এসএসসির ফল প্রকাশ

এবার সেরাদের সেরা মেয়ে ৯৮৭৭৬, ছেলে ৮৩৩৫৩

১১টি সাধারণ বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ, এর মধ্যে মাদ্রাসা বোর্ডে ৭৯.৬৬ শতাংশ ও কারিগরি বোর্ডে ৭৮.৯২ শতাংশ

প্রকাশ | ১৩ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উলস্নাস। ছবিটি রোববার রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে তোলা -নাজমুল ইসলাম

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেন মোট ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্রী ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ জন এবং ছাত্র ৮ লাখ ৬ হাজার ৫৫৩ জন। এছাড়া সব বোর্ড মিলিয়ে জিপিএ-৫ নিয়ে সেরাদের সেরা হয়েছেন, ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। তাদের মধ্যে মেয়ে ৯৮ হাজার ৭৭৬ এবং ছেলে ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। সেই হিসাবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে ১৫ হাজার ৪২৩ জন। পাসের গড় হারের দিক দিয়ে এগিয়ে ছাত্রীরা। ১১টি বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। সেখানে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৫ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৮২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। সেই হিসাবে পাসের হারে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা ২ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে গণভবনে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এবারের ফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এবার পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সব বিষয়ে পূর্ণ সময় এবং পূর্ণ নম্বরে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কোভিড মহামারিতে এসএসসি পরীক্ষার সূচি এলোমেলো হয়ে পড়েছিল। চলতি বছর অনেকটা আগের ধারাবাহিকতায় ফেরে এই পাবলিক পরীক্ষা। গত ১৫ ফেব্রম্নয়ারি এসএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়, শেষ হয় ১২ মার্চ। মাদ্রাসা বোর্ডে পাস ৭৯.৬৬ শতাংশ : চলতি বছর বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার ৭৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। দাখিলে মোট শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৫ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৪ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৯ হাজার ৭১৪ জন এবং ছাত্রী ১ লাখ ১৭ হাজার ৪০ জন। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ২০৬ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ৭৩৯ এবং ছাত্রী ৭ হাজার ৪৬৭ জন। কারিগরি বোর্ডে পাস ৭৮.৯২ শতাংশ এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় পাস করেছে ৯৯ হাজার ৭২১ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৭২ হাজার ৯৮৬ এবং ছাত্রী ২৬ হাজার ৭৩৫ জন। গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। এ বোর্ডে ফেল করেছে ২৬ হাজার ৬৬৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮১ জন। শতভাগ পাস ও শূন্য পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবার সারাদেশের ২ হাজার ৯৬৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছেন। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে শতভাগ পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৫৪টি। সেই হিসাবে শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৬১৪টি। অন্যদিকে শূন্য পাস অর্থাৎ কেউ পাস করেনি- এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে শূন্য পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ৪৮টি। এ বছর দেশের ৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবার কেউই পাস করতে পারেনি। প্রবাসে পাস করল ২৯৮ শিক্ষার্থী এ বছর দেশের বাইরের ৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩৪৭ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেছে ২৯৮ জন। ফেল করেছে ৪৯ জন। গড় পাসের হার ৮৫ শতাংশ ৮৮ শতাংশ। শতভাগ পাস করেছে দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দেশসেরা যশোর বোর্ড যশোরের স্টাফ রিপোর্টার জানান, এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হারে দেশসেরার মুকুট পুনরুদ্ধার করেছে যশোর বোর্ড। এ বোর্ডের পাসের হার ৯২ দশমিক ৩৩। যা দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২২ সালেও ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ পাসের হার নিয়ে দেশসেরা হয়েছিল এই বোর্ড। তবে গত বছর পাসের হার ৯ শতাংশ করে ৮৬ দশমিক ১৭ ভাগে নেমে যাওয়ায় শীর্ষস্থান হাতছাড়া হয়েছিল। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তি গত বছরের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৭৬১ জন; গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৬১৭। রোববার যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ জানান, 'এ বছর যশোর বোর্ডে মোট ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২৬ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৭ জন। পাসের হার ৯২ দশমিক ৩৩ ভাগ। পাসের হারের এই ফলাফলে যশোর বোর্ড এবার দেশসেরা অবস্থান ফিরে পেয়েছে। এর আগে ২০২২ সালেও দেশসেরা হয়েছিল যশোর বোর্ড। এছাড়া এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৭৬১ জন। এদের মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ৪৩১ ও ছাত্র ৯ হাজার ৩৩০ জন। যশোর বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছরের মতো এবারও যশোর বোর্ডে অন্য বিভাগের তুলনায় তাক লাগানো ফলাফল করেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে মোট ৪১ হাজার ৪৬৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৯ হাজার ৮৬৭ জন। পাসের হার ৯৬ দশমিক ১৪ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭ হাজার ৯৪৭৬ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে মেয়েরা। সর্বোচ্চ এ ফল অর্জনকারীদের মধ্যে ৮ হাজার ৮৪৮ জন ছাত্রী ও ৮ হাজার ৬২৮ জন ছাত্র। বোর্ডে পাসের হারে বিজ্ঞানের পরেই রয়েছে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ। এই বিভাগ থেকে ১৭ হাজার ৯৬৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৬ হাজার ৯৮০ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৫০ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪৮ জন। এদের মধ্যে ছাত্রী ৭০০ ও ছাত্র ৩৪৮ জন। মানবিক বিভাগ থেকে এক লাখ ১ হাজার ৪৯১ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ৯১ হাজার ৭৩০ জন। পাসের হার ৯০ দশমিক ৩৮ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ২৩৭ জন। এদের মধ্যে ছাত্রী ১ হাজার ৮৮৩ জন, ছাত্র ৩৫৪ জন। যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ জানিয়েছেন, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যথাযথ নজরদারি এবং অভিভাবকদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারায় এই ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে যশোরে বোর্ডে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে প্রশ্ন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সেভাবেই গড়ে উঠেছে। এছাড়া যশোর বোর্ডের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে শিক্ষার্থীদের মূল বইয়ের প্রতি নির্ভরতা বেড়েছে। এজন্য তারা ভালো ফলাফল অর্জন করেছে। রাজশাহী বোর্ডে বেড়েছে পাসের হার এদিকে রাজশাহী অফিস জানায়, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এসএসসিতে বেড়েছে পাসের হার ও জিপিএ-৫। এবার ৮৯ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। যা গত বছর ছিল ৮৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮ হাজার ৭৪ শিক্ষার্থী। যা গত বছর ছিল ২৬ হাজার ৮৭৭ জন। বরাবরের মতো এবারও পাস ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তর দিক থেকে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে মেয়েরা। এবার মেয়েদের পাসের হার ৯১ দশমিক ৯০ শতাংশ। আর ছেলেরা পাস করেছে ৮৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এছাড়াও জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৯৫ ছাত্রী। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৫৭৯ জন ছাত্র। এবার বেড়েছে শতভাগ পাস ও শূন্য ফলাফলপ্রাপ্ত স্কুলের সংখ্যা। ২ হাজার ৬৮৫ স্কুলের মধ্যে শতভাগ পাস করেছে ২৮৯ স্কুল থেকে। যা গত বছর ছিল ১৭৮টি স্কুল। এছাড়াও এবার দুটি স্কুল থেকে কেউ পাস করেনি। যা গত বছর ছিল একটি। রোববার দুপুরে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। আরিফুল ইসলাম জানান, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এবার পরীক্ষার্থী ছিল দুই লাখ ৮৫৩ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ৯৮ হাজার ৯২৯ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন এক লাখ ৭৭ হাজার ৫৫৮ জন। অর্থাৎ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি ২১ হাজার ৩৭১ জন। এদিকে, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। দুপুরে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর থেকে অভিনন্দন বার্তায় রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, 'যেসব শিক্ষার্থী বন্ধুরা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে আমি তোমাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। পাশাপাশি তোমরা যারা যে কোনো কারণেই হোক উত্তীর্ণ হতে পারনি, তোমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এখন থেকে চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই তোমরা এ বাধা অতিক্রম করে ভালো ফল অর্জন করতে পারবে। আমি তোমাদের উজ্জ্বল ও সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করছি।' চট্টগ্রামে কমেছে জিপিএ-৫ চট্টগ্রাম অফিস জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রামের অধীনে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৮২৩ জন শিক্ষার্থী। গত বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৪৫০ জন। এবার মোট এক হাজার ১২৫টি বিদ্যালয় থেকে এক লাখ ৪৫ হাজার ৭৫৩ জন পরীক্ষার্থী ২১৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয়। রোববার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ফলাফল ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এ এম এম মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, চলতি বছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এসএসসিতে পাসের হার বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার। গেল বছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এবার তা বেড়ে হয়েছে ৮২ দশমিক ২৯ শতাংশ। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের পাশের হার ৯৪ দশমিক ৫২, মানবিক বিভাগের পাসের হার ৭৩ দশমিক ২৩ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পাসের হার ৮৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্র পাসের হার ৮২ দশমিক ২৯ শতাংশ ও ছাত্রী পাসের হার ৮৩ দশমিক ২১ শতাংশ। আর গতবারে ছাত্র পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও ছাত্রী পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৮২৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫ হাজার ৭৩ জন এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭৫০ জন। আর গত বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ছিল ১১ হাজার ৪৫০ জন। তন্মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৫ হাজার ৪ জন ও ছাত্রী ৬ হাজার ৪৪৬ জন। এ এম এম মুজিবুর রহমান আরও বলেন, এবার পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ছিল ৬৩ হাজার ৫৮১ জন ও ছাত্রী ৮১ হাজার ৪৪৩ জন। তিন বিভাগেই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরে এবার পাসের হার ৮৭ দশমিক ০৬। চট্টগ্রাম মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলার পাসের হার ৮৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। চট্টগ্রাম মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৮৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। এ ছাড়া কক্সবাজার জেলায় ৮৩ দশমিক ৬৪, রাঙামাটিতে ৭২ দশমিক ৭২, খাগড়াছড়িতে ৭২ দশমিক ২৫ ও বান্দরবানে পাসের হার ৭২ দশমিক ৭০ শতাংশ। এবার শতভাগ পাস করেছে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৪টি।

