শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

মানুষের হাত-পা কেটে নিজেই 'অস্ত্রোপচার' করতেন মিল্টন

সাংবাদিকদের ডিবির হারুন
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৬ মে ২০২৪, ০০:০০
মানুষের হাত-পা কেটে নিজেই 'অস্ত্রোপচার' করতেন মিল্টন

প্রতারণা ও নানা অনিয়মে গ্রেপ্তার 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার' আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদে ভয়ংকর ও লোমহর্ষক কাহিনী উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। পাশাপাশি মিল্টনের প্রতারণার বিষয়ে স্ত্রী মিঠু হালদার সব জানতেন বলেও জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে।

রোববার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা জানান।

অপারেশন থিয়েটারে কয়েকটা ছুরি ও বেস্নড পাওয়া গেছে জানিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, 'মিল্টন নিজেই অপারেশন করতেন। বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে যাদের শরীরের কোনো অংশ পচে যেত মিল্টন অংশগুলো ছুরি ও বেস্নড দিয়ে কেটে ফেলতেন। এমন বেশ কয়েকজন বৃদ্ধের তিনি হাত, পা ও আঙুল কেটে ফেলেছেন। সে সময় তাদের কান্না, যন্ত্রণা ও রক্ত দেখে মিল্টন পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতেন। তিনি কখনোই অসুস্থদের কোনো হাসপাতালে নিতেন না।'

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, 'মিল্টনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনো ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা রয়েছে। তিনি মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আশ্রমের মানুষকে কবর এবং বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসহায় মানুষকে আশ্রয়ের কথা বলে টাকা সংগ্রহ করতেন। কবর দেওয়ার সংখ্যা যত বেশি টাকা সংগ্রহ তত বেশি হতো। ৯০০ প্রাণ নিভে যাওয়া প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মিল্টন জানান, মিথ্যা এসব বলে মানুষের সহানুভূতি নিয়ে টাকা সংগ্রহ করতেন। তিনি নাকি ১০০ জন মানুষকে কবর দিয়েছেন। তবে ১০০

কবরের তথ্য জানতে চাইলেও সেটা ডিবিকে সঠিকভাবে প্রমাণ করতে পারেননি মিল্টন।'

ডিবিপ্রধান আরও বলেন, 'মিল্টন সমাদ্দার একজন মাদকাসক্ত ও সাইকোপ্যাথ মানুষ। মিল্টন টর্চারসেলে মানুষজনকে পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন। তিনি কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।'

ফের ৪ দিনের রিমান্ডে

এদিকে, রাজধানীর মিরপুর থানায় দায়ের করা মানব পাচার আইনের এক মামলায় মিল্টন সমাদ্দারকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শান্তা আক্তারের আদালত এই আদেশ দেন।

এর আগে মৃতু্যসনদ জালিয়াতির অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তিনদিনের রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারকে আদালতে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর জোনাল টিমের সাব-ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ কামাল হোসেন। এরপর তাকে মানব পাচার আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোসহ ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শিকদার মাইতুল আলম।

প্রথমে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মিরপুর মডেল থানার (মানব পাচার) আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত ২ মে আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ১ মে রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরপর তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সব জেনেও পুলিশকে কিছু

জানাননি মিল্টনের স্ত্রী

এদিকে, 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার' আশ্রমের চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী মিঠু হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ রোববার সাংবাদিকদের বলেন, 'মিঠু হালদার সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও দায় এড়াতে পারেন না।'

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, 'আমরা মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মিল্টনের অপরাধ কার্যক্রম সম্পর্কে আজ (রোববার) তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি তিনি। মিডিয়াকেও কিছু জানাননি।'

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার সঙ্গে মিঠু হালদারের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে হারুন বলেন, 'দিনের পর দিন বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ, তথাকথিত মানবসেবার নামে টাকা আত্মসাৎ, রোগী দেখিয়ে টাকা আয় করেছেন মিল্টন। রোগীদের কাছে তো মিঠু হালদার যেতেন। তিনি নিজেও নার্স। স্বামীর অনিয়ম-অপকর্ম জেনেও থানা-পুলিশ বা কাউকে অবগত করেননি, প্রতিবাদ করেননি। স্বামীর অপকর্মের দায় তাই স্ত্রী হিসেবে তিনি এড়াতে পারেন না।'

ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, 'মিঠু হালদার দাবি করেছেন, ফাউন্ডেশনের নামে যেসব টাকা-পয়সা এসেছে, অ্যাকাউন্ট বা কোনোকিছুতে তার নাম নাই।'

মিঠু হালদার গ্রেপ্তার হবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের তদন্ত চলছে, আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করব।'

জানা যায়, ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে প্রতারণার নানা অভিযোগ উঠে আসে। এতে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। এই অর্থের অপব্যবহার করেন তিনি। এ ছাড়া মৃতু্যসনদ জাল করা, মানব পাচার, শিশু ও বৃদ্ধদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করার অভিযোগেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে পুলিশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে