উদ্ধার করা হতো তা হলে তার মামীকে হয়তো বাঁচানো সম্ভব হতো বলে আক্ষেপ করেন খন্দকার শাহদত হোসেন সেলিম। এর আগে, ৪ মে হাসপাতালের ১২ তলার ভেতরের দেয়াল ও মেঝের মধ্যে থাকা ফাঁকা স্থান দিয়ে এক রোগী ১০ তলায় পড়ে গিয়ে মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। তখনও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার সপ্তাহ না ঘুরতেই আবার এ দুর্ঘটনায় মমতাজ বেগম মারা গেলেন। লিফটে আটকে পড়ে রোগীর মৃতু্যর খবরের সত্যতা স্বীকার করে হাসপাতালের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, 'প্রাথমিকভাবে জানা গেছে বিদু্যৎ চলে গেলে লিফটে যান্ত্রিক ত্রম্নটি দেখা দেয়। পরে লিফটের অপারেটর ও জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা লিফটি ফাঁক করে ঘটনার ১৫/২০ মিনিট পরে মমতাজের লাশ ও তার স্বজনদের উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় কারো ঘাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।' তিনি জানান, হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর রুবিনা ইয়াসমিনকে প্রধান করে গঠিত ঐ তদন্ত কমিটিতে অন্যদের মধ্যে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বা তার প্রতিনিধি হাসপাতালের রেসিডেন্সিয়াল মেডিসিন চিকিৎসক ওয়ার্ড মাস্টার রয়েছেন। তিন কর্ম দিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।