 

দিনাজপুরে পাসের হার ৭৮.৪৩ শতাংশ
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ১০৫ জন। এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা দুটিই বেড়েছে। গতবারে পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৪১০ জন। ফলাফলে অন্যবারের মতো এবারও ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। মেয়েদের ৮১ দশমিক ০৭ শতাংশ ও ছেলেদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় শিক্ষা বোর্ডে এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়। পরে গণমাধ্যম কর্মীদের ই-মেইলে ফলাফল পাঠানো হয়।
ঘোষিত ফলাফলে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড জানায়, ২০২৪ সালে এই শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৪৪৪ জন। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৮৪ জন পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩৫ জন পরীক্ষার্থী। গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ১০৫ জন। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে ৪২ হাজার ৭৪৯ জন পরীক্ষার্থী। এছাড়া পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল ২২৬০ জন পরীক্ষার্থী ও বহিষ্কৃত হয়েছে ৬৬ জন পরীক্ষার্থী।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড আরও জানায়, গতবারের মতো এবারও ছাত্রীদের পাসের হার বেশি। ছাত্রীদের পাসের হার ৮১ দশমিক ০৭ শতাংশ আর ছাত্রদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এবারে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ১০৫ জন। এদের মধ্যে ছাত্রী ৯২৪৬ জন এবং ছাত্র ৮৮৫৯ জন। 
শিক্ষা বোর্ড আরও জানায়, এবার শতভাগ পাস করেছে ৭৭টি বিদ্যালয়। যা গতবার ছিল ৮০টি। আর এবার শূন্য ফলাফল বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪টি। যা গতবার ছিল মাত্র একটি।

বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৮৯.১৩%
বরিশাল অফিস জানায়, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় বরিশাল বোর্ডে ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। যা গত বছর ছিল ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ১৪৫ জন। গত বছর যা ছিল ৬ হাজার ৩১১ জন। রোববার দুপু?রে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন কুমার গাইন।
তিনি আরও জানান, বরিশালে এবার মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৮৮ হাজার ৮৪৫ জন। এর মধ্যে অংশ নিয়েছে ৮৭ হাজার ৭৩৪ জন। আর পাস করেছে ৭৮ হাজার ১৯৭ জন। বহিষ্কার হয়েছে ৫১ জন। তিনি আরও জানান, বিভাগের ৬ জেলার মধ্যে ১৯৬টি কেন্দ্রে এ বছর ১৪৮৯টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ২২২টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে। তবে পাসের হারের সঙ্গে স?ঙ্গে এ বছর জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও কমেছে।

সিলেটে কমেছে পাসের হার 
সিলেট অফিস জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সিলেট বোর্ডে পরীক্ষায় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৭১ জন। সিলেটে গত বছরের তুলনায় পাসের হার এবং জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে।
রোববার দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সিলেট বোর্ড কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন। 
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এ বছর সিলেট বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৭৩ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৮০ হাজার। এ বছর পাসের হার ৭৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৭১ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮ হাজার ৫০৫ জন।

