সাকিব-মুস্তাফিজের দারুণ বোলিংয়ে জিতল বাংলাদেশ
প্রকাশ | ১১ মে ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া প্রতিবেদক
টানা তিন জয়ের পর চতুর্থ টি২০তে জিম্বাবুয়ের কাছে প্রায় হারতেই বসেছিল বাংলাদেশ। মান বাঁচালেন বোলাররা। সাকিব ও মুস্তাফিজের দারুণ বোলিংয়ে মাচ বাঁচল টাইগারদের।
ব্যাট হাতে শুভ সূচনার পর অল্পেই গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ বল হাতেও করেছিল দুর্দান্ত শুরু। তবে হাল না ছাড়া জিম্বাবুয়ে লড়েছে শেষ পর্যন্ত। যদিও টাইগারদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি তারা। আর তাই টানা চার জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে স্বাগতিকরা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে ১৯.৫ ওভারে ১৪৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে নির্ধারিত ১৯.৪ ওভারে ১৩৮ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। টাইগারদের জয় ৫ রানে।
ওপেনিং জুটিতে ১০১ রান তুলে নেওয়ার পর স্বভাবতই ২০০ রানের প্রত্যাশা করেছিলেন টাইগার সমর্থকরা। তবে রীতিমতো হতাশায় ডুবিয়েছেন টাইগার ব্যাটাররা। এরপর ৪২ রানের ব্যবধানে ১০ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এতে ফীকে হয়ে যায় বড় পুঁজির স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত সবকটি উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়েকে ১৪৪ রানের মামুলি লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় শান্তর দল।
ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে উলস্নাসের মুহূর্ত এনে দেন তাসকিন আহমেদ। পুল শটে টাইমিংয়ে গড়বড় করে মিড অনে সাকিব আল হাসানের তালুবন্দি হন ব্রায়ান বেনেট। ৪ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি জিম্বাবুয়ের ওপেনার।
দলীয় শূন্য রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা চালান আরেক ওপেনার টাডিওয়ানাশে মারুমানি ও অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। তারা মনোযোগী ছিলেন তাড়াতাড়ি রান ওঠানোয়। তবে এই জুটিকে মাথাব্যথার কারণ হতে দেননি ডানহাতি পেসার তাসকিন। তার ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান রাজা। চতুর্থ ওভারে ১০ বলে ৪ চারে ১৭ রানে আউট হন তিনি। ভাঙে ১৯ বলে ২৮ রানের জুটি।
এই ধাক্কা সামলে না উঠতেই জিম্বাবুয়ের ইনিংসের আরেক আঘাত। পরের ওভারে সাকিব আল হাসান বাঁ-হাতি স্পিনে এলবিডবিস্নউয়ের ফাঁদে ফেলেন মারুমানিকে। ১৩ বলে ৩ চারে তিনি করেন ১৩ রান।
জিম্বাবুয়ে পাওয়ার পেস্ন শেষ করে ৩ উইকেটে ৩৮ রান তুলে। চাপ এড়িয়ে প্রয়াস থাকলেও তাদের চতুর্থ উইকেট জুটিকেও বড় হতে দেয়নি বাংলাদেশ। ইনিংসের দশম ওভারে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডবিস্নউ হন ক্লাইভ মাদান্দে। ১৮ বলে ১ চারে তার রান ১২। ক্যাম্পবেলের সঙ্গে তার জুটি থামে ২৫ বলে ২৯ রানে।
এই ওভারের প্রথম বলেই অবশ্য উইকেট পেতে পারতেন রিশাদ। তবে সস্নগ সুইপে ক্যাম্পবেল ক্যাচ তুললেও ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে তা লুফে নিতে ব্যর্থ হন তাওহিদ হৃদয়। ব্যক্তিগত ১১ রানে বেঁচে যান ক্যাম্পবেল। উল্টো আসে একটি রান।
