তৃতীয় দফার লোকসভা নির্বাচন

অশান্ত মুর্শিদাবাদ, হাতাহাতিতে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত

প্রকাশ | ০৮ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পশ্চিমবঙ্গের চার কেন্দ্রসহ ভারতের লোকসভার ৯৩ আসনে তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গলবার। এই পর্বে ভোট হয়েছে গুজরাট, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, উত্তর প্রদেশ, আসাম, গোয়া, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার রাজ্য এবং দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাদরা-নগর হাভেলি ও দমন-দিউয়ে। প্রথম দফার ভোটে মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা তেমন দেখা যায়নি। দ্বিতীয় দফার ভোটের হার তেমন বাড়েনি। তবে তৃতীয় দফার নির্বাচনে ভোটের হার বাড়ার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনাও বেড়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে স্থগিত হয়েছে ভোটগ্রহণ। মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের চার আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৬.৪৯ শতাংশ ভোট পড়েছে মুর্শিদাবাদে। আর চার কেন্দ্রের ভোটের গড় ৭৩.৯৩ শতাংশ। এদিকে মালদহ উত্তরে ভোট পড়েছে ৭৩.৩০ শতাংশ, মালদহ দক্ষিণে ৭৩.৬৮ শতাংশ এবং জঙ্গিপুরে ৭২.১৩ শতাংশ ভোট পড়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে বিক্ষিপ্ত ঘটনায় অশান্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ। সূত্র:আনন্দবাজার। মঙ্গলবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুশির্দাবাদের পরিস্থিতি। ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই ডোমকলে কংগ্রেস সমর্থকের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। কয়েকটি বুথে শাসকদলের কর্মীদের বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেস এজেন্ট এবং ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। \হমুর্শিদাবাদের কোনো কোনো বুথে রাজ্য পুলিশের উপস্থিতির অভিযোগও তোলা হয়। তবে বেলা বাড়তেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসে। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয় জঙ্গিপুর এবং মালদহের দুই কেন্দ্রে। চার কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি বুথে বাম-কংগ্রেস প্রার্থীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে। মালদহ দক্ষিণে আক্রান্ত হন খোদ শাসকদলের কর্মীরা। তবে বেলা বাড়তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। চার কেন্দ্র মিলিয়ে একাধিক ভুয়া ভোটার চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করেছে রাজ্য পুলিশ। আর বিকাল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাছে মোট ৪৩৩টি অভিযোগ জমা পড়েছে। দলগত অভিযোগ জমা পড়ে ২৫৩টি। যার মধ্যে সিপিএমের অভিযোগ সব থেকে বেশি, ১৬৩টি। মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রও ভোট শুরুর পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই লোকসভার অধীনে ইংরেজবাজার পুর এলাকায় বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। আঙ্গুল উঁচিয়ে তেড়ে যেতে দেখা যায় শ্রীরূপাকে। পাল্টা স্স্নোগান দিতে থাকেন তৃণমূল কর্মীরা। সব মিলিয়ে সাত-সকালেই উত্তেজনা মালদহে। শ্রীরূপার অভিযোগ, তৃণমূলের প্রবীণ নেতা তথা ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবং তাঁর স্ত্রী কাকলি ভোটকেন্দ্রের সামনে জমায়েত করে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। পাল্টা কৃষ্ণেন্দুর অভিযোগ, বিজেপি প্রার্থী নিজেই রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে নিজেকে ভোট দেওয়ার আবেদন করছেন। ওই বুথ ছাড়াও একাধিক বুথে গিয়ে তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন শ্রীরূপা। মঙ্গলবার দুপুরে মালদহ দক্ষিণে আক্রান্তও হয়েছেন শাসকদলের কর্মীরা। এমনটাই দাবি তৃণমূলের। সুজাপুরে একটি বুথ থেকে বার করে তৃণমূল এজেন্ট-সহ তিন তৃণমূল কর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে বাঁশ দিয়ে মারধর করা হয় তাদের। আহতদের মালদহ মেডিকেল কলেজের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জঙ্গিপুর কেন্দ্রে তৃণমূল নেতার সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন খোদ বিজেপি প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষ। অজগরপাড়া ৮৮ নম্বর বুথে ঘটনাটি ঘটে। ওই বুথে ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন রঘুনাথগঞ্জ ১ তৃণমূলের বস্নক সভাপতি গৌতম ঘোষ। এর পরেই দু'জনের মধ্যে বচসা শুরু হয়। প্রকাশ্যেই তৃণমূল নেতা গৌতমকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে। অন্য দিকে, পদ্মশিবিরের অভিযোগ, বিজেপি প্রার্থীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন গৌতম। পরে তার উপর চড়াও হন। এলোপাথাড়িভাবে মারধরের চেষ্টাও নাকি করেন। এই ঘটনায় পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল এবং বিজেপি। মালদহ উত্তর কেন্দ্র মোটের উপর শান্ত থাকলেও অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে চাঁচলে। বোমা মারার হুমকি দিয়ে বিজেপির সহায়তা ক্যাম্প তুলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধুমসাডাঙি ২২১ নম্বর বুথে বিজেপির ক্যাম্প তুলে দেওয়ার হুমকি দেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাবু সরকার। বিজেপিকর্মী শঙ্কর দাসের অভিযোগ, বুথ থেকে এক কিলোমিটার দূরে বটগাছের তলায় ক্যাম্প করেছিলেন তারা। তখনই বাবু সদলবলে এসে বোমা মারার হুমকি দেন বলে অভিযোগ। তবে সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি তৃণমূল নেতা বাবুর। এ ছাড়াও কয়েকটি বুথে বিক্ষিপ্ত গোলমালের অভিযোগ উঠলেও পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।