ময়মনসিংহে পাসের হার ৮৫%
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার শতকরা ৮৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ১৭৬ জন শিক্ষার্থী।
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শামসুল ইসলাম জানান, এক হাজার ৩১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক লাখ ১৯ হাজার ২৩৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে এবার পাস করেছে এক লাখ এক হাজার ৩৫৮ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ১৭৬ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১২ হাজার ৪৩৭ জন, মানবিক বিভাগে ৬১৮ জন এবং ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে ১২১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এবারও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। ৫ হাজার ৯৫২ জন ছেলে ও ৭ হাজার ২২৪ জন মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। 
শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেলা ওয়ারি পাসের হার জামালপুরে ৮৯ দশমিক ০৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৮৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ, শেরপুরে ৮৩ দশমিক ২২ শতাংশ এবং নেত্রকোনায় ৮২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এবার ৮০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। 
ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এ বছর ২৭৭ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই কৃতকার্য হয়েছে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫৮ জন পরীক্ষার্থী। 
প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র শিক্ষক রোকন উদ্দিন বলেন, ‘২৭৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৫৮ জনের জিপিএ-৫সহ সবাই পাস করেছে। আমরা আশা করছি বোর্ড চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে আরও ১০ থেকে ১২ জনের জিপিএ-৫ আসবে। তবে আমাদের শতভাগ পাসের হার আমরা ভবিষ্যতেও ধরে রাখতে চাই।’

কুমিল্লা বোর্ডেও মেয়েরা এগিয়ে
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা জানান, ফলাফলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে পাসের ৭৯.২৩ শতাংশ। গড় পাসের হারে ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে তিনটি বিভাগেই ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। এবার এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ১২ হাজার ১০০ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৮.৪২ শতাংশ। রোববার সকাল ১১টায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে এ ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের সচিব প্রফেসর নুর মোহাম্মদ। 
ফলাফল বিবরণীতে দেখা গেছে, এ বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৬টি জেলার ১ হাজার ৭৮০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩২৫ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৮১ জন। এর মধ্যে ৫৮ হাজার ৭৮২ জন ছেলে ও ৮৩ হাজার ২৯৯ জন মেয়ে পাস করেছে। এক্ষেত্রে মেয়েদের গড় পাসের হার ৭৯.৬৪ শতাংশ এবং ছেলেদের ৭৮.৬৬ শতাংশ। মেয়েদের মধ্যে ৬ হাজার ৮৩৬ জন ও ছেলেদের মধ্যে ৫ হাজার ২৬৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। বিভাগভিত্তিক পাসের হারে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৫ শতাংশ, এর মধ্যে ছেলে ৯৪.৭৪ ও মেয়ে ৯৫.২১ শতাংশ। মানবিক বিভাগে পাসের হার ৬৬.৯৪ শতাংশ, এর মধ্যে ছেলে ৬১.০৪ ও মেয়ে ৬৮.৬৯ এবং বাণিজ্য বিভাগে পাসের হার ৭৫. ৪৯ শতাংশ, এ বিভাগে ৭২.৫৩ শতাংশ ছেলে ও ৭৯.৩৬ শতাংশ মেয়ে পাস করেছে। এ বছর শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৯৮টি যা গত বছর ছিল ৭৯টি।
এদিকে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৬টি জেলার মধ্যে জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে কুমিল্লা জেলার ৫৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৬১ হাজার ৯৩০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৫১ হাজার ৩৯ জন। পাসের হার ৮২.৪১ শতাংশ। এ জেলার ৫ হাজার ৩৪৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। চাঁদপুর জেলার ২৮৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২৭ হাজার ২১২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২২ হাজার ৬৭৩ জন। পাসের হার ৮৩.৩২ শতাংশ। এ জেলার ২ হাজার ২৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ২৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২৫ হাজার ২০০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২০ হাজার ৩২৩ জন। পাসের হার ৮০.৬৫ শতাংশ। এ জেলার ১ হাজার ৭১৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। নোয়াখালী জেলার ২৯৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৩১ হাজার ৬৪৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২১ হাজার ৯০৪ জন। পাসের হার ৬৯.২১ শতাংশ। এ জেলার ১ হাজার ৬৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ল²ীপুর জেলার ১৭৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬ হাজার ১২৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১২ হাজার ৭৮০ জন। পাসের হার ৭৯.২৫ শতাংশ। এ জেলার ৮০০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ফেনী জেলার ১৮৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১৭ হাজার ২০৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৩ হাজার ৩৬২ জন। পাসের হার ৭৭.৬৫ শতাংশ। এ জেলার ১ হাজার ১৫০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

পাবনা ক্যাডেট কলেজের সবাই পেল জিপিএ-৫
পাবনা প্রতিনিধি জানান, উত্তরের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাবনা ক্যাডেট কলেজ তার সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। এসএসসি পরীক্ষায় পাবনা ক্যাডেট কলেজের ৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।
রোববার প্রকাশিত ফলাফলের ভিত্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিসেস সিতারা আমিন।
তিনি বলেন, এ সাফল্য শুধু প্রতিষ্ঠানের নয়। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সবার। এমন সাফল্যে কর্মকর্তা, শিক্ষক, অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানান তিনি।