১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৫৮ রান তোলা জিম্বাবুয়েকে আশা দেখাচ্ছিলেন রায়ান বার্ল ও জন ক্যাম্পবেল। পঞ্চম উইকেট জুটিতে তারা দু'জন প্রতিরোধ গড়েন। ২৯ বলে দলীয় সংগ্রহে যোগ করেন ৩৫ রান। তাতে ১৪.২ ওভারে জিম্বাবুয়ের রান বেড়ে হয় ৯২। কিন্তু পরের বলেই সাজঘরে ফিরেন বার্ল। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ২০ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ১৯ রান আসে তার ব্যাট থেকে। একই ওভারের শেষ বলে আউট হন নতুন ব্যাটসম্যান লুক জংওয়ে। তিনি ২ বলে ১ রান করে রিশাদ হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন।
১২ বলে ২১ রান প্রয়োজন ছিল জিম্বাবুয়ের। চ্যালেঞ্জিং সমীকরণে হাতের নাগালে ম্যাচ নিয়ে গিয়েছিল সফরকারীরা। তবে মুস্তাফিজের নৈপুণ্যে ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশ। ইনিংসের ১৯তম ওভারে আক্রমণে এসে ফারাজ আকরামকে ফেরান এই পেসার। স্কয়ার লেগে ক্যাচ নেন তানজিদ।
শুক্রবার মিরপুরে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯ দশমিক ৫ ওভারে সবক'টি উইকেট হারিয়ে ১৪৩ সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে ৩৭ বলে সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন তানজিদ। ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনিং জুটিতে দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। কোনো উইকেট না হারিয়েই ১১ ওভারে ১০০ রান তুলে ফেলেন দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও তানজিদ হাসান। দলীয় ১০১ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করতে থাকা তানজিদ। জঙ্গির বলে ক্যাম্পবেলের মুঠোবন্দি হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫২ রান। তরুণ এই ওপেনার ফেরার পর আরেক ওপেনার সৌম্যও উইকেটে থিতু হতে পারেননি। ফেরার আগে ২ ছক্কা ও তিন চারে ৩৪ বলে ৪১ রানের ইনিংস সাজান সৌম্য।
এবার সমর্থকদের হতাশ করেন তাওহিদ হৃদয়। রাজার বলে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ-স্কয়ার লেগে বেনেটের তালুবন্দি হন মিডল-অর্ডার এই ব্যাটার। দীর্ঘ ১০ মাস পর টি২০তে ফিরে ৩ বলের বেশি টিকতে পারেননি সাকিব আল হাসান। বেনেটের বলে বোল্ড হয়ে মাত্র এক রানেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। এরপর ওভারের শেষ বলে শান্তকে ফিরিয়েছেন বেনেট।
এরপর একে একে ফেরেন জাকির, রিশাদ, তাসকিন, তানভির, তানজিম এবং ফিজ। এতে নির্ধারিত ২০ ওভারের আগেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত সবক'টি উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের সেরা বোলার জঙ্গে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া বেনেট এবং গারাভা দু'টি ও রাজা একটি করে উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ:১৯.৫ ওভারে ১৪৩ (তানজিদ ৫২, সৌম্য ৪১, হৃদয় ১২, শান্ত ২, সাকিব ১, জাকের ৬, রিশাদ ২, তাসকিন ০, তানজিম ৬, মুস্তাফিজ ৩, তানভির ৩*; রাজা ১/২৪, মুজারাবানি ১/৩০, এনগারাভা ২/২৭, বেনেট ২/২০, জঙ্গুয়ে ৩/২০, ফারাজ ০/৯, মাসাকাদজা ০/৭)।
জিম্বাবুয়ে:১৯.৪ ওভারে ১৩৮ (মারুমানি ১৪, বেনেট ০, রাজা ১৭, ক্যাম্পবেল ৩১, মাদান্দে ১২, বার্ল ১৯, জঙয়ে ১, ফারাজ ১১, মাসাকাদজা ১৯*, বেস্নসিং ৮, রিচার্ড ০, তাসকিন ২/২০, সাকিব ৪/৩৫, মুস্তাফিজ ৩/১৯, রিশাদ ১/৬, তানজিম সাকিব ০/৪২, তানভীর ০/১৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৫ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মুস্তাফিজুর রহমান।