শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

পরিকল্পনা হতে হবে পরিবেশবান্ধব

প্রকৌশলীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ মে ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে আয়োজিত আইইবির কনভেনশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন -স্টার মেইল

পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা হাতে নিতে প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) ৬১তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'আজকে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। কারণ আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করি এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করি। যে পরিকল্পনা হোক, সেটা পরিবেশবান্ধব হতে হবে।

তিনি বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তন থেকে দেশকে রক্ষা করা আমাদের লক্ষ্য। খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্ববাস প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি পরিকল্পনাগুলো যেন টেকসই হয়।'

যেকোনো পরিকল্পনায় খরচের বিষয়টিও মাথা রাখতে হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, 'খরচের দিকটাও বিবেচনায় নিতে হবে। কোনো পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে সেই পরিকল্পনা থেকে রিটার্ন কী আসবে, জনগণ কীভাবে উপকৃত হবে, এভাবেই আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'শুধু একটা নির্মাণ কাজ করার জন্য যেন নির্মাণ করা না হয়, সেটাই আমার অনুরোধ। সেটার জন্য আমি আমার পার্টির এমপিদেরকেও নির্দেশনা দিয়েছি, একনেকের মিটিংয়েও বলেছি। এ রকম কোনো প্রকল্প দেখলে অবশ্যই আমি সেটা অনুমোদন করব না।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যেটা আমাদের মানুষের কাজে লাগবে, দেশের কাজে লাগবে, যে প্রকল্প শেষ করলে মানুষ লাভবান হবে, আমাদের কিছু উপার্জন হবে, সেটাই আমরা দেখতে চাই। সেটাই পরিকল্পনা করবেন, আপনাদের কাছে আমি এটাই চাই।'

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমলে মাথাপিছু আয় প্রতিবছর মাইনাসে ছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, 'জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতা দখল করেছিল, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে মার্শাল ল' জারি করেছিল, তাদের আমলে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়নি।

জিয়াউর রহমানের আমলে প্রতিবছর ছিল মাইনাস। ১৯৯১ সালে এসে দেখা গেল যে মাত্র ৬ ডলার বেড়েছিল। ছিয়াত্তর সাল থেকে একানব্বই সাল এই দীর্ঘ সময় মাত্র ছয় ডলার বাড়ে। এই ছিল বাংলাদেশের অবস্থা।'

প্রকৌশলীদের গবেষণায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'কৃষি যান্ত্রিকতায় আরও এগিয়ে যেতে প্রকৌশলীদের যে উদ্ভাবনী শক্তি, মেধা আছে, সেটা কীভাবে দেশের কাজে লাগাতে পারি তাতে নজর দিতে হবে।

'যা উৎপাদন হচ্ছে তা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানির দিকে নজর দিতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের গবেষণা ও পরিকল্পনা দরকার। গবেষণা কিন্তু চলমান প্রক্রিয়া। এজন্য বারবার গবেষণা দরকার।'

তার সরকারের লক্ষ্য তৃণমূল থেকে উন্নয়ন করা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, 'তৃণমূলের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, মাথাপিছু আয় বাড়ানো, সেটা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

'উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব সেই পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। সব চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবিলা করতে পারব। সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।'

দেশের উন্নয়ন অনেকের ভালো লাগে না উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একটি গোষ্ঠী আছে তাদের কিছুই ভালো লাগে না। পদ্মা সেতুর সুফল মানুষ ভোগ করছে, মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হয়েছে। এটা তারা মেনে নিতে পারছে না। তাদের কী সমস্যাটা হচ্ছে? তারা লজ্জা পাচ্ছে কিনা?

'স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ে সমালোচনা করছে। আগে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য ডলার খরচ করে বিদেশ থেকে সংযোগ নিতে হতো। আজ তা লাগে না। দুর্গম এলাকায় আমরা সংযোগ করতে পারছি। গভীর সমুদ্রসীমা সেখানে দেখভাল করতে পারছি। দ্বিতীয়বার যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে, সেটি আরও বিস্তৃত সেবা দিতে পারবে।'

সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'পরমাণু বিদু্যৎকেন্দ্র যেটি পরিবেশ দূষণ করে না, আজকে এই সব আধুনিক প্রযুক্তিতে যুক্ত হব না কেন? পিছিয়ে থাকব? যারা এর সমালোচনা করেন তারা গাড়িতে উঠে কেন, পেস্ননে উঠে কেন? গরুর গাড়িতে চড়ে না কেন?

'কে কি বলল সেটিতে কিছু আসে যায় না। সাধারণ মানুষ ভালো আছে কিনা, তাদের উন্নতি হচ্ছে কিনা, তাদের ভাগ্য উন্নয়ন হচ্ছে কিনা সেটিই আমার দেখার বিষয়। আপনারাও আপনাদের প্রত্যেকটি কাজে তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে কিনা- সেটিতে নজর দিতে হবে।'

সরকারপ্রধান বলেন, 'তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখেই আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন।'

এ সময় মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ গঠনে প্রকৌশলীর অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আইইবির সভাপতি মো. আবদুস সবুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এস এম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে