বিআরটি (বাসর্ যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফুল বাবু হত্যায় জড়িত এক বাস হেলপারকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব। ইতোপূর্বে পুলিশ মামলার এক নম্বর আসামি বাস চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রায় এক মাস চেষ্টার পরর্ যাব সদস্যরা হেলপারকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। সামান্য কথা কাটাকাটির জেরে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় প্রকৌশলীকে। হত্যাকান্ডে জড়িত আরও ৪ জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গত ৯ মে দিবাগত রাত ২টার দিকের্ যাব-১ এর সদস্যরা সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের সূত্রধরে ঢাকার দারুস সালাম থানা এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থিত ইন্ট্রাকো ফিলিং স্টেশনের সামনে থাকা আহাদ পরিবহণ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় প্রকৌশলী হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ২ নম্বর আসামি মো. মাসুদ রানাকে (৩৪)।
র্
যাব-১ এর সহকারী পরিচালক (অপস্ এন্ড মিডিয়া অফিসার) সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান জানান, গ্রেপ্তারের সময় মাসুদ নিজের নাম ইচ্ছাকৃতভাবেই ভুল বলছিল। অভিযান পরিচালনাকারীর্ যাব সদস্যদের গোলকধাঁধায় ফেলে দেয়ার চেষ্টা করেছিল মাসুদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মাসুদ রানার নিজের প্রকৃত সত্য নাম বেরিয়ে আসে।
মাসুদের পিতার নাম মো. আনোয়ার হোসেন। মায়ের নাম মোছা. মোসলেমা বেগম। বাড়ি রংপুর সদর জেলার কোতোয়ালি থানাধীন ধাপ কটকি পাড়ার ৬/১ নম্বর সড়কের ১৮১ নম্বরে। ঘটনার পর থেকেই মাসুদ নিজের নাম ঠিকানা পরিবর্তন করে আত্মগোপনে ছিল।
র্
যাব কর্মকর্তা আরও জানান, চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৭ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ওভারব্রিজের নিচে বাসে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিলেন প্রকৌশলী ফুল বাবু (৩৯) ও তার অফিস স্টাফ ইয়াছিন (৩০)। এ সময় আসমানী পরিবহণের ঢাকা-মদনপুরগামী ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৯৪৭৭ নম্বরের বাসটি সেখানে থামে। তারা বাসে ওঠার চেষ্টা করলে হেলপার মাসুদ রানা তাদের বাধা দেন। এ সময় তারা জরুরি কাজের কথা বলে বাসে ওঠার চেষ্টা করেন।
র্
যাব জানায়, কিন্তু হেলপার কোনোভাবেই তাদের বাসে তুলবেন না। এ নিয়ে হেলপারের সঙ্গে প্রকৌশলী ও ইয়াছিনের কথা কাটাকাটি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হেলপার মাসুদ আচমকা ইয়াছিনকে টান মেরে বাসে তুলে ফেলে। চালককে দ্রম্নত বাস চালাতে বলেন। চালকও তাই করেন। পরে ইয়াছিনকে হেলপার ও বাস চালকসহ তাদের সহযোগীরা মিলে মারধর করে হাউজ বিল্ডিং এলাকায় নামিয়ে দেয়।
র্
যাব জানায়, আচমকা এমন ঘটনায় প্রকৌশলী ফুল বাবু মোবাইল ফোনে সিজিজিসি (চায়না গেজহুবা গ্রম্নপ কোম্পানি) লিমিটেডের অন্যান্য স্টাফদের বিষয়টি জানান। কোম্পানির অপর কর্মকর্তা কর্মচারীরা আসমানী পরিবহণের বাসটিকে টঙ্গীর আব্দুলস্নাহপুর গিয়ে শনাক্ত করেন। ইয়াছিনকে মারধর করার বিষয় নিয়ে বাস শ্রমিক কর্মচারী ও সিজিজিসি কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মারামারি হয়। সেখানে ফুল বাবুও উপস্থিত ছিলেন।
র্
যাব সূত্র জানায়, ঘটনাটি সেখানেই শেষও হয়ে যায়। কিন্তু মারামারির শেষ পর্যায়ে হেলপার মাসুদ তার ৪/৫ জন সহযোগীকে নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারের উপর হামলা চালায়। নির্মমভাবে পিটায় ফুল বাবুকে। এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। হামলাকারীরা তাকে ফেলেই পালিয়ে যায়। দ্রম্নত ফুল বাবুকে তার সহকর্মীরা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুপুর ২টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
র্
যাব জানায়, খবর পেয়ে ফুল বাবুর স্ত্রী মোছা. জোসনা খাতুন (৩৫) তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে যান। তিনি স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় ১৪ এপ্রিল নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয় বাসটির চালক আল আমিন ও হেলপার মাসুদসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে। ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ইঞ্জিনিয়ার হত্যার ঘটনায় সিজিজিসি কোম্পানিতে কর্মরত দেশি-বিদেশিদের মধ্যে চরম অসন্তোষ শুরু হয়। নিহতের স্ত্রীর পিতার মো. আব্দুল করিম। মায়ের নাম মোছা. ফাতেমা খাতুন। বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর থানাধীন মোগলাবাসা ইউনিয়নের কিশামত মালভাঙ্গা।
মামলাটির তদন্তের সার্বিক বিষয় সম্পর্কে উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ মফিজুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, মামলায় এজাহারনামীয় দুই আসামিই গ্রেপ্তার হলো। ফুল বাবুর মৃতু্যর ঘটনাটি সত্যিই হৃদয় বিদারক। কারণ নিহতের একটি প্রায় ১০ বছর ও একটি প্রায় ৬ বছর বয়সি মেয়ে আছে বলে জানা গেছে। মামলাটি গভীরভাবে তদন্তের পাশাপাশি বিআরটি প্রকল্পে ওই এলাকায় কর্মরতদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
হত্যা মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আল আমিন যায়যায়দিনকে বলেন, মামলা দায়েরের পর পরই অভিযান চালিয়ে বাসটি জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে মামলার এক নম্বর আসামি বাসটির চালক আল আমিনকে গত ১৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। ফুল বাবুকে হত্যায় কোনো ধরনের লাঠিসোটা বা দেশীয় কোনো অস্ত্র ব্যবহৃত হওয়ার তথ্য বা আলামত পাওয়া যায়নি। বাসের চালক ও হেলপারসহ তাদের সহযোগীদের নির্মম পিটুনিতে ফুল বাবুর মৃতু্য হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। অজ্ঞাত আরও চার আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিহত ফুল বাবু ও তার স্ত্রীর বাড়ি একই গ্রামে।