প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার দেশবাসীকে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল করতে বহুমাত্রিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। আমরা বহুমাত্রিক কর্মসূচি হাতে নিয়ে প্রত্যেক মানুষকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা দারিদ্র্যবিমোচনের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। সরকারের নেওয়া কর্মসূচিগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে দেশে কেউ গরিব থাকবে না।
শুক্রবার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দরিয়ারকুল গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি আমার বাড়ি, আমার খামার, জনগণকে আর্থিক অনুদান প্রদান, সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প এবং গ্যারান্টি ছাড়া ঋণ প্রদান, সমাজ থেকে দারিদ্র্যবিমোচন করার জন্য যুবকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি বহুমাত্রিক কর্মসূচির বর্ণনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র সঞ্চয় নিশ্চিত করতে এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা করতে সারা দেশে সমবায় সমিতি গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এ জন্য প্রতিটি এলাকায় সমবায় সমিতি গঠন করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে আওয়ামী লীগ নেতাদের আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান। বাংলাদেশকে আত্মনির্ভরশীল করতে সারা দেশে সমবায় গঠনের ধারণা ছড়িয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সবাই যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সে জন্য আমরা কাজ করছি।
পরে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় চত্বরে দরিদ্রদের মাঝে রিপার মেশিন, সার, ল্যাপটপ, ১০টি সাইকেল, ১০টি রিকশা ভ্যান, ৩০টি সেলাই মেশিন এবং ৩৮ জনকে ৪০ হাজার টাকার আর্থিক অনুদান, ১০ জোড়া কবুতর এবং ৩৮ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন। এ সময় সুবিধাভোগীরা তাদের সরঞ্জাম ও আর্থিক অনুদান পেয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতার কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজি মাহবুবুল আলম।
শেখ হাসিনার দেওয়া ৯ দশমিক শূন্য ৫ একর জমিতে গড়ে ওঠে দরিয়াকুল সমবায় সমিতি। দরিয়াকুল গ্রাম উন্নয়ন সমিতির উপদেষ্টা শেখ হাসিনা সমবায় পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি সমবায়ের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, সমবায় ব্যবস্থায় জমির মালিকানা পরিবর্তন হবে না এবং ফসলকে তিন ভাগে ভাগ করা হবে। প্রতিটি ফসলের একটি অংশ মালিক ও কৃষকরা এবং সমবায়ের কাছে একটি অংশ যায়। তিনি অন্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার আহ্বান জানান।
সরকার দেশবাসীর নিরাপদ ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শুধু বর্তমানের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও কাজ করছি। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সুবিধাভোগীদের ভবিষ্যৎ জীবন সুরক্ষিত করবে।
শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি পরিবেশ রক্ষায় আওয়ামী লীগের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বর্ষাকালে দলের প্রত্যেক সদস্যকে অন্তত তিনটি করে গাছের চারা লাগানোর আহ্বানও জানান।
ছোট বোনকে নিয়ে ফিরে গেলেন শৈশবে
এদিকে বৈশাখের তপ্ত দুপুরে নিজ গ্রামের সবুজে ঘেরা মায়াময় পরিবেশে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে যেন শৈশবে ফিরে গেলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি তুললেন সোনালু গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। শুক্রবার টুঙ্গিপাড়ার বাসভবন থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাওয়ার পথে অবতারণা ঘটে এই অনন্য দৃশ্যের।
সোনালু ও কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়া সুনিবিড় পথ পায়ে হেঁটে পেরোবার সময় প্রধানমন্ত্রী মধুমতি নদীর সঙ্গে যুক্ত খালের পাশে দাঁড়িয়ে পড়েন হঠাৎ। এ সময় কাছে ডেকে নেন ছোট বোন শেখ রেহানাকে। যে গ্রামে বেড়ে ওঠা, সেই পিতৃভূমিতে সোনালু গাছের ছায়ায় ছোট বোনকে নিয়ে যেন ফিরে গেলেন শৈশবের স্মৃতিময় দিনগুলোতে।
এর আগে শুক্রবার সকালে একদিনের সফরে নিজের পৈতৃক বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দিন সকাল ৮টার পর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সড়কপথে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছার পরপরই শেখ হাসিনা বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের শহীদ সদস্যদের জন্য প্রার্থনা করেন।