যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ২২০০ বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ০৪ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে সহিংস পন্থার আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে পুলিশের 'দুর্ঘটনাবশত' গুলি ছোড়ার ঘটনাও। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ বৃহস্পতিবার বলেছে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিলটন হলে গুলি ছোড়ার ঘটনায় কেউ আহত হননি। এক পুলিশ সদস্য তার বন্দুকের সঙ্গে লাগানো ফ্লাশলাইট জ্বালানোর চেষ্টা করছিলেন। তখন একটি গুলি বেরিয়ে হলের দেয়ালে লাগে। তবে ঘটনাটি পর্যালোচনা করে দেখছে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির দপ্তর। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১৮ এপ্রিলের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে অন্তত অর্ধশত গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে। তাদের মধ্যে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় শুধু কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসে (ইউসিএলএ) অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় তাদের ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধ জানালে তা অমান্য করেন বিক্ষোভকারীরা। তখন অন্তত ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইউসিএলএর মতো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরাও তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের প্রতি ইসরাইলের সঙ্গে বা গাজা যুদ্ধকে সমর্থনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইসরাইলি 'গণহত্যা থেকে বিচ্ছিন্ন' থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শিক্ষার্থীদের এমন ব্যাপক বিক্ষোভ এ শতকে আর দেখা যায়নি। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ইউসিএলএ ক্যাম্পাসে পুলিশের অভিযানের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করেছে; যেমনটা করেছে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরা। ইসরাইলের বিভিন্ন টেলিভিশন নেটওয়ার্কও লস অ্যাঞ্জেলেসে চালানো অভিযানের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে। ইসরাইল এ ছাত্র বিক্ষোভকে ইহুদিবিদ্বেষ বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে ইসরাইলের সমালোচকরা বলছেন, বিরোধীদের কণ্ঠরুদ্ধ করতেই দেশটির এমন অভিযোগ। চলমান বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় গত ১৭ এপ্রিল। তারা গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের অবসান দাবি করছেন। ফিলিস্তিনের উপত্যকাটিতে গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি বাহিনীর নারকীয় অভিযানে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায়ও বিক্ষোভ এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ক ছিন্নের দাবি জানিয়েছেন। কানাডার মন্ট্রিলের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অব অটোয়াতে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের প্রতিবাদে শত শত মানুষ শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটিতে সমাবেশ করেছে। ফিলিস্তিনিপন্থি কর্মীরা গত সপ্তাহে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হলের বাইরে একটি ছাউনি স্থাপন করেছিল। মেলবোর্ন ও ক্যানবেরাসহ অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুরূপ শিবির গড়ে উঠেছে। শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা ইউনিভার্সিটি অব সিডনিকে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার দাবিতে সমাবেশ করেছে।