বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন তিন চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ | ০৬ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রোববার গুলশানের একটি হোটেলে সিপিডি আয়োজিত 'নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা' শীর্ষক সংলাপে বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য -ফোকাস বাংলা
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ আছে। এগুলো হলো- অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, ঝুঁকিপূর্ণ ক্রমবর্ধমান দায়দেনা পরিস্থিতি এবং শ্লথ অর্থনীতি। এই তিন চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। অন্যদিকে বাজেট বাস্তবায়নে দুর্নীতি বন্ধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সরকারি অর্থের অপচয় কমানোর কথা বলেছে সংস্থাটি। রোববার গুলশানের একটি হোটেলে সিপিডির উদ্যোগে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক পস্ন্যাটফর্ম, বাংলাদেশের সহযোগিতায় 'নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা' শীর্ষক একটি নীতি সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা। সংলাপটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় চলমান জনসম্পৃক্ত সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক পস্ন্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এবং সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, নাগরিক পস্নাটফর্মের কোর সদস্য ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, খুবই জটিল রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বিরাজমান। ভূরাজনৈকি পরিস্থিতিও জটিল। বাজেটকে সামনে রেখে আমরা সামাজিক ও সরেজমিন মতামত নিয়েছি। অর্থনীতিতে সমস্যার ত্রিযোগ ঘটেছে। যার মধ্যে বড় সমস্যা হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। অর্থনীতিতে এখনো অতিমাত্রায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে চলেছে। এটা গ্রাম কিংবা শহর এবং খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের জন্য সত্য। সেহেতু প্রথম সমস্যা হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত \হমূল্যস্ফীতি, যা মানুষের জীবনমানকে আঘাত করছে। দ্বিতীয়ত ঋণের পরিস্থিতি। সরকার বিদেশি উৎস থেকে যে টাকা নেয়, তার চেয়ে দেশীয় উৎস থেকে দ্বিগুণ টাকা ঋণ নেয়। এটার দায়-দেনা পরিস্থিতি ভিন্ন একটা ইঙ্গিত বহন করছে। তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে প্রবৃদ্ধির যে ধারা ছিল, সেই ধারায় সস্নথকরণ হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে কর আহরণ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি এখনো ১০.১০ এর কাছাকাছি, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করছে। পিছিয়ে পড়া মানুষের ভোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর মূল্যস্ফীতি সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এসব কারণে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পৃথিবীতে যেখানে মূল্যস্ফীতি কমছে, কিন্তু সেই সুফল বাংলাদেশে দেওয়া যাচ্ছে না। জিডিপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জিডিপির ৩৭ শতাংশ সরকারি ঋণের পরিমাণ ও ব্যক্তি খাতে ঋণ ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে ৪২ শতাংশ ঋণ রয়েছে। এর ফলে বিনিময় হারের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এতদিন বলতাম বাংলাদেশ কখন বিদেশি ঋণ অনাদায়ী করেনি, কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে সরকার ঋণের টাকা দিতে পারছে না, যার পরিমাণ অন্তত ৫ শতাংশ। আর জিডিপি হার ৪ শতাংশ, কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের ওপর। সেটা অর্জন করতে বাকি সময় জিডিপি হার হতে হবে ১০ শতাংশের ওপর। যার বাস্তবায়ন অসম্ভব। কারণ বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ কমে এসেছে, অন্যদিকে ব্যক্তি খাত কিংবা বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। গবেষণার সারাংশ উলেস্নখ করে দেবপ্রিয় বলেন, মানুষ তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছে। প্রথমত, শোভন কর্মসংস্থান, দ্বিতীয়ত, মানসম্মত শিক্ষা এবং সর্বশেষ সামাজিক সুরক্ষা। চার নম্বরে এসেছে পিছিয়ে পড়া মানুষের বৈষম্য হ্রাস করে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ব্যবস্থা। বাজেট পিছিয়েপড়া মানুষের জন্য হতে হবে সংবেদনশীল, তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশ ও জলবায়ুর বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। আমার কথা বাজেট যাই হোক, তার বাস্তবায়ন যেন যথাযথ হয়। যার কাছে দুই টাকা যাওয়ার কথা, সেটা যেন তার কাছে যায়। বাজেট সম্পর্কিত সংসদের স্থায়ী কমিটি রয়েছে, তাদের যেন বৈঠক হয়। এর আগের সংসদে ওই ধরনের বৈঠক দেখা যায়নি। এ ছাড়া তিন মাস পরপর অর্থমন্ত্রীকে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। যা ইতোপূর্বে দেখা যায়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, কর ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন ঘটাতে হবে। যারা কর দিচ্ছে তাদের ওপরই কর চাপানো হচ্ছে। তারা অনেক সময় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেকে কর দিচ্ছেন না, কর ফাঁকি দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিদেশে টাকা চলে যাচ্ছে। কর কাঠামোতে প্রত্যক্ষ কর সরাসরি আয়ের ওপর কর, যা মোট করের ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে পরোক্ষ কর যেমন- ভ্যাট ও শুল্ক ৭০ শতাংশ। এখানে পরিবর্তন আনতে হবে। দুর্বলতা থাকতে পারে, সেটা স্বীকার করে পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজেটে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয় না। তিনি আরও বলেন, আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটই হবে কীভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়। ওই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে কীভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যায়; সেটা বড় বিষয়। তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে দুর্নীতি বন্ধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি অর্থের অপচয় কমাতে হবে। আর অর্থনীতি সামলাতে দরকার সুশাসন, যা আসতে পারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই।