৬ দিন ঝড়-বৃষ্টির আভাস তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে
আরও এক দিনের সতর্কবার্তা
প্রকাশ | ০৫ মে ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহের মাত্রা কিছুটা কমেছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা কমার পেছনে দুই দিনের বৃষ্টিপাত ভূমিকা রেখেছে। আগামীকাল সোমবার থেকে দেশজুড়ে ফের ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ বৃষ্টি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছয় দিন ধরে অব্যাহত থাকতে পারে। একইসঙ্গে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, কয়েকদিন ধরে সিলেটে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি সমতলে বেড়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে আরও ২৪ ঘণ্টার সতর্ক বার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে। অন্যদিকে এদিন ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শুক্রবার যা ছিল ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপপ্রবাহের মধ্যে বরিশালে ধান কাটতে গিয়ে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এক কৃষি শ্রমিকের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মলিস্নক বলেন, 'আগামীকাল সোমবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রঝড় শুরু হতে পারে।
এমনিতেই এখন কিছু
কিছু স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে তা আরও বাড়তে পারে। আর এ অবস্থা হয়তো ছয় দিন থাকতে পারে।'
পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, পাবনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাট জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চাঁদপুর, মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগ এবং খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন ৪৪টি স্টেশনের আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরে। এসব স্টেশনের মধ্যে গতকাল ১১টিতে বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কুমিলস্নায়, ৩৭ মিলিমিটার। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীতে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। তাতে শুক্রবার রাজধানীর তাপমাত্রা সামান্য কমেছিল। আবহাওয়াবিদরা মনে করেন, দেশজুড়ে বড় ধরনের বৃষ্টি না হলে এই তাপপ্রবাহ শেষ হবে না।
বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা উলেস্নখ করে আবুল কালাম মলিস্নক বলেন, 'মে মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি কালবৈশাখী হয়। এ মাসেও কয়েকটি কালবৈশাখী হতে পারে। এখন বজ্রপাতে অনেক প্রাণহানি হয়। তাই ঝড়ের সময় অবশ্যই নিরাপদ স্থানে থাকতে হবে।'
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, মে মাসে দেশের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা হলো ৩২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মে মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিই হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও এক থেকে তিনটি মৃদু ও মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এই মাসে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে।
ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর তাপমাত্রা দুই দিন ধরে কমছে। শনিবারও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কমেছে। আজও দেশের কয়েকটি স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।'
আরও এক দিনের সতর্ক বার্তা
চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে আরও ২৪ ঘণ্টার সতর্ক বার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই সতর্ক বার্তায় বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
হাফিজুর রহমান জানান, রোববারের পর থেকে তাপমাত্রা কমে আসবে। বৃষ্টি কমবেশি সারাদেশে হচ্ছে, ৭ তারিখ থেকে সারাদেশেই হবে। এবার ৩১ মার্চ থেকে দেশে তাপপ্রবাহ শুরু হয়, এ পর্যন্ত টানা ৩৫ দিন ধরে দেশে তাপপ্রবাহ চলছে।
চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় যশোরে। বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির ওপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ১১ মে পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলে বজ্রঝড়সহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে ভারতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় উজানের ঢলের আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি সমতলে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি বন্যায় রূপ নিতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে আগামী ৮ মে পর্যন্ত সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো, মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি ও আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে পাহাড়ি ঢলে সিলেট বিভাগ ও কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকা বন্যার পানিতে পস্নাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের জৈন্তাপুরের লালাখাল স্টেশনে ৭০ মিলিমিটার, জকিগঞ্জ পয়েন্টে ৬৮ মিলিমিটার, বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে ৫৪ মিলিমিটার, কানাইঘাট পয়েন্টে ৫১ ও সিলেট শহর পয়েন্টে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। একই সময়ে ভারতের আসামের শিলচরে ৬২ মিলিমিটার এবং মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ধান কাটতে গিয়ে কৃষি শ্রমিকের মৃতু্য
বরিশালের উজিরপুরে ধান কাটার সময় প্রচন্ড গরমে অসুস্থ হয়ে জামাল ফরাজী (২৬) নামে এক শ্রমিকের মৃতু্য হয়েছে। শনিবার সকালের দিকে উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নের নরসিংহা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জামাল বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার ফুলতলা এলাকার সৈয়দ ফরাজীর ছেলে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৭টার দিকে উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নের নরসিংহা এলাকায় মোখলেস খানের জমিতে বোরো ধান কাটার জন্য যান জামাল ফরাজীসহ অন্য শ্রমিকরা। প্রচন্ড গরমের মধ্যে জামাল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে জমির মালিক মোকলেসসহ স্থানীয়রা জামালকে উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক জামালকে মৃত ঘোষণা করেন।
উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাফর আহমেদ জানান, শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি শুনে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। নিহত ব্যক্তির মরদেহ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।